Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪
নজিরবিহীন নামা-ওঠা সূচকের

গুজরাতের ফলে হাঁফ ছাড়ল বাজার

দিনের এক্কেবারে শুরুতে টিভির পর্দায় গুজরাতে কংগ্রেসের এগিয়ে থাকার খবর ফুটে উঠতেই, ৮৬৭ পয়েন্ট নেমে যায় সেনসেক্স। দ্রুত শেয়ার বেচতে থাকেন লগ্নিকারীরা।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৯ ডিসেম্বর ২০১৭ ০১:২৬
Share: Save:

গতিপথ বদলানোয় নজির গড়ল শেয়ার বাজার।

দিনের এক্কেবারে শুরুতে টিভির পর্দায় গুজরাতে কংগ্রেসের এগিয়ে থাকার খবর ফুটে উঠতেই, ৮৬৭ পয়েন্ট নেমে যায় সেনসেক্স। দ্রুত শেয়ার বেচতে থাকেন লগ্নিকারীরা। ছবিটা অবশ্য পাল্টায় বেলা গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে। সে রাজ্যে ফের বিজেপি ক্ষমতায় ফেরার খবরে হারানো জমি উদ্ধারে নামে সূচক। গুজরাতের তখ্‌তে বিজেপির থাকা যত স্পষ্ট হয়েছে, তত তা লাফিয়ে এগিয়েছে। ফলে দিনের শেষে শুধুমাত্র ৮৬৭ পয়েন্টের পতন মুছে ফেলাই নয়, আগের দিনের থেকে ১৩৮.৭১ পয়েন্ট উঠে দৌড় শেষ করেছে সেনসেক্স। দাঁড়িয়েছে ৩৩,৬০১.৬৮ অঙ্কে।

বিশেষজ্ঞদের অনেকেই বলছেন, ১৩৮ পয়েন্ট তেমন চোখে পড়ার মতো নয় ঠিকই। কিন্তু ৮৬৭ পয়েন্টের পতন মুছে ওই উত্থান বাজারের ইতিহাসে বিরল ঘটনা। তাঁদের মতে, সে দিক দিয়ে দেখলে এ দিন সূচক উঠেছে প্রায় ১০০৫ পয়েন্ট।

দিনভর একই রকম নামা-ওঠার শরিক হয় নিফ্‌টিও। প্রথমে ২৫৮ পয়েন্ট পড়লেও, শেষ পর্যন্ত ৬৫.৫০ উঠে তা থিতু হয় ১০,৩৮৮.৭৫ অঙ্কে।

আরও পড়ুন: নজরে লোকসভা ভোট, বরাদ্দ বাড়ল ১০০ দিনে

ডলারের সাপেক্ষে টাকার দাম অবশ্য পিছিয়ে পড়া রাস্তার পুরোটা উদ্ধার করতে পারেনি। বাজারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে টাকা শুরুতে ৭০ পয়সা পিছলে গিয়েছিল। পরে লোকসানের খানিকটা পুষিয়ে নিলেও, দিনের লেনদেন শেষে ডলারে তা ২০ পয়সা নীচেই থেকে যায়। এক ডলার দাঁড়ায় ৬৪.২৪ টাকায়।

বিশেষজ্ঞদের দাবি, বিজেপি, কংগ্রেস, গুজরাতের কুর্সি, রাজনীতির সমীকরণ ‘থোড়াই কেয়ার’ করেছে সূচক। আসলে তার নজর ছিল স্থায়ী সরকারের দিকে। সে জানে আগামী দিনে দিল্লির মসনদে স্থায়ী সরকার থাকলে বাজার চাঙ্গা থাকবে। আর এই মুহূর্তে রাজনীতির যা অঙ্ক, তাতে স্থায়ী সরকার গড়ার সম্ভাবনায় এগিয়ে বিজেপি-ই। না-হলে এ বারের গুজরাত নির্বাচনে যেখানে নরেন্দ্র মোদী বিজেপির মুখ ছিলেন না, পাতিদার আন্দোলন ছিল, কংগ্রেসের পালে হাওয়া ছিল, নোটবন্দির ধাক্কা ছিল, জিএসটি-র টাটকা ক্ষোভ ছিল, সেখানে ওই রাজ্যে ধাক্কাই খাওয়ার কথা তাদের।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এত কিছুর পরেও বিজেপি গুজরাতে ফেরায়, লগ্নিকারীদের একাংশ মনে করছেন, কেন্দ্রে আগামী দিনে স্থায়ী ও শক্তিশালী সরকার থাকার সম্ভাবনা আরও বহু গুণ বেড়ে গেল। যে-কারণে এ দিন নজিরবিহীন ভাবে গতিপথ বদলেছে সূচক।

এই মতেরই শরিক ক্যালকাটা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রাক্তন ডিরেক্টর ও বাজার বিশেষজ্ঞ এস কে কৌশিক যেমন বলেন, ‘‘বাজার রাজনীতি নিয়ে চিন্তিত নয়। তারা চায় কেন্দ্রে স্থায়ী সরকার। বর্তমান পরিস্থিতিতে একমাত্র বিজেপিই একক ক্ষমতায় সরকার গড়ার অবস্থায় রয়েছে। গুজরাতে তাদের হার হলে ২০১৯ সালে সেই সম্ভাবনা বড় ধাক্কা খেত।’’

বিরোধীরা সমালোচনায় বিঁধলেও, নোট বাতিল ও জিএসটি চালু, দুই সিদ্ধান্তেই বাজার বরাবর নরেন্দ্র মোদী সরকারের পাশে থাকার ইঙ্গিত দিয়েছে। কারণ লগ্নিকারীদের বিশ্বাস ছিল এই দুই সংস্কার দীর্ঘ মেয়াদে অর্থনীতির ভিত পোক্ত করবে। যে-কারণে বিশেষজ্ঞ অজিত দে-র দাবি, ‘‘শুধু স্থায়ী সরকার নয়, মোদী সরকার যে-সব আর্থিক সংস্কার এনেছে সেগুলি কার্যকর করা এবং যা যা আনার পরিকল্পনা করেছে, সেগুলি বাস্তবায়িত করার জন্যই বাজার মনে করে নির্বাচনে বিজেপির জয় জরুরি।’’

তবে উল্টো পক্ষের দাবি, কংগ্রেস যে-ভাবে গুজরাতে এ বার বিজেপি-র সঙ্গে লড়ল, তাতে তারা উজ্জীবিত হবে। ফলে আগামী দিনে তুল্যমূল্য লড়াই চলবে ব্যালট বাক্সে। সেই কারণে বাজার তুমুল অনিশ্চিত থাকার আশঙ্কাও রইল। স্টুয়ার্ট সিকিউরিটিজের চেয়ারম্যান কমল পারেখ যেমন বলছেন, ‘‘কংগ্রেস গুজরাত ভোটের ফলাফলে বিজেপির এত কাছে চলে আসায় রাজনীতির ময়দান অশান্ত থাকবে। বাজারের পক্ষে এই প্রভাব এড়ানো কঠিন।’’

বিশেষজ্ঞদের অনেকের মতে, এই অনিশ্চয়তার আশঙ্কা বিদেশি লগ্নিকারী সংস্থাগুলিকেও গ্রাস করেছে। যে-কারণে গত শুক্রবার ও এ দিন মিলে তারা ভারতে শেয়ার বেচেছে ১,৩৫২ কোটি টাকার। যদিও মিউচুয়াল ফান্ড-সহ ভারতীয় আর্থিক সংস্থাগুলি এ দিন ঢেলেছে ১,০৭৬ কোটি টাকার পুঁজি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Gujarat Assembly Election 2017 Share Market
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE