রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর উর্জিত পটেল।
গতকালই মুখ খুলেছিলেন পূর্বসূরি রঘুরাম রাজন। তার চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে বুধবার নীরব মোদী কাণ্ড নিয়ে অবশেষে নীরবতা ভাঙলেন রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর উর্জিত পটেলও। বললেন, ‘‘ব্যাঙ্কিং ক্ষেত্রকে বারবার অনিয়ম ও প্রতারণার নিশানা হতে দেখে শীর্ষ ব্যাঙ্ক হিসেবে আমরা আঘাত পাই। রাগ হয়। যন্ত্রণা বোধ করি।’’ একই সঙ্গে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের নিয়ন্ত্রণ যে কেন্দ্রের হাতে, তাদের উপর নজরদারির নিরঙ্কুশ ক্ষমতা যে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কাছে নেই, তা-ও স্পষ্ট করে দিয়েছেন তিনি। তবে তাঁর শপথ, যে কোনও মূল্যে এই ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা আনতে চায় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। তার জন্য প্রয়োজনে বিষ পান করে নীলকণ্ঠ হতেও রাজি তাঁরা।
পিএনবি কেলেঙ্কারি সামনে আসার পরে অডিটরদের পাশাপাশি রিজার্ভ ব্যাঙ্কের দিকেও কার্যত আঙুল তুলেছিলেন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। অনেকেই বলছেন, এ দিন তার জবাব দিলেন উর্জিত। তিনি বরং এক ধাপ এগিয়ে বলেছেন, সাধারণ মানুষের টাকা এ ভাবে বেরিয়ে যেতে দেওয়া কী ভাবে আটকানো যায়, তা ভাবার সময় এসেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এর মাধ্যমে আসলে ব্যাঙ্ক বেসরকারিকরণের পক্ষেও সওয়াল করেছেন শীর্ষ ব্যাঙ্ক গভর্নর।
পিএনবি কেলেঙ্কারি নিয়ে মোদী সরকার রিজার্ভ ব্যাঙ্কের দিকে আঙুল তোলায় গত কাল জবাব দিয়েছেন প্রাক্তন গভর্নর রাজনও। সোনার ৮০:২০ প্রকল্পই চোক্সীদের প্রতারণার দরজা খুলে দিয়েছে বলে প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরমের দিকে আঙুল তুলেছে কেন্দ্র। সেই অভিযোগ উড়িয়ে মঙ্গলবারই রাজনের দাবি ছিল, দু’টি ঘটনাকে এক করে দেখা ঠিক নয়। ২০১৩ সালে বিপুল সোনা আমদানির জেরে চলতি খাতে বিদেশি মুদ্রা লেনদেন ঘাটতি মাত্রা ছাড়ায়। সেই জন্যই ৮০:২০ প্রকল্প আনা। যেখানে সাময়িক ভাবে প্রতি ১০০ গ্রাম সোনা আমদানি করে ২০ গ্রাম রফতানির নিয়ম বাঁধা হয়েছিল।
একই সঙ্গে এই কেলেঙ্কারি নিয়ে রাজনের বক্তব্য ছিল, কোথায় নজরদারিতে ফাঁক থাকছে, তা সবার আগে খুঁজে বার করা প্রয়োজন। দরকার রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের পরিচালন ব্যবস্থা ঢেলে সাজা। সেখানে আরও বেশি করে দক্ষ ও পেশাদার কর্তাদের নিয়ে আসা। অনেকটা যেন সেই সূত্র ধরেই এ দিন রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে মুখ খুলেছেন উর্জিত।
যে ভাবে এ দিন তিনি ওই নিয়ন্ত্রণ রিজার্ভ ব্যাঙ্কের হাতে না থাকার কথা বলেছেন, সেখানেই জেটলির জবাব খুঁজে পেয়েছেন অনেকে। আবার আর এক মহলের মত, আসলে কেন্দ্র শীর্ষ ব্যাঙ্কের কোর্টে বল ঠেলে দেওয়ায়, তাঁদের উপরে চাপ তৈরি হয়েছিল। তা বেড়েছে রাজন মুখ খোলায়। ফলে উর্জিতের পক্ষেও জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছিল নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করা। এই মহল মনে করছে, সে দিক থেকে দেখলে দায় ঝেড়ে ফেলেছেন তিনি। যদিও কিছুটা চরিত্র বিরোধী ভাবেই এ দিন আবেগ মিশিয়ে উর্জিত বলেছেন, গোটা ব্যবস্থা পরিষ্কার করতে নীলকন্ঠ হতে তৈরি তাঁরা। গালিগালাজ শুনতেও আপত্তি নেই। কিন্তু নিয়ন্ত্রণ ও নজরদারিতে আরও দক্ষ হওয়ার চেষ্টায় খামতি রাখবেন না। তাঁর দাবি, এ ধরনের ঘটনা আটকাতে সব কিছুই করছে শীর্ষ ব্যাঙ্ক।
এ দিকে, নীরব মোদী ও মেহুল চোক্সীকে দেশে ফেরাতে ইন্টারপোলের দ্বারস্থ হয়েছে ইডি। যাতে রেড কর্নার নোটিস জারি হয় তাঁদের বিরুদ্ধে। ফ্রান্সের লিওঁয় ইন্টারপোলের সদর দফতরে সিবিআইয়ের মাধ্যমে সেই আর্জি জানানো হয়েছে। তবে এই প্রতারণা নিয়ে দেশে হইচইয়ের মধ্যেই সিঙ্গাপুরে ভারতীয় পর্যটক ও ভারতীয় বংশোদ্ভূতদের কাছে দর্শনীয় স্থান হয়ে উঠেছে মোদীর বিপণি। এমনকী বাদ যাচ্ছে না ছবি তোলাও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy