প্রতীকী ছবি।
অকালবর্ষণ এবং তার পরেই ঝলমলে রোদ। গত় সপ্তাহে একই রকম আবহাওয়া ছিল শেয়ার বাজারেও।
এক দিকে অশোধিত তেলের দাম এবং পাইকারি ও খুচরো মূল্যবৃদ্ধির উপরে ওঠা, অন্য দিকে শিল্প বৃদ্ধির হার কমার খবরে সপ্তাহের প্রথম দিকে চুপসে গিয়েছিল দুই শেয়ার সূচক। তেত্রিশের মায়া কাটিয়ে বত্রিশ হাজারের ঘরে নেমেছিল সেনসেক্স। তিন দিনের নিম্নচাপ কাটিয়ে বৃহস্পতি -বার বাজারে ঝলমলে রোদ ওঠে। জানা যায় তেলের দাম একটু একটু করে কমতে শুরু করেছে। এই খবরে তেতে ওঠে ভারত-সহ বিশ্ব বাজার। এক লাফে সেনসেক্স বাড়ে ৩৪৬ পয়েন্ট। ফিরে আসে ৩৩ হাজারে।
পরের দিন অর্থাৎ শুক্রবার এই ঊর্ধ্বচাপকে উস্কে দেয় ভারত সম্পর্কে মুডি’জ-এর উন্নত ক্রেডিট রেটিং। Baa3 থেকে ভারতের রেটিং উন্নীত হয় Baa2-তে। প্রায় ১৪ বছরে এই প্রথম রেটিং বাড়ায় উৎফুল্ল হয়ে ওঠে সরকার এবং শেয়ার বাজার। সেনসেক্স এ দিন বাড়ে প্রায় ২৩৬ অঙ্ক এবং পৌঁছয় ৩৩,৩৪২ পয়েন্টে। আগের কয়েক দিনে পড়ে যাওয়া অনেক শেয়ারই পুনরুদ্ধার করে হারিয়ে যাওয়া জমি ও উন্নতি ঘটে ইকুইটি ফান্ডগুলির ন্যাভেও।
এখন প্রশ্ন হল, রেটিংয়ে এই উন্নতির তাৎপর্য কী? ভারতের রাষ্ট্রীয় তথা সভ্রেন বন্ড-এর রেটিং ‘পজিটিভ’ বা ইতিবাচক থেকে ‘স্টেব্ল’ বা স্থিতিশীল-এ উন্নীত হওয়াটা কিন্তু বেশ সদর্থক। এর ফলে সস্তায় বিদেশি ঋণ পাওয়া সহজ হবে। ভারতীয় টাকার উপর চাপ কমবে। বেসরকারি এবং বিদেশি লগ্নি বাড়ার সম্ভাবনা দেখা দেবে। ভারতে উৎসাহ বাড়বে বিদেশি লগ্নিকারী সংস্থাগুলির।
মুডিজ রেটিং বাড়িয়েছে চারটি ব্যাঙ্ক এবং আর্থিক সংস্থারও। এগুলি হল স্টেট ব্যাঙ্ক, এইচডিএফসি ব্যাঙ্ক, এগ্জিম ব্যাঙ্ক ও ইন্ডিয়ান রেলওয়েজ ফিনান্স কর্পোরেশন। এরা স্থিতিশীল রেটিং পাওয়ায় ব্যবসার উপর সদর্থক প্রভাব পড়বে বলে মনে করা হচ্ছে।
অশোধিত তেলের দাম গত সপ্তাহে বেশ খানিকটা বাড়ায় মূল্যবৃদ্ধি এখন দেশের কাছে একটি বড় সমস্যা। এতে ঋণে সুদ কমার আশা ও জমার উপর আর এক প্রস্ত সুদ হ্রাসের আশঙ্কা সাময়িক ভাবে কমলো।
পণ্যমূল্য বাড়ায় গত কয়েক দিনে সরকারি বন্ডের ইল্ড বা আয় পৌঁছেছে ১৪ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ (৭.০৫%) জায়গায়। ফলে জমার উপর সুদ কমার বদলে বাড়ানোর দাবি জোরালো হয়ে উঠবে। বন্ড ইল্ড বাড়ায় ডাকঘর সঞ্চয় প্রকল্পগুলিতে এখনই আর সুদ কমানো হবে না বলে মনে করা হচ্ছে। গত কয়েক দিনে বন্ডের দাম কমায় কিছুটা কমেছে বন্ড তথা ডেট ফান্ডের ন্যাভ।
গত সপ্তাহে শেষ হয়েছে দ্বিতীয় ত্রৈমাসিক ফল প্রকাশের পালা। নোটবন্দি ও জিএসটি চালু নিয়ে রাজনৈতিক মহলে যতই সমালোচনা হোক, সামগ্রিক ভাবে ত্রৈমাসিক ফল কিন্তু অন্য কথা বলছে। ১৪৫৫টি সংস্থার ফলাফল নিয়ে করা এক সমীক্ষায় প্রকাশ, জুলাই-সেপ্টেম্বর এই তিন মাসে তাদের গড় নিট লাভ বেড়েছে ২.৫ % ও নিট বিক্রি বৃদ্ধি থেকেছে একই জায়গায় (৮.৬%)।
মনে রাখতে হবে, জিএসটি-র যাত্রা শুরু হয়েছিল এই সময়েই। আশা, পরের মাসগুলিতে শিল্প আরও দ্রুত গতিতে এগোবে। অর্থনীতির কাছে এখন বড় চিন্তা হল রফতানি হ্রাস ও অনেক পণ্যে জিএসটি কমায় সরকারের আয় হ্রাসের আশঙ্কা।
পরপর কয়েকটি বিমা সংস্থার আইপিও হতাশ করার পরে অবশেষে মুখরক্ষা করেছে এইচডিএফসি লাইফ।
২৯০ টাকায় ইস্যু করা এই শেয়ার নথিবদ্ধ হওয়ার পরে শুক্রবার বন্ধ হয়েছে প্রায় ৩৪৫ টাকায়। অর্থাৎ প্রথম দিনেই লাভ প্রায় ১৯%। এর আগে হতাশ করেছে এসবিআই লাইফ, জিআইসি ও নিউ ইন্ডিয়া-র ইস্যু। বছর খানেক আগে বাজারে আসা আইসিআইসিআই প্রু লাইফ প্রথমে না-পারলেও পরে লাভের সন্ধান দিয়েছে। খুব একটা লোকসানের মুখে ফেলেনি আইসিআইসিআই লম্বার্ড-ও। যে-সব সংস্থা সম্প্রতি বাজারে এসেছে, তাদের পুরো তথ্য দেওয়া হল সঙ্গের সারণিতে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy