Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

অধিকারের লড়াই

দু’টো মানুষের সম্পর্কের মধ্যে পাঁচিল উঠলেও, কিছু আর্থিক দায়িত্ব অস্বীকার করা যায় না। আর্থিক ভাবে তুলনায় দুর্বল যিনি, তাঁকে শর্তসাপেক্ষে তা বুঝে নেওয়ার অধিকার দিয়েছে আইনই। লিখছেন জয়ন্ত নারায়ণ চট্টোপাধ্যায়দুর্গা পুজোর রেশ কাটেনি এখনও। অপেক্ষা শুরু হয়েছে দীপাবলির। কিন্তু উৎসবের এই রোশনাইয়ের মধ্যেও খুব স্পষ্ট কিছু মুখ। যাঁদের বেঁচে থাকার লড়াই নিরন্তর। কেউ স্বামীর ঘর ছেড়ে সহায়-সম্বলহীন।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

শেষ আপডেট: ০৫ অক্টোবর ২০১৭ ০২:৪৯
Share: Save:

দুর্গা পুজোর রেশ কাটেনি এখনও। অপেক্ষা শুরু হয়েছে দীপাবলির। কিন্তু উৎসবের এই রোশনাইয়ের মধ্যেও খুব স্পষ্ট কিছু মুখ। যাঁদের বেঁচে থাকার লড়াই নিরন্তর। কেউ স্বামীর ঘর ছেড়ে সহায়-সম্বলহীন। কেউ হারিয়েছেন মা-বাবার নিশ্চিন্ত আশ্রয়। কাউকে আবার বুড়ো বয়সে একা করেছে তাঁর সযত্নে লালিত ছেলে-মেয়েরাই। তাই আনন্দের আবহেও আজকের এই রূঢ় বাস্তবের প্রতিবেদন। এটা বোঝাতে যে, প্রিয় মানুষ মুখ ফেরালেও, তাঁরা ঝেড়ে ফেলতে পারেন না দায়িত্ব। অন্তত আইন তা হতে দিতে চায় না। ভরণপোষণ বা খোরপোশের অস্ত্র হাতে নিয়ে নিজের অধিকারটুকু অন্তত বুঝে নিতে পারেন তাঁরা।

বাঁচার অধিকার

মর্যাদার সঙ্গে বেঁচে থাকার অধিকার তৈরি হয় জন্মানোর মুহূর্তেই। জীবনের নানা পর্যায়ে তা প্রতিষ্ঠা পায় বিভিন্ন সম্পর্কের হাত ধরে। থাকা, খাওয়া, পরার মতো নানা প্রয়োজন সব সময়ে তো সকলের একার পক্ষে মেটানো সম্ভব নয়। তাই সন্তান নির্ভর করে বাবা-মায়ের উপর, স্ত্রী অনেক সময়ে স্বামী বা শ্বশুরবাড়ির উপর, বয়স্ক বাবা-মা স্বাবলম্বী সন্তান বা সন্তান স্থানীয় কারও উপর। কিন্তু সব দায়িত্ব সবাই যে সব সময়ে পালন করেন, তা নয়। তখনই ডাক পড়ে আইনের। অভিযুক্তকে দায়িত্ব পালনে বাধ্য করতে সে খুলে বসে ভরণপোষণ বা খোরপোশের সংজ্ঞায় বেঁধে দেওয়া নিয়ম-নীতির খাতা। আজ এই আইনেরই খুঁটিনাটি জানব একে একে।

খোরাক-পোশাক

বাবা-মা সন্তানের কাছ থেকে, স্ত্রী স্বামীর থেকে, নাবালক ছেলে ও অবিবাহিতা মেয়ে বাবার কাছ থেকে, বিধবা পুত্রবধূ শ্বশুরমশাইয়ের কাছ থেকে খোরপোশ পেতে পারেন। তবে তা পাওয়ার আবেদন আইন মেনে হতে হবে। দাবি কতটা ঠিক, তা খুঁটিয়ে বিচার করে সিদ্ধান্ত নেবে আদালত। যেখানে দেখা হবে, দু’টো মানুষের মধ্যে একজন আর একজনের উপর কতখানি নির্ভরশীল। কারণ, আইন বলছে— সবল বা আর্থিক দিক থেকে সক্ষম যাঁরা, তাঁরা দুর্বল বা আর্থিক দিক থেকে পিছিয়ে থাকা মানুষটিকে খোরাক-পোশাক (খোরপোশ) দেবেন। তাই বিচ্ছেদ হলেও, ফের বিয়ে না-করা পর্যন্ত খোরপোশ পেতে পারেন স্ত্রী। সন্তান সাবালক না-হওয়া পর্যন্ত তার আর্থিক দায়িত্ব বর্তায় বাবার উপর। বুড়ো বাবা-মাকে দেখাশোনার ভার নিতে হয় সন্তানকে।

আইনের খতিয়ান

হিন্দু, মুসলমান, পার্সি-সহ প্রত্যেক সম্প্রদায়ের নিজস্ব দেওয়ানি আইন আছে, যাকে বলে ‘পার্সোনাল ল’ বা ‘ফ্যামিলি ল’। সেগুলি মূলত ধর্মীয় নিয়ম-নীতি, প্রথা বা পরম্পরা অনুযায়ী নির্ধারিত। এ দেশে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালু হয়নি। তাই ব্যক্তিগত পরিবার-আইনের আওতাতেই আলাদা আলাদা নিয়মে ভিন্ন ভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষের পারিবারিক সমস্যাগুলির বিচার করে দেওয়ানি আদালত। ফলে খোরপোশের প্রশ্নেও সেই আইনই শেষ কথা। যার ভিত্তিতে আদালত সমস্যার সমাধান বাতলায়।

এই সব ব্যক্তিগত পরিবার-আইনের মধ্যে উল্লেখযোগ্য—

• হিন্দু বিবাহ আইন, ১৯৫৫

• হিন্দু উত্তরাধিকার আইন, ১৯৫৬

• বিবাহ বিচ্ছেদ আইন, ১৮৬৯

• জম্মু ও কাশ্মীর হিন্দু বিবাহ আইন, ১৯৮০

• মুসলমান মহিলাদের (বিবাহ বিচ্ছেদ সংক্রান্ত অধিকার সুরক্ষা) আইন, ১৯৮৬

• পার্সি বিবাহ ও বিবাহবিচ্ছেদ আইন, ১৯৩৬

• বিশেষ বিবাহ আইন, ১৯৫৪

• গার্হস্থ্য হিংসা থেকে মহিলাদের সুরক্ষা আইন, ২০০৫

• ফৌজদারি কার্যবিধি আইন, ১৯৭৩

• পিতামাতা ও প্রবীণ নাগরিকদের ভরণপোষণ আইন, ২০০৭

বৃদ্ধ বয়সে একা

জীবনভর সংসার, সন্তান, দায়-দায়িত্ব, কর্তব্যের জোয়াল টেনে অনেকেই শেষ বেলায় আবিষ্কার করেন যে, পায়ের তলার মাটিটা হয়ে গিয়েছে আলগা। সযত্নে লালিত ছেলে-মেয়ের কাছেই বোঝা হয়ে গিয়েছেন তাঁরা। অধিকার বুঝে নিতে তখন তাঁদের জন্য আছে পিতামাতা ও প্রবীণদের ভরণপোষণ আইন, ২০০৭।
এর মূল বিষয় হল—

• প্রবীণ নাগরিকদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা।

• এই আইন অনুযায়ী, শুধু সন্তান নয়, সন্তানস্থানীয় ব্যক্তিও প্রবীণ মানুষটির দেখাশোনা করতে ‘দায়বদ্ধ’। যদি তিনি প্রবীণ ব্যক্তিটির সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হন।

• এ জন্য দীর্ঘ মামলা লড়তে হয় না।

• এসডিও-র কাছে সমস্যার কথা জানিয়ে আবেদনপত্র জমা দিতে হয়।

• সন্তান মা-বাবার ভরণপোষণের দায়িত্ব নিতে অস্বীকার করলে, ফৌজদারি কার্যবিধি আইনের ১২৫ নম্বর ধারাতেও অভিযোগ করা যায়।

মাথায় রাখুন


খোরপোশ বা ভরণপোষণ দাবি করতে পারেন—

• হিন্দু অ্যাডপশন ও মেনটেনেন্স ১৯৫৬ আইনের আওতায় ১৯ নম্বর ধারা অনুযায়ী, অপরিণত বয়স্ক সন্তানরা তাঁদের বাবা-মায়ের কাছে।
• হিন্দু অ্যাডপশন ও মেনটেনেন্স ১৯৫৬ আইনের আওতায় ওই ১৯ নম্বর ধারা অনুযায়ীই, রোজগারহীন বাবা-মা তাঁদের সন্তানদের কাছে।
• শর্তসাপেক্ষে মুসলিম মহিলারা ১২৫ নম্বর ধারার অধীনে এবং মুসলিম মহিলা (প্রোটেকশন অব রাইটস অন ডিভোর্স) ১৯৮৬ আইন অনুযায়ী।
• ফৌজদারি কার্যবিধির ১২৫ নম্বর ধারা অনুযায়ী (এই মামলা নির্দিষ্ট এলাকার বা জুরিসডিকশনের ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে দাখিল করতে হবে) স্বামীর সঙ্গে মামলা চলাকালীন স্ত্রী।
• বিবাহ বিচ্ছেদ মামলা যে আইনে দায়ের করা হয়েছে (যেমন, হিন্দু বিবাহ আইন অথবা বিশেষ বিবাহ আইন), তার অধীনে।
• হিন্দু বিবাহ আইনের ২৪ নম্বর ধারায় একজন বেকার স্ত্রী নিজের ও সন্তানের জন্য জেলা বিচারকের আদালতে, যেখানে বিবাহ বিচ্ছেদের মামলা দায়ের হয়েছে।
• বিশেষ বিবাহ আইনের ৩৬ নম্বর ধারায় স্ত্রী ও তাঁর অপরিণত বয়স্ক সন্তানের জন্য।
• পার্শি মহিলারা পার্শি বিবাহ ও বিচ্ছেদ আইন ১৯৩৬ অনুযায়ী।

স্ত্রীর লড়াই

আজকাল অনেক মেয়ে নিজের পায়ে দাঁড়াচ্ছেন। রোজগার করছেন। তবে পুরো সমাজের ছবিটা এখনও এক রকম নয়। অনেকেই বিয়ের আগে বাবা এবং পরে স্বামীর উপর আর্থিক ভাবে নির্ভরশীল। মূলত তাঁদের কথা ভেবেই আইন বলেছে, সমাজের সমস্ত বিবাহিত মেয়ের ভরণপোষণের দায়িত্ব তাঁদের স্বামীর। যে-কারণে স্বামীর সঙ্গে থাকাকালীন তো বটেই, এমনকী আলাদা থাকলেও কেউ খোরপোশের দাবি জানাতে পারেন। তবে আগে জানতে হবে কোন আইনের আওতায়, কখন, কী শর্তে, কতটা খোরপোশের জন্য আবেদন করা যায়। চলুন দেখি—

কোন আইনে: ধর্ম বা সম্প্রদায় নির্বিশেষে যে-সব আইনের মাধ্যমে বিবাহিত মেয়েরা খোরপোশ দাবি করতে পারেন, সেগুলি হল—

• ফৌজদারি কার্যবিধি আইন, ১৯৭৩ (ধারা ১২৫)

• গার্হস্থ্য হিংসা থেকে মহিলাদের সুরক্ষা আইন

• বিশেষ বিবাহ আইন, ১৯৫৪

শর্ত: কী কী ক্ষেত্রে আলাদা থাকলে স্ত্রী স্বামীর কাছে খোরপোশের দাবি করে মামলা করতে পারেন? চলুন দেখি—

• স্ত্রীকে স্বামী পরিত্যাগ করলে।

• স্বামীর অত্যাচারের শিকার হলে।

• স্বামী অন্য কোনও মহিলার সঙ্গে সহবাস করলে।

• স্বামী ধর্ম পরিবর্তন করলে।

• স্ত্রী স্বামীকে ছেড়ে অন্যত্র থাকতে বাধ্য হলে।

• বিবাহ বিচ্ছেদের পরে এবং স্ত্রী আবার বিয়ে না করলে।

• দুজনের মধ্যে বিচ্ছেদ সংক্রান্ত মামলা চললে।

• স্ত্রীর নিজস্ব আয়ের সংস্থান থাকলেও, খোরপোশ দাবি করা যায়। তবে রোজগার স্বামীর তুলনায় অনেক কম হতে হবে। দেখাতে হবে, স্বামীর সমতুল্য জীবনযাপন করা তাঁর পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না।

উপার্জন করলেই দায়িত্ব: বিয়ে করলে যে-কোনও ব্যক্তিই আইনত বাধ্য স্ত্রীর ভরণপোষণের দায়িত্ব নিতে। তিনি বলতে পারেন না যে, আর্থিক দিক থেকে দুর্বল হওয়ায় তিনি স্ত্রীকে ভরণপোষণে অক্ষম। তবে আগেই বলেছি, আদালত কিন্তু সব কিছু খুঁটিয়ে বিচার করেই রায় দেয়।

সুবিধা: বিবাহ বিচ্ছেদের মামলা চলার সময়ে স্ত্রী দাবি করতে পারেন মামলার খরচ এবং তাঁর দিনযাপনের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ। মামলাটি শেষ হওয়ার পরে আবেদন করতে পারেন স্থায়ী খোরপোশ চেয়ে।

দাবির অঙ্ক: এটি বিচার করতে গিয়ে আদালত দেখে—

• স্ত্রীর স্বতন্ত্র আয় আছে কি না।

• দু’পক্ষের আর্থিক অবস্থা।

• স্বামীর সামাজিক অবস্থান।

• স্ত্রী কতটা সম্মানের সঙ্গে তাঁর জীবন চালাতে পারছেন।

• স্বামীর সঙ্গে থাকাকালীন যে স্বাচ্ছন্দ্য ছিল, তা জারি থাকছে কি না।

দুই আবেদন একসঙ্গে: বিবাহ বিচ্ছেদের মামলা চলাকালীনও স্ত্রী খোরপোশ দাবি করতে পারেন। সে ক্ষেত্রে যে আদালতে মামলাটি চলছে সেখানেই খোরপোশ চেয়ে আবেদন জানাতে হবে। একটি বিবাহ সংক্রান্ত মামলার পরিপ্রেক্ষিতেই খোরপোশের মামলা রুজু হয়। দেওয়ানি কার্যবিধি আইন অনুযায়ী তার নিষ্পত্তি হয়।

অবহেলা সইব কেন?

ফৌজদারি আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধি আইনের ১২৫ নম্বর ধারায় মামলা রুজু করতে পারেন কারা?

• বাবা সন্তানকে অবহেলা করলে, তার মা বা অভিভাবক স্থানীয় ব্যক্তি।

• সন্তান দায়িত্ব নিতে বা খরচখরচা দিতে অস্বীকার করলে, বাবা-মা।

• স্বামী ভরণপোষণের দায়িত্ব না নিতে চাইলে, স্ত্রী।

• ডিভোর্স হয়ে গেলেও, পুনর্বিবাহ না হওয়া পর্যন্ত স্ত্রী (শর্তসাপেক্ষে)।

• বাবার কাছ থেকে বৈধ অথবা অবৈধ অপরিণত বয়স্ক সন্তান।

• বাবার থেকে মানসিক ভারসাম্যহীন বা শারীরিক ভাবে অক্ষম সন্তান।

কী করণীয়: ফৌজদারি কার্যবিধি আইনের ১২৫ ধারায় জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে খোরপোশের জন্য আবেদন করতে হয়। সে ক্ষেত্রে—

• যে জেলায় অভিযোগকারী বাস করেন, সেই জেলা-আদালতেই মামলাটি রুজু হয়।

• অপর পক্ষকে মামলার চিঠি পাঠিয়ে বিষয়টি জানানো হয়।

• দু’পক্ষের কথা শুনে আদালত প্রথমে একটি অন্তর্বর্তী রায় দেয়।

• যদি প্রাথমিক ভাবে মামলাকারীর বক্তব্যের সত্যতা আদালতের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়, তবে অন্তর্বর্তী রায় অভিযোগকারীর পক্ষে যায়।

• দ্বিতীয় ধাপে পূর্ণাঙ্গ শুনানির পরে মামলার নিষ্পত্তি হয়।

দাবির অঙ্ক: এ ক্ষেত্রেও খোরপোশের অঙ্ক ঠিক হয় আগেরটির মতো প্রায় একই শর্ত বিবেচনা করে। যেমন—

• মামলাকারীর আয় আছে কি না।

• তিনি কতটা সম্মানের সঙ্গে জীবন কাটাতে পারছেন। এ জন্য তিনি কতখানি নির্ভরশীল।

• যিনি চাইছেন ও যাঁর থেকে চাওয়া হচ্ছে, দু’পক্ষেরই আর্থিক অবস্থা।

• যাঁর থেকে খোরপোশ চাওয়া হচ্ছে, তাঁর সামাজিক অবস্থান ও রোজগার।

বিচ্ছেদের ধাক্কা

বাবা-মা, দুজনেই চাকরি করেন। কিন্তু বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে গিয়েছে বা সেই মামলা চলছে। এই পরিস্থিতিতে সন্তান মায়ের কাছে থাকলেও, তার ভরণপোষণের দায়িত্ব বাবার। তাঁর কর্তব্য সঠিক সময়ে প্রয়োজনীয় খরচ-খরচা পাঠানো, যাতে সন্তানের জীবন গঠনে বাধা তৈরি না-হয়। অনেকের ধারণা, মা-বাবা দুজনেই কর্মরত হলে সন্তানের খরচ সমান ভাবে বইবেন। কিন্তু আইনে এমন বাধ্যবাধকতা নেই। বাবার ক্ষমতা ও সামাজিক অবস্থান অনুযায়ী নির্ধারিত হবে ভরণপোষণের অঙ্ক।

বিধবা পুত্রবধূ

হিন্দু অ্যাডপশন অ্যান্ড মেনটেনেন্স আইন, ১৯৫৬-র আওতায় ১৯ নম্বর ধারা অনুযায়ী, বিধবা পুত্রবধূ শ্বশুরমশাইয়ের কাছে খোরপোশ দাবি করতে পারেন। তবে শর্তসাপেক্ষে।

সৎমায়ের দাবি

ভরণপোষণ চাওয়ার অধিকার আছে সৎমায়েরও। এবং তিনিও তা দাবি করতে পারেন হিন্দু অ্যাডপশন ও মেনটেনেন্স আইন ১৯৫৬-র ১৯ নম্বর ধারা অনুযায়ী।

একসঙ্গে থাকলে

গার্হস্থ্য হিংসা প্রতিরোধক আইন, ২০০৫-এর আওতায় স্ত্রী যেমন স্বামীর কাছ থেকে খোরপোশ চাইতে পারেন, তেমনই সেই দাবি জানাতে পারেন একই ছাদের নীচে একসঙ্গে বাস করা মহিলা সঙ্গী। যদি তাঁরা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ না-হয়েও স্বামী-স্ত্রীর মতো জীবন কাটান।

মামলার খরচ

প্রবীণ মানুষই হোন বা মহিলা, সকলেই নিখরচায় মামলা চালানোর সুযোগ পেতে পারেন ‘আইনি সহায়তা কর্তৃপক্ষে’র সঙ্গে যোগাযোগ করলে। তাঁদের দফতর প্রতিটি আদালত চত্বরেই থাকে। তা ছাড়া, এ ধরনের মামলায় বিপুল খরচ হয় না। আদালতও চেষ্টা করে দ্রুত মামলার নিষ্পত্তি করতে।

হাত ধরতে

যে-সব বয়স্ক মানুষের হাঁটাচলার সমস্যা আছে, তাঁরা স্থানীয় অসরকারি সংস্থার (এনজিও) সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন। এ ছাড়াও আইনি সহায়তা কর্তৃপক্ষের কাছে গেলে, তাঁরা প্যারালিগাল ভলান্টিয়ার পাঠিয়ে ওই সব মানুেষর হয়ে মামলা রুজু করতে সহায়তা করতে পারেন।

লেখক কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী

প্রঃ ফান্ডের ফিক্সড ম্যাচিওরিটি প্ল্যান সম্পর্কে জানতে চাই।

কৃষ্ণা ঘোষ, নেতাজিনগর
নামেই পরিষ্কার ফিক্সড ম্যাচিওরিটি প্ল্যান (এফএমপি) একটি স্থায়ী মেয়াদের মিউচুয়াল ফান্ড প্রকল্প।
• ঋণপত্র ভিত্তিক (ডেট) ফান্ড এটি।
• ফান্ডের যে-মেয়াদ হয়, সেই একই মেয়াদের ঋণপত্রে তার তহবিল লগ্নি হয়। যাতে ঋণপত্র ভাঙানোর সময় এসে গেলেই ফান্ডও ভাঙানো যায়। এবং রিটার্ন হাতে পান লগ্নিকারীরা।
• স্বল্প সময়ের জন্য লগ্নি করা হয়। বাজারে বেশি জনপ্রিয় বছর তিনেক মেয়াদের এফএমপি। আগে তিন মাস বা ন’মাসের প্রকল্পও খুব দেখা যেত।
• এটি ক্লোজ এন্ডেড ফান্ড। অর্থাৎ বাজারে যখন প্রথম বার এ ধরনের ফান্ড আসে, শুধু তখনই ইউনিট কেনা যায়। ইউনিট যখন-তখন বেচাও যায় না। অপেক্ষা করতে হয় ফান্ডের মেয়াদ শেষ হওয়া পর্যন্ত।
• এফএমপি-র লক্ষ্য, বিভিন্ন ধরনের ঋণপত্রে লগ্নির মাধ্যমে মোটামুটি নিশ্চিত আয়ের পথ তৈরি করা। তবে সেই রিটার্ন কতটা হতে পারে, সেটার হিসাব কিছুটা আন্দাজ করা গেলেও, নিশ্চিত ভাবে বলা সম্ভব নয়।
• ঝুঁকিও কিছুটা রয়েছে। প্রথমত, রিটার্ন যে ভাল হবে, তার নিশ্চয়তা নেই। শেয়ার হোক বা ঋণপত্র, বাজার নির্ভর কোনও লগ্নি-প্রকল্পের ক্ষেত্রেই যেমন থাকে না। দ্বিতীয়ত, যে-কোনও সময়ে ফান্ড বিক্রির সুবিধা না-থাকায় আচমকা তৈরি হওয়া প্রয়োজনে এই লগ্নি কাজে লাগে না।

পরামর্শদাতা: নীলাঞ্জন দে

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Property wife's right সম্পত্তি
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE