আপনি সঞ্চয়ী হোন বা না-হোন, বেসরকারি এবং রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থায় চাকরি করলে কর্মী প্রভিডেন্ট ফান্ডে (ইপিএফ) কিছুটা পুঁজি আপনা থেকেই জমবে। কারণ সংস্থাগুলি চাকরির প্রথম দিন থেকে ওই খাতে প্রতি মাসে বেতনের একটা অংশ কাটতে থাকে। সেই তহবিলে মাসে একই অঙ্কের টাকা জমা দেন নিয়োগকারীও। যদিও নিয়োগকারীর ভাগের টাকার একটা অংশ আবার জমা হয় পিএফের পেনশন তহবিলে। আর বাকি যা জমে সেটা অবসরের পরে হাতে পান কর্মী।
এ তো গেল পিএফ জমা হয়ে তহবিল তৈরির কথা। এখানে আমরা আলোচনা করব সেই তহবিল থেকে আগাম তোলার সুবিধা নিয়ে। তেমন দরকারে অবসরের আগেই পিএফে জমার একটা অংশ অগ্রিম নেওয়া যায়। যা ফেরানোর ঝক্কিও থাকে না। কারণ, চাকরি শেষে ওই অংশটা কেটেই বাকি টাকা সুদ-সহ ফেরান পিএফ কর্তৃপক্ষ।
অবশ্য সব প্রয়োজনেই যে পিএফ ভাঙাতে পারবেন, এমন নয়। শুধুমাত্র নির্দিষ্ট কিছু কারণে আগাম দেওয়া হয়। কী জন্য দেওয়া হচ্ছে, তার উপর নির্ভর করে টাকার পরিমাণ, শর্ত ইত্যাদি। চলুন চোখ রাখি সে সবেই।
জমি-ফ্ল্যাট-বাড়ি
অগ্রিম নেওয়া যাবে—
জমি কেনার জন্য
বাড়ি বা ফ্ল্যাট কেনার জন্য
বাড়ি বা ফ্ল্যাট তৈরি করতে
তা সারাতে বা আরও বাড়াতে
গৃহঋণের মাসিক কিস্তি মেটাতে
ডাউনপেমেন্টের টাকা মেটাতে
শর্ত
যখন আগাম চাওয়া হচ্ছে, তার আগে পিএফের আওতায় থাকতে হবে কমপক্ষে ৫ বছর।
পরিমাণ
পিএফ তহবিলে মোট যত টাকা জমেছে এবং জমি-বাড়ি-ফ্ল্যাটের দাম— এই দু’য়ের মধ্যে যেটা কম, ততটা। তবে সেই অগ্রিম ৩৬ মাসের মূল বেতন এবং মহার্ঘ ভাতার বেশি হবে না। সম্প্রতি বাড়ি বা ফ্ল্যাট তৈরির ক্ষেত্রে নতুন একটি প্রকল্পও এনেছে পিএফ দফতর। যার সুবিধা নিতে যে যেখানে চাকরি করছেন সেখানকার অন্তত ১০ জন পিএফ সদস্য-কর্মীকে নিয়ে একটি সমবায় সমিতি (হাউসিং কোঅপারেটিভ) গঠন করতে হবে। এই প্রকল্পে ডাউনপেমেন্ট ও মাসিক কিস্তি, দুই-ই মেটানো যাবে পিএফ ভাঙিয়ে।
বিয়ে
অগ্রিম নেওয়া যাবে—
• নিজের বিয়ের জন্য
•বোন বা ভাইয়ের বিয়ের জন্য
•ছেলে-মেয়ের বিয়ে দিতে
শর্ত
আগাম চাওয়ার সময়ে পিএফের আওতায় সংশ্লিষ্ট কর্মীকে থাকতে হবে কমপক্ষে ৭ বছর।
পরিমাণ
তহবিলে নিজের বেতনের অংশ হিসেবে (নিয়োগকারীর জমা করা অংশ নয়) যতটা জমা হয়েছে,
তার ৫০ শতাংশ পর্যন্ত।
চিকিৎসা
অগ্রিম নেওয়া যাবে—
•নিজের জন্য
•স্ত্রী বা স্বামীর জন্য
•বাবা-মায়ের চিকিৎসায়
•বোন বা ভাইয়ের জন্য
শর্ত
পিএফের আওতায় থাকার ন্যূনতম মেয়াদ এ ক্ষেত্রে নেই। তবে চিকিৎসা খরচের ক্ষেত্রে এমপ্লয়িজ স্টেট ইনশিওরেন্সের (ইএসআই) সুবিধা পেলে পিএফ থেকে আগাম টাকা পাওয়া যাবে না।
পরিমাণ
ছ’মাসের মূল বেতন ও মহার্ঘ ভাতা আর পিএফ তহবিলে সদস্যের নিজের জমানো অংশ— এই দু’য়ের মধ্যে যেটা কম।
পেনশন
অগ্রিম নেওয়া যাবে—
•কোনও পিএফ সদস্য যদি বরিষ্ঠ পেনশন প্রকল্পে টাকা জমা করতে চান, সেই টাকা
শর্ত
৫৫ বছর বয়স পর্যন্ত পিএফের আওতায় থাকতে হবে।
পরিমাণ
সর্বোচ্চ ক্ষেত্রে পিএফ অ্যাকাউন্টে জমা হওয়া মোট টাকার ৯০%।
কাজ হারানো
অগ্রিম নেওয়া যাবে—
•কারখানা বন্ধ হলে
•চাকরি থেকে ছাঁটাই হলে
•সংস্থা গুটিয়ে গেলে
শর্ত
বিভিন্ন পরিস্থিতিতে ১৫ দিন থেকে ৫ বছর পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট কারখানা বা সংস্থা বন্ধ থাকতে হবে।
পরিমাণ
এ ক্ষেত্রে আলাদা আলাদা পরিস্থিতিতে আগাম কত পাওয়া যাবে, তা বলা আছে পিএফ আইনে।
তবে পরে কারখানা বা সংস্থা খুললে কিংবা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি চাকরি পেলে, ৩৬টি কিস্তিতে অগ্রিমের টাকা ফের পিএফে জমা করে দিতে পারবেন।
ধার শোধ
অগ্রিম নেওয়া যাবে—
•ব্যাঙ্কের ঋণ শোধ
•রাজ্য সরকারের কোনও প্রতিষ্ঠান, নথিভুক্ত সমবায় সমিতি, স্টেট হাউসিং বোর্ড ইত্যাদি আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে নেওয়া ঋণ শোধে
শর্ত
অন্তত ১০ বছর পিএফ সদস্য থাকা।
পরিমাণ
৩৬ মাসের মূল বেতন, কর্মী এবং নিয়োগকারীর পুরো অংশ আর বকেয়া ঋণের পরিমাণ— তিনটির মধ্যে সব থেকে কম যেটা, ততটাই।
প্রাকৃতিক বিপর্যয়
অগ্রিম নেওয়া যাবে—
•ঝড়, ভূমিকম্প, বন্যা ইত্যাদি কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হলে
•বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার কারণে কারখানা বন্ধ হওয়ার দরুন চাকরি হারালে
শর্ত
পিএফ সদস্য হতে হবে অন্তত ৭বছর।
পরিমাণ
তহবিলে জমা মোট টাকার ৫০%।
শারীরিক প্রতিবন্ধকতা
অগ্রিম নেওয়া যাবে—
•হুইল চেয়ার, ক্রাচ ইত্যাদি কিনতে
শর্ত
পিএফ সদস্য হওয়ার ন্যূনতম মেয়াদ নেই। তবে সুবিধা মিলবে এক বারই
পরিমাণ
মূল বেতন ও মহার্ঘ ভাতা, নিয়োগকারীর জমা করা অংশ এবং সরঞ্জামগুলির খরচ— এই তিনের মধ্যে যেটা কম হবে, ততটাই
মাথায় রাখুন
• ইপিএফের সদস্যরা অবসর নেওয়ার এক বছর আগে তহবিলে জমা মোট টাকার ৯০% কোনও কারণ না-দেখিয়ে তুলতে পারেন।
• সম্প্রতি আগাম নেওয়ার নিয়ম কিছুটা শিথিল হয়েছে। যে-কারণ দেখিয়ে টাকা তোলা হচ্ছে, তার প্রমাণ হিসেবে নথি লাগবে না। নিজেকেই শুধু তথ্য দিতে হবে।
• বাড়ি কেনা, চিকিৎসা, বিয়ে ইত্যাদিতে একবারই অগ্রিম মিলবে।
• তবে নিজের বিয়ের জন্য অগ্রিম নিলে পরে বোন বা মেয়ের বিয়ের জন্যও ফের নিতে অসুবিধা নেই।
ভুলবেন না
পিএফ অবসরের পুঁজি। এখানে আগাম তোলার সুবিধা আছে ঠিকই। কিন্তু তাতে হাত পড়লে, খালি হয় ভবিষ্যতের সঞ্চয়। তাই ভেবেচিন্তে সেখানে হাত দেওয়া জরুরি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy