দরপত্র দেওয়ার সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছিল সোমবার শেষ দুপুরে। তার পর থেকেই শুরু হয়েছে অপেক্ষার প্রহর গোনা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রের ইঙ্গিত, টাটা স্টিলের ব্রিটেন-ব্যবসা কেনার আগ্রহ দেখিয়ে জমা পড়া দরগুলির মধ্যে থেকে আগামী বুধবারই উপযুক্ত প্রথম ২-৩টিকে বেছে নিতে পারে সংস্থার পর্ষদ। শেষে চূড়ান্ত বাছাই করা হবে দরদাতার নাম। এ ব্যাপারে ভারতীয় ইস্পাত বহুজাতিকটির সঙ্গে আলোচনা চালাতে মুম্বইয়ে সংস্থার সদর দফতরে যাচ্ছেন ব্রিটিশ বাণিজ্য সচিব সাজিদ জাভিদও। কারণ, ব্রিটেনের ইস্পাত শিল্পে প্রাণ ফেরানোর লক্ষ্যে কারখানাগুলির সম্ভাব্য ক্রেতাকে ঋণ দেওয়া ও সেখানে টাটাদের ব্যবসার ২৫% অংশীদারি হাতে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি আগেই দিয়েছে সে দেশের সরকার। একটি রিপোর্ট বলছে, টাটা স্টিলের লক্ষ্য, জুন শেষ হওয়ার আগেই পুরো বিক্রি প্রক্রিয়া সেরে ফেলা।
যদিও ক্রেতার বাছার এই পথ নিষ্কণ্টক নয় মোটেই। যার সব থেকে বড় কারণ সংস্থার প্রায় ১,৫০০ কোটি পাউন্ডের (প্রায় ১,৪৮,৫০০ কোটি টাকা) পেনশন প্রকল্প। লোকসানে চলা ব্যবসা কেনার পরে সেটিকে কী ভাবে ঘুরিয়ে দাঁড় করানো যাবে, সেই পরিকল্পনা করতে গিয়ে অনেকে ঠিক এই জায়গাতে এসেই হোঁচট খাচ্ছেন। যে-কারণে সম্ভাব্য কিছু ক্রেতা টাটাদের ব্রিটেনের ব্যবসা কেনার পথে অনেকটা এগিয়েও এই দায়বদ্ধতা কাঁধে নিতে দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পিছু হটছেন বলে শোনা গিয়েছে।
বিক্রি সংক্রান্ত বিষয়ের সঙ্গে জড়িত একটি সূত্র অবশ্য বলছে, এই বাধা পেরোতে পেনশন তহবিলের ট্রাস্টির (অছি পরিষদ) তরফে প্রস্তাব, সেটির পরিচালনা টাটাদের থেকে আলাদা করে নতুন প্রকল্প চালু হোক। প্রস্তাবে সায় রয়েছে ব্রিটিশ ব্যবসা, উদ্ভাবন ও দক্ষতা সংক্রান্ত দফতরেরও।
পরিকল্পনায় বলা হয়েছে, সে ক্ষেত্রে কর্মীদের সামনে দু’ধরনের সুযোগ রাখা হবে। সংস্থা পেনশনের অর্থ জোগানোর অবস্থায় না-থাকলে সুরক্ষাকবচ হিসেবে সরকারি যে-ব্যবস্থা রয়েছে, হয় তাঁরা সেখানে নাম লেখান, নয়তো যোগ দিন ওই নতুন পেনশন প্রকল্পে, যেখানে আর্থিক সুবিধা কিছুটা কমও হতে পারে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, এই পরিকল্পনা বাস্তবয়াতি করার লক্ষ্যে টাটারা কিছুটা তহবিল জোগাতে পারে। বাকি দায় বইতে সাহায্য মিলবে সরকারের তরফে। যদিও এই পরিকল্পনায় বিপুল ঝুঁকি ও বর্তমান পেনশন কাঠামো নষ্ট হওয়ার প্রশ্ন ওঠায় ব্রিটেনের কর্মী ও পেনশন দফতর তাতে বাধা দিচ্ছে বলে ইঙ্গিত মিলেছে।
টাটা স্টিলের মুখপাত্রের দাবি, সমাধান খোঁজার তাগিদে সরকার ও পেনশন প্রকল্পের অছি পরিষদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা চালাচ্ছেন তাঁরা।
দিনে ১০ লক্ষ পাউন্ড (প্রায় ৯ কোটি ৯০ লক্ষ টাকা) লোকসানের ধাক্কা সামলাতে না-পেরে মার্চেই টাটারা ব্রিটেন থেকে ব্যবসা গোটানোর কথা জানায়। প্রায় ১২ হাজার কর্মীর অন্ন জোগানো এই ব্যবসা কেনার জন্য দর হেঁকে আগ্রহপত্র জমা দেয় সাত সংস্থা। এর মধ্যে রয়েছে নিউকোর স্টিল, গ্রেবুল ক্যাপিটাল, এক্সক্যালিবার স্টিল, লিবার্টি হাউস, হেবেই আয়রন অ্যান্ড স্টিল ও ভারতের জেএসডব্লিউ স্টিল। তবে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, নিউকোর স্টিল ও হেবেই ইতিমধ্যেই পিছু হটেছে এবং জেএসডব্লিউ স্টিলও শেষ মুহূর্তে দর জমা দেয়নি। অন্য দিকে, এক্সক্যালিবার আবার ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ শিল্পপতি সঞ্জীব গুপ্তর লিবার্টি হাউসের সঙ্গে জোট বেঁধে এগোতে পারে বলে ইঙ্গিত। যদিও জানা গিয়েছে, চূড়ান্ত দর আলাদা ভাবেই দেওয়ার কথা ছিল দুই সংস্থার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy