Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

সেনসেক্স পড়ল ৫৮৭ পয়েন্ট

দেশে বৃদ্ধির চাকার গতি ঢিমে। খবর ভাল নয় বিদেশেও। পৃথিবীজুড়ে শেয়ার বাজারের মেরুদণ্ডে আশঙ্কার ঠাণ্ডা স্রোত বইয়ে দিচ্ছে চিনের বেহাল অর্থনীতি। এই পরিস্থিতিতে ভারতের বাজারও যে কতটা অস্থির আর অনিশ্চিত হয়ে উঠেছে, ফের তার প্রমাণ মিলল মঙ্গলবার।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০২:৩৬
Share: Save:

দেশে বৃদ্ধির চাকার গতি ঢিমে। খবর ভাল নয় বিদেশেও। পৃথিবীজুড়ে শেয়ার বাজারের মেরুদণ্ডে আশঙ্কার ঠাণ্ডা স্রোত বইয়ে দিচ্ছে চিনের বেহাল অর্থনীতি। এই পরিস্থিতিতে ভারতের বাজারও যে কতটা অস্থির আর অনিশ্চিত হয়ে উঠেছে, ফের তার প্রমাণ মিলল মঙ্গলবার। সেনসেক্স পড়ল ৫৮৬.৬৫ পয়েন্ট। দাঁড়াল ২৫,৬৯৬.৪৪ অঙ্কে। এক দিনেই মুছে গেল দু’লক্ষ কোটি টাকারও বেশি সম্পদ। যদিও ন্যূনতম বিকল্প কর (ম্যাট) নিয়ে কেন্দ্রের এ দিনের ঘোষণা বাজারকে কিছুটা চাঙ্গা করতে পারে বলে মনে করছেন অনেকে।

তবে বাজারের এই বিপুল পতনের দিনেও ডলারের সাপেক্ষে ২৬ পয়সা বেড়েছে টাকার দর। ডলারের দাম দাঁড়িয়েছে ৬৬.২২ টাকা।

বিশ্বজুড়ে অনিশ্চয়তার আবহে ঘড়ির পেন্ডুলামের মতো দুলছে সূচক। সোমবার তা পড়েছে ১০৯ পয়েন্ট। অথচ তার আগের দু’দিনে সেনসেক্স উঠেছে প্রায় ৬৭৮ অঙ্ক। আবার এ দিনই ফের তা প্রায় ৫৮৭ পয়েন্ট পতনের মুখে। শুধু তা-ই নয়, এ দিন এক সময় সেনসেক্স নেমে গিয়েছিল ৭০০ পয়েন্টেরও বেশি। বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশে-বিদেশে খারাপ খবরই এর মূল কারণ।

গতকাল বাজার বন্ধের পরে দেশের বৃদ্ধির হার প্রকাশ করেছিল কেন্দ্র। দেখা গিয়েছে, এপ্রিল-জুন ত্রৈমাসিকে তা দাঁড়িয়েছে ৭%। আগের ত্রৈমাসিকের বৃদ্ধির হারের (৭.৫%) তুলনায় কম। বিশেষজ্ঞদের পূর্বাভাসের (৭.৪%) থেকেও নীচে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এর পাশাপাশি সংস্কার থমকে যাওয়াও হতাশ করেছে লগ্নিকারীদের।

জমি-বিল বিশ বাঁও জলে। তীরে এসেও তরী ভেড়েনি জিএসটি (পণ্য-পরিষেবা কর) বিলের। ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ নিয়ে বিস্তর প্রচারের পরেও বেসরকারি বিনিয়োগ এখনও সে ভাবে আসছে না। ফলে দেশের অর্থনীতি চাঙ্গা হওয়া নিয়ে সে ভাবে আশার আলো না-দেখে মুষড়ে পড়েছে বাজার।

তার উপর আশঙ্কা বাড়িয়েছে চিনা অর্থনীতির বেহাল দশা। সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, সেখানে অগস্টে শিল্পোৎপাদন সঙ্কুচিত হয়েছে তিন বছরের মধ্যে সব থেকে বেশি। অবস্থা ভাল নয় পরিষেবারও। চিনের এই পরিসংখ্যান সামনে আসার পরে এ দিন মার্কিন মুলুক, ইউরোপ, এশিয়ার প্রায় সব বাজারেই সূচকের মুখ ছিল নীচের দিকে। বাদ যায়নি ভারতও। তার উপরে মার্কিন শীর্ষ ব্যাঙ্ক ফেডারেল রিজার্ভের সুদ বাড়ানো নিয়ে আশঙ্কা তো রয়েইছে।

ভারতে বাজারের পতনে ইন্ধন জুগিয়েছে অনেক ব্যাঙ্কের শেয়ার দরের নজরকাড়া পতনও। সোমবার ঋণে ন্যূনতম সুদের হার (বেস রেট) ৩৫ বেসিস পয়েন্ট কমিয়েছে এইচডিএফসি ব্যাঙ্ক। লগ্নিকারীদের আশঙ্কা, এর ফলে প্রতিযোগিতার জেরে একই পথে হাঁটতে বাধ্য হবে বাকি ব্যাঙ্কগুলি। ফলে মুনাফা কমবে। তাই এ দিন ব্যাঙ্কের শেয়ার বিক্রি ছিল চোখে পড়ার মতো।

এ দেশে বাজারের পতনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিচ্ছে বিদেশি লগ্নিকারী সংস্থাগুলি। যারা জুলাই পর্যন্তও ২৫,৭০০ কোটি টাকার বেশি এখানে ঢেলেছে, তারাই অগস্টে শেয়ার বেচেছে প্রায় ১৭ হাজার কোটি টাকার। বিশ্বজোড়া মন্দার ২০০৮ সালের অক্টোবরেও এই অঙ্ক ছিল এর থেকে কম। ১৫,৩৫০ কোটি। তবে ম্যাট নিয়ে কেন্দ্রের ঘোষণা তাদের আবার কিছুটা বাজারে ফেরাতে পারে বলে অনেকের মত।

বাজারের অস্থিরতা নিয়ে ক্যালকাটা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রাক্তন ডিরেক্টর এস কে কৌশিক বলেন, ‘‘চিন, ইউরোপ ও আমেরিকার অর্থনীতিতে সুস্থিতি না-আসা পর্যন্ত ভারতে বাজারের হাল ফেরার সম্ভাবনা কম। অনিশ্চয়তা থাকবে। মাঝে মধ্যে উঠলেও তা স্থায়ী হওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। সম্ভবত সূচক ঘোরাঘুরি করবে ২৪ থেকে ২৬ হাজারের মধ্যে।’’

এল বি সিকিউরিটিজের ডিরেক্টর মনীশ অগ্রবালের মতে, ‘‘পণ্য পরিষেবা কর চালু হওয়া বাজারের পক্ষে অত্যন্ত জরুরি। এখনও তা না হওয়ায় বাজার হতাশ।’’ কৌশিকের মতে, ‘‘এই পরিস্থিতিতে সাধারণ লগ্নিকারীদের বাজার থেকে দূরে থাকাই শ্রেয়।’’ যদিও অগ্রবালের দাবি, ‘‘প্রতি পতনে ভাল শেয়ার কিনলে, আখেরে মুনাফার মুখ দেখা যেতে পারে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Sensex BSE GDP Chinese PMI
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE