Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

অভিযোগ সচিবের দিকেই রাজ্য তথ্যপ্রযুক্তি দফতরের সঙ্গে কাজিয়া, ইস্তফা ওয়েবেল-কর্তার

সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর তথ্যপ্রযুক্তি দফতরের সচিব তাল্লিন কুমারের বিরুদ্ধে জাতীয় ও রাজ্য সংখ্যালঘু কমিশনের কাছে অভিযোগ জানিয়েছেন তথ্যপ্রযুক্তি দফতরেরই আওতায় থাকা সংস্থা ওয়েবেলের ম্যানেজিং ডিরেক্টর উপেন্দ্র জিৎ সিংহ।

গার্গী গুহঠাকুরত
শেষ আপডেট: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০৩:৩২
Share: Save:

রাজ্যে তথ্যপ্রযুক্তি দফতরের অন্দরমহলের কাজিয়া গড়াল সংখ্যালঘু কমিশন পর্যন্ত।

সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর তথ্যপ্রযুক্তি দফতরের সচিব তাল্লিন কুমারের বিরুদ্ধে জাতীয় ও রাজ্য সংখ্যালঘু কমিশনের কাছে অভিযোগ জানিয়েছেন তথ্যপ্রযুক্তি দফতরেরই আওতায় থাকা সংস্থা ওয়েবেলের ম্যানেজিং ডিরেক্টর উপেন্দ্র জিৎ সিংহ। দৈনন্দিন দুর্ব্যবহার ও মানসিক চাপ সৃষ্টি করার অভিযোগ করেছেন সিংহ। কমিশনের পাশাপাশি মুখ্যসচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায়কেও বিষয়টি জানানো হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর।

তথ্যপ্রযুক্তি সচিব বনাম ওয়েবেল প্রধানের এই লড়াই গত বছরের নভেম্বর মাস থেকেই শুরু হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, গোড়া থেকেই সচিব ও ওয়েবেল এমডি-র সম্পর্ক মধুর ছিল না। তথ্যপ্রযুক্তি দফতরের সচিব হিসেবে গত নভেম্বর মাসে নিযুক্ত হন তাল্লিন কুমার। এ দিকে, ২০১৫ সালের এপ্রিলে কপোর্রেট দুনিয়ার চাকরি ছেড়ে ওয়েবেল-এর ম্যানেজিং ডিরেক্টর হিসেবে যোগ দেন সিংহ। তিন বছরের চুক্তি অনুযায়ী ২০১৮ পর্যন্ত তাঁর চাকরির মেয়াদ। কিন্তু অভিযোগ, সচিবের নিত্যদিনের দুর্ব্যবহারের জেরে এগারো মাসের মাথাতেই ইস্তফা দিতে বাধ্য হয়েছেন ওয়েবেল-কর্তা।

সরকারি সূত্রের খবর, গত শুক্রবার সিংহ ইস্তফা দেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, সেই ইস্তফা নিয়েও জোরদার নাটক চলে দিনভর। চুক্তির নিয়ম মেনে ইস্তফা দেওয়ার পরে তিন মাস ‘নোটিস পিরিয়ড’-এ কাজ করে যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন তিনি। কিন্তু তা খারিজ করে দিয়ে তাঁকে পত্রপাঠ বিদায় নিতে বলেন সচিব। পদত্যাগপত্র জমা নিতে তড়িঘড়ি ডেকে পাঠানো হয় ওয়েবেল চেয়ারম্যান হীরক সেনগুপ্তকে। হীরকবাবু অবশ্য বলেন, ‘‘এই ইস্তফায় কোনও অস্বাভাবিকতা নেই। পরিচালন পর্ষদে আলোচনা করেই পদত্যাগপত্র গ্রহণ করা হয়েছে।’’ বিষয়টি নিয়ে মুখ খোলেননি কুমার। ফোন ধরেননি তিনি। এসএমএস করা হলেও তার উত্তর মেলেনি। বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে চাননি সিংহও।

প্রসঙ্গত, তৃণমূল সরকারের আমলে তথ্যপ্রযুক্তি দফতরে ঘন ঘন সচিব বদল হয়েছে। সব মিলিয়ে গত সাড়ে চার বছরে ছ’জন সচিব এই দফতরে এসেছেন। মন্ত্রীও বদল হয়েছে একবার। এ নিয়ে যথেষ্ট ক্ষুব্ধ তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পমহল। তাদের অভিযোগ, এক সচিবকে সমস্যার কথা জানাতে না-জানাতেই আর এক সচিব আসার সময় হয়ে যায়। সে ক্ষেত্রে কাজের ধারাবাহিকতা নষ্ট হয়। অন্য দিকে, ওয়েবেল-এর ঘন ঘন মাথা বদলেও একই সমস্যা হতে পারে বলে আশঙ্কা করছে তথ্যপ্রযুক্তি মহল। ওয়েবেল-এর সমস্যার এমনিতেই শেষ নেই। খাতায় -কলমে খোলা থাকলেও অধিকাংশ শাখা সংস্থায় কাজ নেই। ফলে বাড়তি কর্মীদের অন্যান্য জায়গায় কাজে লাগানো নিয়ে কিছুদিন পর পরই সমস্যা তৈরি হয়।

১৯৭৪ সালে ওয়েবেলের গোড়াপত্তন। উদ্দেশ্য ‘ইলেকট্রনিক্স’ বা বৈদ্যুতিন শিল্পের উন্নয়ন। এর পরে ২০০১ সালে তথ্যপ্রযুক্তি দফতরের আওতায় আসে তারা। কিন্তু প্রতিযোগিতার বাজারে ক্রমশ অস্তিত্বের সঙ্কটে পড়ে যায় ওয়েবেল। বিভিন্ন বৈদ্যুতিন যন্ত্র উত্‌পাদন করলেও সঠিক বিপণনের অভাবে মার খেতে শুরু করে ব্যবসা। ২০০৩ সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকার সংস্থার পুনর্গঠন প্রক্রিয়া শুরু করে। আন্তর্জাতিক উন্নয়ন খাতে ঋণদানকারী ব্রিটিশ সংস্থা ডি এফ আই ডি-র টাকা নিয়ে সেই কাজ শুরু হয়। রাজ্যের কাজ ব্যবসা করা নয়। এই নীতি মেনেই ২৬টি সংস্থাকে পুনর্গঠনের জন্য চিহ্নিত করা হয়। এই তালিকায় ওয়েবেল-এর সাতটি শাখা সংস্থাও অন্তর্ভুক্ত হয়।

মূলত ছ’টি ক্ষেত্রে কাজ করে ওয়েবেল। রাজ্যের তথ্যপ্রযুক্তি ও তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর প্রকল্পগুলিকে সহায়তা, বিভিন্ন সরকারি দফতরকে অনলাইন ব্যবস্থায় যুক্ত করা, কেন্দ্রের অনুদানে ই-গভর্ন্যান্স সংক্রান্ত পরিকাঠামো তৈরির কাজ, তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে আরও বেশি মানবসম্পদ তৈরিতে সহায়তা, রাজ্য জুড়ে ছোট ও মাঝারি তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার জন্য পরিকাঠামো তৈরি ও সংশ্লিষ্ট প্রকল্প রূপায়ণ করার দিকেই ওয়েবেলের নজর দেওয়ার কথা।

সরকারি আধিকারিকদের একাংশের দাবি, সহায়কের ভূমিকার তুলনায় ব্যবসা আনার দিকেই বেশি নজর দিচ্ছিলেন সদ্য পদত্যাগ করা ওয়েবেল-কর্তা সিংহ। ব্যবসা দ্বিগুণ করলেও সহায়কের ভূমিকায় তিনি ততটা দড় ছিলেন না বলে দাবি সংশ্লিষ্ট সূত্রের। তবে রাজ্যের একটি দফতরের মধ্যে এই চাপান-উতোরে তথ্যপ্রযুক্তি শিল্প মার খাচ্ছে বলেই অভিযোগ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE