Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

আপনাদের প্রশ্ন

এসআইপি পদ্ধতিতে শেয়ার বাজার নির্ভর ফান্ড বা ইকুইটি ফান্ডে (ফ্র্যাঙ্কলিন টেম্পলটন) এবং ব্যালান্সড ফান্ডে (এইচডিএফসি) লগ্নি করেছেন। কর সাশ্রয়কারী ফান্ডেও (অ্যাক্সিস) কিছু টাকা ঢেলেছেন। তিনটি ফান্ডেরই পারফর্ম্যান্স ভাল।

শেষ আপডেট: ০৫ মে ২০১৬ ০৩:৪৯
Share: Save:

বয়স ৩৩ বছর। বেসরকারি সংস্থায় অল্প বেতনের চাকরি করি। পরিবারের দায়িত্ব নিতে হয়। বিয়ে করিনি। ভাড়া বাড়িতে থাকি। এই পরিস্থিতিতে আমি তিনটি এসআইপি-তে লগ্নি করেছি ১০ বছরের জন্য। এইচডিএফসি ব্যালান্সড ফান্ড, ফ্র্যাঙ্কলিন ইন্ডিয়া হাই গ্রোথ কোম্পানিজ ফান্ড ও অ্যাক্সিস লং টার্ম ইকুইটি ফান্ড। জানতে চাই—

১) লগ্নির ক্ষেত্রে আমার সিদ্ধান্ত কি ঠিক? সঠিক ফান্ড বেছেছি কি? এগুলির ভবিষ্যৎ কেমন?

২) কোনও মিউচুয়াল ফান্ড ভাল কি না, তা কী করে বুঝব?

৩) এসআইপি মারফত ফান্ডে লগ্নি করা কি সত্যিই ভাল? বুঝতে পারছি না। কারণ, গত পাঁচ মাসে আমি যে টাকা ঢেলেছি, তার মোট পরিমাণ বর্তমানে ফান্ড ইউনিটের ন্যাভের তুলনায় অনেক বেশি। অর্থাৎ এই মুহূর্তে আমি লোকসানে চলছি। ব্যাঙ্কে কোনও রেকারিং নেই। লগ্নি বলতে শুধুই এসআইপি।

শুভাশিস জানা, বেহালা

আপনি এসআইপি পদ্ধতিতে শেয়ার বাজার নির্ভর ফান্ড বা ইকুইটি ফান্ডে (ফ্র্যাঙ্কলিন টেম্পলটন) এবং ব্যালান্সড ফান্ডে (এইচডিএফসি) লগ্নি করেছেন। কর সাশ্রয়কারী ফান্ডেও (অ্যাক্সিস) কিছু টাকা ঢেলেছেন। তিনটি ফান্ডেরই পারফর্ম্যান্স ভাল। সুতরাং আপনার লগ্নির সিদ্ধান্তে ভুল নেই। বরং সঞ্চয়ের শুরুটা ভালই হয়েছে। কারণ, সাধ্য থাকলে অল্প বয়সে ইকুইটি ফান্ডে লগ্নির অল্পবিস্তর ঝুঁকি সকলেরই নেওয়া উচিত। বিশেষ করে আপনার এসআইপিগুলি দীর্ঘ মেয়াদি (১০ বছর) হওয়ায়, লগ্নি চালিয়ে গেলে পরে উপকৃত হবেন। কোনও কারণে যাতে মাঝপথে এসআইপির টাকা জমা দেওয়া বন্ধ করতে না-হয়, সেটা খেয়াল রাখবেন।

তবে সঞ্চয় সব সময়ই সামঞ্জস্য -পূর্ণ হওয়া উচিত। একটু ঝুঁকি নিয়ে শেয়ার নির্ভর ফান্ডে যেমন টাকা ঢালা উচিত, তেমনই আবার কম ঝুঁকির ডেট বা ঋণপত্র ভিত্তিক ফান্ডের ইউনিট কেনাও জরুরি। আপনি সামান্য হলেও সেটা করেছেন। ব্যালান্সড ফান্ডের একটা অংশ ঋণপত্রে খাটে। তবুও শেয়ার বা এসআইপি-তে বেশি লগ্নির জন্য রেকারিং, পিপিএফ, ব্যাঙ্ক জমার মতো নিরাপদ ও সুরক্ষিত সঞ্চয়গুলিকে অবহেলা না-করাই ভাল।

প্রত্যেক মাসে ফান্ডের ফ্যাক্টশিট দেখা অভ্যাস করুন। ফান্ড ম্যানেজার কোথায় ফান্ডের কত টাকা লগ্নি করে তহবিল বাড়ানোর চেষ্টা করছেন, সেটা ওই ফ্যাক্টশিটে জানায় ফান্ড সংস্থা। পাশাপাশি ফান্ডের বিভিন্ন খরচ, তহবিলের আকার, পারফর্ম্যান্স-সহ সব কিছুই বিশদে লেখা থাকে। ফ্যাক্টশিটটি মন দিয়ে দেখে ফান্ডের পারফর্ম্যান্স বা অন্য সব খুঁটিনাটি বোঝার চেষ্টা করুন। এতে লগ্নিকারী হিসেবে আপনার চোখ-কান খুলবে। ফান্ড কতটা কী ভাল করছে, সে সম্পর্কেও ধারণা তৈরি হবে।

তবে এখনই ফান্ড কতটা ভাল করছে, তা বিচার করতে বসবেন না। লগ্নি তো সবে শুরু করেছেন। মাত্র পাঁচ মাস হয়েছে। একটা ফান্ড ভাল এগোচ্ছে না খারাপ, সেটা বোঝার জন্য এই সময়টা খুবই কম। ফান্ড ভাল পারফর্ম করছে কি না বা করার সম্ভাবনা আছে কি না, তা বুঝতে হলে আরও কিছু দিন অপেক্ষা করতে হবে। অন্তত বছর খানেক। তারপর কিছুটা স্পষ্ট হতে পারে ছবিটা।

শেয়ার বা ফান্ডে ভাল রিটার্ন পেতে দীর্ঘ সময় ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করতে হয়। আপনিও তো ১০ বছরের জন্য লগ্নি করেছেন। সুতরাং তাড়াহুড়ো করে সিদ্ধান্তে না পৌঁছনোই ভাল। ফান্ড ম্যানেজারদের ভাল কাজ করতে একটু সময় দিন। তবে অনেকটা সময় কেটে যাওয়ার পরেও যদি দেখেন ন্যাভ স্তিমিতই রয়েছে, তা হলে একটু ভাবতে হবে।

ব্যবসা করি। নিজের বাড়ি আছে। মা, বাবা, স্ত্রীয়ের সঙ্গে থাকি। আইসিআইসিআই ফোকাস্‌ড ব্লু-চিপ, আইসিআইসিআই ডিসকভারি, বিড়লা ফ্রন্টলাইন ইকুইটি, এইচডিএফসি মিডক্যাপ, ফ্র্যাঙ্কলিন হাই গ্রোথ কোম্পানি, এসবিআই ব্লু-চিপের মতো মিউচুয়াল ফান্ডে এসআইপি-র মাধ্যমে ১৫ হাজার টাকা লগ্নি করেছি।

ভারতী অ্যাক্সা ফ্লেক্সি-তে মাসে ৫,০০০ টাকা (৫ বছরের জন্য), আইসিআইসিআই প্রু লাইফ স্টেজ ওয়েলথ ইউলিপে ২,০০০, আইসিআইসিআই গ্যারান্টিড সেভিংস এনডাওমেন্ট প্ল্যানে ২,০০০ (৭ বছরের জন্য), এলআইসি এনডাওমেন্ট প্ল্যানে ৯,০০০ টাকা ঢালছি। ডাকঘরে মাসে ৩,০০০ টাকার রেকারিং ডিপোজিট ও ৫,০০০ টাকার এনএসসি রয়েছে।

আমার বিনিয়োগ পরিকল্পনা কি ভাল বলা যায়?

অভিজিৎ চক্রবর্তী,
দক্ষিণ বিষ্ণুপুর

বিভিন্ন ধরনের লগ্নি প্রকল্পে তহবিল ছড়িয়ে-ছিটিয়ে দিয়েছেন। এই কৌশল ভালই লাগল। তবে লগ্নির ঝুড়িটাকে আরও নিখুঁত করার পরামর্শ দেব। মানে, কোনও ক্ষেত্রে প্রয়োজনের বেশি হয়ে যাওয়া লগ্নি কিছুটা ছাঁটাই করা। আবার কোথাও আরও একটু বেশি পুঁজি ঢালা। কোনও কিছু বাদ পড়ে থাকলে, সেটা লগ্নির ঝুড়িতে ঢোকানো, এই সব।

বিনিয়োগ করার মূল জায়গাগুলি হল— (১) ডেট বা ঋণপত্র (২) ইকুইটি বা শেয়ার (৩) কমোডিটি বা পণ্য (৪) রিয়েল এস্টেট বা আবাসন। ঝুঁকিবিহীন সঞ্চয়ের জায়গা হিসেবে রয়েছে পিপিএফ, পিএফ, ফিক্সড ডিপোজিট ইত্যাদিও। পাশাপাশি, সুরক্ষার হাতিয়ার হিসেবে লগ্নি করতে হয় জীবনবিমা, দুর্ঘটনা বিমা, স্বাস্থ্যবিমা ইত্যাদিতেও। ঝুঁকি বইবার ক্ষমতা এবং বয়স অনুযায়ী বিভিন্ন ধরনের লগ্নি-প্রকল্পকে খুব সামঞ্জস্যপূর্ণ ভাবে রাখতে হয় সঞ্চয়ের ঝুড়িতে। অর্থাৎ কোনও খাতে অনেক বেশি ঢেলে ফেলেছেন, আর কোনও খাতে পুঁজি খুব কম বা প্রায় নেই, সেটা যেন না-হয়। কারণ, লগ্নির মূলমন্ত্রই হল— সাধ্য, প্রয়োজন, সুরক্ষা, লক্ষ্য ও ঝুঁকি নেওয়ার ক্ষমতা অনুযায়ী রোজগারের টাকা বাড়ানোর পথ যেমন তৈরি করতে হবে, তেমনই দেখতে হবে, তা করতে গিয়ে সামান্য অর্থও যেন অপচয় না-হয়। সেই সঙ্গে মূল্যবৃদ্ধির দানবকে পরাস্ত করার ব্যবস্থাও থাকতে হবে। এ ছাড়া, মৃত্যু, অসুখ, দুর্ঘটনা ইত্যাদি কারণে তৈরি হওয়া অনিশ্চয়তা থেকে পরিবারের সদস্যদের রক্ষা করাও জরুরি।

কাজেই লগ্নির ঝুড়িকে আরও সামঞ্জস্যপূর্ণ করে তুলতে এবং সঞ্চয় ও সুরক্ষার লক্ষ্য পূরণে আপনি কোনও পেশাদার উপদেষ্টার কাছ থেকে পরামর্শ নিতে পারেন।

পরামর্শদাতা: নীলাঞ্জন দে এবং শৈবাল বিশ্বাস
(মতামত ব্যক্তিগত)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

question answar bishoy-ashy
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE