Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
ট্রাম্প-মোদী সখ্য সত্ত্বেও ভারত-মার্কিন টানাপড়েন

গলাগলি বন্ধুত্বও বিদ্ধ শুল্কের শূলে

গত গ্রীষ্মেই মোদীর মার্কিন সফরকালে সারা বিশ্ব দেখেছে আমেরিকা-ভারত কূটনৈতিক সম্পর্কে দুই রাষ্ট্র নেতার জোটের বার্তা।

সংবাদ সংস্থা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০৩:২৫
Share: Save:

আন্তর্জাতিক রাজনীতির মঞ্চে নরেন্দ্র মোদী ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘গলাগলি’ বন্ধুত্বে বিঁধেছে শুল্কের কাঁটা। যাকে ঘিরে দু’দেশের বাণিজ্যে বাড়ছে টানাপড়েন।

ক’দিন আগেই হার্লে ডেভিডসনের মতো দামি দু’চাকার গাড়িতে ভারতের চাপানো আমদানি শুল্ক নিয়ে বেজায় চটেছিলেন মার্কিন রাষ্ট্রপতি ট্রাম্প। বলেছিলেন, এ আসলে মুক্ত বাণিজ্যের পথে দেওয়াল। এ বার আমেরিকার বিভিন্ন পণ্যের উপর শুল্ক কমাতে ভারতের উপর চাপ তৈরি করল মার্কিন কূটনীতিক ও শিল্পমহল। সরকারি সূত্রে খবর, তাদের দাবি এখনই বাণিজ্যের পথে এই বাধা না কমালে, বিরোধ আরও বাড়বে।

গত গ্রীষ্মেই মোদীর মার্কিন সফরকালে সারা বিশ্ব দেখেছে আমেরিকা-ভারত কূটনৈতিক সম্পর্কে দুই রাষ্ট্র নেতার জোটের বার্তা। বছর ঘোরেনি, সেই ব্যক্তিগত বোঝাপড়াই বিদ্ধ করের কাঁটায়। ওয়াশিংটনে মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধির (ইউএসটিআর) দফতর এ বিষয়ে মুখ খোলেনি। কিন্তু সূত্রের দাবি, অবাধ বাণিজ্যের নিয়ম মানার ক্ষেত্রে ভারতের ভাবমূর্তি মার্কিন প্রশাসনের কাছে মোটেই তেমন ভাল নয়।

মুখে কুলুপ এ দেশের বাণিজ্য মন্ত্রকেরও। তবে অর্থ মন্ত্রকের শীর্ষ কর্তাদের যুক্তি, দেশীয় শিল্পের স্বার্থেই শুল্ক চড়া রাখা। বহু দেশেই সেই নীতি চালু। বিশেষত নরেন্দ্র মোদীর মূল মন্ত্রই যেখানে মেক ইন ইন্ডিয়ার আওতায় দেশে উৎপাদন বাড়ানো। অনেকের আবার পাল্টা প্রশ্ন, ‘‘যেখানে আমেরিকা, চিনের মতো উন্নত অর্থনীতির দেশগুলিই বাণিজ্যে রক্ষণশীল নীতির পক্ষপাতী, সেখানে আমাদের দিকে আঙুল তোলা কেন?’’

উল্লেখ্য, বিদেশি মোটরসাইকেলে ভারত কিছু দিন আগে কিছুটা শুল্ক কমানোর পরে, মোদী ফোনে ট্রাম্পকে জানিয়েছিলেন সে কথা। কিন্তু তাতে গোসা কমেনি মার্কিন প্রেসিডেন্টের। বরং ভারত থেকে ‘বিশিষ্ট ভদ্রলোকের’ ফোন করেছিলেন বলে অসন্তোষ বুঝিয়ে দেন স্পষ্ট। অনেকের প্রশ্ন ছিল, দাভোসে মুক্ত বাণিজ্যের পথে দেওয়াল তোলা নিয়ে সরব হয়েছিলেন মোদী। এ কি তবে তার পাল্টা? এ বার সেই প্রশ্ন আরও প্রকট হয়েছে, মার্কিন কূটনীতিক ও শিল্পের শুল্ক কমানোর চাপাচাপিতে।

পাল্টা হিসেবে আমেরিকার বাজারে ভারতের দু’চাকাগুলির উপরে আমদানি শুল্ক বসানোর হুমকিও দিয়েছিলেন ট্রাম্প। ট্রাম্পের হুঁশিয়ারির প্রতিফলনই এ বার যেন মার্কিন বিদেশ দফতরের মুখপাত্রের গলায়। যেখানে তাঁর মন্তব্য, ‘‘শুল্কই হোক বা অন্যান্য সমস্যা, দু’পক্ষের মধ্যে বাণিজ্যিক বাধা কমানোর চেষ্টা করা ভারতের জন্য খুব জরুরি।’’

ওয়াশিংটনের আপত্তি

• ডব্লিউটিওর হিসেব, ২০১৬ সালে আমেরিকায় গড় আমদানি শুল্ক ছিল ৩.৪%। ভারতে ১৩.৫%

• ডিসেম্বরে মোবাইল, টিভির মতো বৈদ্যুতিন পণ্যে শুল্ক বাড়িয়েছে ভারত

• বাজেটে শুল্ক বেড়েছে গাড়ির যন্ত্রাংশ, সানগ্লাস-সহ ৪০টিরও বেশি পণ্যে

• হার্লে ডেভিডসনের মতো দামি বিদেশি দু’চাকাতেও চড়া কর

• তথ্যপ্রযুক্তির মতো ক্ষেত্রে তা ডব্লিউটিওর হারেরও বেশি

ভারতের যুক্তি

• দেশীয় শিল্পকে উন্নতির সুযোগ দেওয়াই লক্ষ্য

• জিডিপির এক তৃতীয়াংশ আসা উচিত উৎপাদন শিল্প থেকে

• কর্মসংস্থান বাড়ানো

• বিশ্বের বহু দেশেই চড়া আমদানি শুল্ক

• বাণিজ্যে দেওয়াল তোলার পথে হাঁটছে আমেরিকা, চিনের মতো দেশও

আমেরিকার চাপ

• আমদানি শুল্ক ছাঁটুক ভারত

• বাধা কমাক দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যে

• কর কম রাখলে ক্রেতার খরচ কমবে

• অ্যাপলের মতো সংস্থা বিষয়টি ডব্লিউটিওতে তোলার কথা ভাবছে

• অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলিকে শুল্ক পর্যালোচনার আর্জি ফোর্ডের

• মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের হুমকি, আমেরিকাও এ বার কর বসাবে ভারত থেকে আমদানি করা দু’চাকায়

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

tariffs reduce Imported Products US India
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE