Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

বকেয়া কর নিয়ে আতঙ্কের জেরে পড়ল সেনসেক্স, টাকা

ফের আতঙ্কের গ্রাসে মুম্বই শেয়ার বাজার। ভোডাফোন-সহ বিদেশি লগ্নিকারীদের পুরনো ব্যবসায়িক লেনদেনের উপর মোদী সরকার কর না-চাপানোর প্রতিশ্রুতি দিলেও ভবিষ্যতে কী হবে তা বলা যায় না— কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলির এই মন্তব্যের জেরে বিক্রির হিড়িকে সোমবার পড়তে থাকে সেনসেক্স। পাশাপাশি, সংবাদ মাধ্যমের একাংশে এ দিনই প্রকাশিত একটি খবরে বিভ্রান্তি ছড়ায়।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:৪৪
Share: Save:

ফের আতঙ্কের গ্রাসে মুম্বই শেয়ার বাজার।

ভোডাফোন-সহ বিদেশি লগ্নিকারীদের পুরনো ব্যবসায়িক লেনদেনের উপর মোদী সরকার কর না-চাপানোর প্রতিশ্রুতি দিলেও ভবিষ্যতে কী হবে তা বলা যায় না— কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলির এই মন্তব্যের জেরে বিক্রির হিড়িকে সোমবার পড়তে থাকে সেনসেক্স। পাশাপাশি, সংবাদ মাধ্যমের একাংশে এ দিনই প্রকাশিত একটি খবরে বিভ্রান্তি ছড়ায়। সেখানে দাবি করা হয়, বেশ কিছু সংস্থাকে নতুন করে করের নোটিস পাঠানো হয়েছে এবং সেই তালিকায় ভোডাফোনও আছে। বাজারের পতনে আরও ইন্ধন জোগায় ন্যূনতম বিকল্প কর বা মিনিমাম অল্টারনেট ট্যাক্স (ম্যাট) মিটিয়ে দেওয়ার জন্য বিদেশি লগ্নিকারী সংস্থাগুলিকে পাঠানো কর দফতরের চিঠি।

বাজার সূত্রের খবর, এ দিন মূলত বিদেশি লগ্নিকারীরাই টানা শেয়ার বিক্রি করতে থাকেন, যার জেরে দ্রুত নেমে আসে সূচকের পারা। এক ধাক্কায় ৫৫৫ পয়েন্টেরও বেশি পড়ে যায় সেনসেক্স। তা ফের নেমে আসে ২৭ হাজারের ঘরে। বাজার বন্ধের সময়ে সেনসেক্স থামে ২৭,৮৮৬.২১ অঙ্কে। গত প্রায় এক মাসে এত বেশি পড়েনি সূচক। আবার, বিদেশি লগ্নিকারীদের শেয়ার বিক্রির চাপেই বৈদেশিক মুদ্রার বাজারে ডলারের তুলনায় টাকার চাহিদা কমতে থাকে। ডলারের চাহিদা বাড়িয়ে দেন আমদানিকারীরাও। দিনের শেষে টাকার দাম পড়ে যায় ৫৫ পয়সা, যা চলতি ২০১৫ সালে সবচেয়ে বেশি। বাজার বন্ধের সময়ে প্রতি ডলারের দাম দাঁড়ায় ৬২.৯১ টাকা।

প্রসঙ্গত, ভোডাফোনের ৩২০০ কোটি টাকার কর নিয়ে আইনি বিবাদ থেকে সরে আসার পরেই বিদেশি লগ্নিকারীদের আস্থা ফিরে পেতে বাদবাকি সংস্থার ক্ষেত্রেও একই পথে হাঁটার জন্য জানুয়ারিতেই আয়কর-কর্তাদের নির্দেশ দেয় মোদী সরকার। এর জেরে রয়্যাল ডাচ শেল, আইবিএম, মাইক্রোসফট, সোনি, নোকিয়া, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড, এইচএসবিসি-র মতো সংস্থার সঙ্গেও কেন্দ্রীয় সরকারের কর-বিবাদ নিয়ে রফা হয় বলে জানিয়ে দেয় অর্থ মন্ত্রক। ওই ৩২০০ কোটি টাকার কর নিয়ে ভোডাফোন বনাম কেন্দ্রীয় সরকারের বিবাদে বম্বে হাইকোর্ট ভোডাফোনের পক্ষেই রায় দিয়েছিল। নরেন্দ্র মোদী সরকার সেই রায় মোনে নিয়ে তার বিরুদ্ধে আদালতে আবেদন না-জানানোর সিদ্ধান্ত নেয়।

উল্লেখ্য, ২০১০ সালে ভোডাফোন গোষ্ঠীরই দু’টি সংস্থার মধ্যে শেয়ার হস্তান্তরের (ট্রান্সফার প্রাইসিং) উপর মনমোহন সরকারের জমানায় ৩২০০ কোটি টাকার কর চাপিয়েছিল আয়কর দফতর। ট্রান্সফার প্রাইসিং হল সেই ধরনের শেয়ার বা অন্য কোনও সম্পদ হস্তান্তর, যা একটি বহুজাতিক সংস্থা অন্য দেশে তারই কোনও শাখার সঙ্গে করে থাকে। মনমোহন সরকারের যুক্তি ছিল, শেয়ারের দাম কম করে দেখানো হলে তার উপর কর বসতে পারে। ভোডাফোন যুক্তি দিয়েছিল, এই লেনদেন করের আওতায় পড়ে না। সংস্থা বম্বে হাইকোর্টে গেলে রায় তাদের পক্ষেই যায়।

ভোডাফোনের কাছ থেকে বকেয়া কর আদায়ের উদ্যোগকে কেন্দ্র করে যে-সমস্যার সৃষ্টি হয়েছিল, তা যাতে পুনরায় না-হয়, সে ব্যাপারে সংসদে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে কি না, এই প্রশ্নের উত্তরে জেটলি সম্প্রতি বলেন যে, ওই ধরনের বকেয়া কর আদায়ের জন্য আইন তৈরি করার কোনও উদ্দেশ্যই তাঁদের নেই। কিন্তু পাশাপাশি ভবিষ্যতে বা অন্য কোনও সরকার ক্ষমতায় এলে এ ধরনের পুরনো লেনদেনে বকেয়া কর যে চাপাবে না, সে ব্যাপারে কথা দিতে পারেননি জেটলি। এ ধরনের কর আইন প্রণয়ন করার ক্ষেত্রে সংসদের ক্ষমতা খর্ব করার কোনও অধিকারও কোনও সরকারের নেই বলে মন্তব্য করেন তিনি। বাজার সূত্রের খবর, জেটলির এই মন্তব্য শুনে বিদেশি লগ্নিকারীদের মধ্যে আতঙ্কের সৃষ্টি হয় যে, ওই ধরনের আইন প্রণয়ন করার সম্ভাবনা জিইয়ে রাখা হচ্ছে। এর জেরে এ দিন ওই সব সংস্থার মধ্যে শেয়ার বিক্রির হিড়িক পড়ে য়ায়।

গত প্রায় এক সপ্তাহ ধরেই পড়ছে শেয়ার বাজার। এই ক’দিনে সেনসেক্সের পতন হল ১১৬০ পয়েন্ট। তবে শেয়ার বাজারের পতনের ক্ষেত্রে ওই ধরনের কারণগুলিকে নিছক ‘বাহানা’ বলে মন্তব্য করেছেন বেশ কিছু বিশেষজ্ঞ। তাঁদের মতে, আর সরকারের নিছক মুখের কথায় চিঁড়ে ভিজবে না। এ বার ফল দিয়েই বৃক্ষ চেনার পালা। দেশের আর্থিক অবস্থা ঠিক কোন জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে, তার বিচার এ বার লগ্নিকারীরা করবেন আর্থিক উন্নতির বিভিন্ন অঙ্ক দেখেই। স্বাভাবিক ভাবেই লগ্নির সিদ্ধান্তও তাঁরা তার উপর ভিত্তি করেই নেবেন। সোমবার শেয়ার বাজারের বড় মাপের পতনের পরে এই সব মন্তব্যই করেছেন বিশেষজ্ঞদের অনেকে।

প্রবীণ বাজার বিশেষজ্ঞ অজিত দে বলেন, ‘‘প্রথমত ভোডাফোনের বিষয়টি নিয়ে কোনও সংশয় থাকার কথা নয়। এ ব্যাপারে আদালতে ফয়সালা হয়ে গিয়েছে। আর ম্যাটের আওতায় যে বিদেশি লগ্নিকারী সংস্থাগুলি রয়েছে, তা তো অনেক আগে আদালতই বলে দিয়েছে। সুতারং এই কারণগুলি বাজারের পতন ডেকে এনেছে বলে আমি মনে করি না। বাজার যে শুধু আজই পড়েছে, তা নয়। গত প্রায় এক সপ্তাহ ধরেই পড়ছে।’’

তা হলে বাজারের পতনের কারণ কী?

অজিতবাবু এবং আরও কিছু বিশেষজ্ঞ মনে করেন যে, কেন্দ্রে নতুন সরকার আসার পরে আর্থিক ক্ষেত্রে যে অগ্রগতি হয়েছে, তার মূলে রয়েছে আন্তর্জাতিক বাজারে অশোধিত তেলের দাম কমা। এ ছাড়া নতুন সরকারের কাছ থেকে আর্থিক সংস্কার-সহ আরও কিছু প্রত্যাশাও সূচকের পারাকে দ্রুত উপরের দিকে নিয়ে গিয়েছে। কিন্তু দেশের উৎপাদন শিল্পের চাকা এখনও তেমন ভাবে গড়াতে শুরু করেনি। সার্বিক ভাবে শিল্পের হাল উৎসাহব্যঞ্জক নয়। মোটমুটি ভাবে যে-সব তথ্য সামনে রয়েছে, তা থেকে এটা বলা যায় না যে, দেশের আর্থিক ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য এমন উন্নতি হয়েছে, যাতে সেনসেক্সের ৩০ হাজারের ঘর ছোঁয়া যথেষ্ট যুক্তিসঙ্গ।

তা হলে দেশের শেয়ার বাজারের ভবিষ্যৎ কী? বিশেষজ্ঞদের মধ্যে অনেকেই মনে করেন, এ বার লগ্নিকারীরা আর্থিক ক্ষেত্রের বিভিন্ন দিকের উন্নতির হার দেখে লগ্নির বহর বাড়ানোর কথা ভাববেন। তবে ভারতের শেয়ার বাজারের ভবিষ্যৎ নিয়ে কিন্তু বেশ আশাবাদী তাঁরা। অজিতবাবু বলেন, ‘‘স্বল্প মেয়াদে শেয়ার বাজারে লগ্নি করে লোকসান হলেও দীর্ঘ মেয়াদি অর্থাৎ কম করে ৬ মাস থেকে ৯ মাসের মেয়াদে লগ্নি যে মুনাফার মুখ দেখাবে, সে ব্যাপারে আমার কোনও সংশয় নেই। বিদেশি লগ্নিকারীরা যে ভারতের বাজার নিয়ে বিশেষ আশাবাদী, সে ব্যাপারেও আমি নিশ্চিত।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE