নন্দরাম মার্কেটে আগুন। ফাইল চিত্র
নন্দরাম মার্কেট: এক দশক আগের বিভীষিকাময় চেহারাটা সত্যিটা কতটা পাল্টেছে, সন্দেহ আছে। দমকল সূত্রের খবর, এখনও ‘নো অবজেকশন’ শংসাপত্র দেওয়া যায়নি বাড়িটিকে।
বারোতলা বহুতলটির পিছনে বেরোনোর একটি সিঁড়ি করার কথা বলেছিল দমকল। তা থমকে আছে চারতলা অবধি উঠেই। একটা সময়ে প্রশাসনের একাংশ বাড়িটি ভেঙে দিতে চাইলেও স্থানীয় ব্যবসায়ীদের চাপে তা করা যায়নি। ২০০৮-এর অগ্নিকাণ্ডের ৮ বছর বাদে ২০১৬-য় বহুতলটির দোকানগুলিকে ‘ট্রেড লাইসেন্স’ দিয়েছেন পুর কর্তৃপক্ষ। কিন্তু দমকলের ছাড়পত্র মেলেনি। বহুতলের মালিক মানিক শেঠিয়া বলেন, ‘‘কিছু কাজ শেষ পর্যায়ে, এর পরেই ছাড়পত্র মিলতে সমস্যা হবে না।’’ বিভিন্ন তলার ব্যবসায়ীরা অনেকেই বিপদঘণ্টি, স্প্রিঙ্কলার বসিয়েছেন। তবে বাড়িটি বিপন্মুক্ত নয়। দমকলের নির্দেশ মতো মাটির নীচের জলাধার বসানো যায়নি। তবে বহুতলের ছাদে পাম্পে জলের সংস্থান হয়েছে। সেখান থেকে ‘ডাউন কামার’ পদ্ধতিতে জল উপর থেকে নীচে পাম্প করে নামানোর বন্দোবস্ত। এই কাজটা এখনও শেষ হয়নি। দমকলের এক কর্তার কথায়, ‘‘আসলে বড়বাজার আছে বড়বাজারেই।’’
মল্লিকঘাট ফুলবাজার: এক দশক আগের বিধ্বংসী আগুনের স্মৃতি উস্কে দিয়েছিল ফুলবাজারের পাশেই সাম্প্রতিক আর্মেনিয়ান ঘাটের অয়্যারহাউজের অগ্নিকাণ্ড। দেশের অন্যতম প্রধান ফুলবাজারটি এখনও কার্যত জতুগৃহ। গঙ্গার ঘাটের চাতালে টিনের দোকানে ভরপুর বাজারটিই আদতে অস্থায়ী কাঠামো। বাজারটি ভেঙে তিনতলা বহুতল তৈরির চেষ্টা সফল হয়নি। ব্যবসায়ীরাই রাজি হননি। দমকলের এক কর্তার কথায়, ‘‘বারবার বলা সত্ত্বেও ফুলবাজারে বিপদ রুখতে কোনও ব্যবস্থাই নেওয়া হয়নি।’’ ওই কর্তার মতে, বাজারটি ঘিরে ‘রিংমেন হাইড্র্যান্ট’ গড়ে তোলা সম্ভব ছিল। বাজারটি ঘিরে হাইড্র্যান্টের নেটওয়ার্ক এবং জল দেওয়ার পাইপ তাতে বসানো থাকত। কিন্তু তা হয়নি। বিপদে আগুন নেভাতে পাশেই গঙ্গার জল ব্যবহারের পরিকাঠামোও গড়ে ওঠেনি।
নিউ মার্কেট: পাশেই পার্কোম্যাটের ভূগর্ভস্থ বাজারে আগুন নেভানোর ব্যবস্থা ঠিকঠাক। নিউ মার্কেটের নতুন বাজারেও জলাধারের ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু দমকলকর্তাদের দাবি, হগ সাহেবের শতাব্দী-প্রাচীন সাবেক বাজারটির আগুন নেভানোর ব্যবস্থা কার্যত নেই বললেই চলে। দমকলের এক কর্তা বলেন, ‘‘নিউ মার্কেটের জন্য বেশ কিছু সুপারিশ আমরা করেছি। কিন্তু সেটা কে কবে কাজে লাগাবেন, তা বলা কঠিন। পুলিশ, পুরসভার সহযোগিতা ছাড়া নিউ মার্কেটকে বিপন্মুক্ত করা কঠিন।’’ এই পরিস্থিতিতে গত কয়েক বছরে বিক্ষিপ্ত আগুনের ঘটনা বারবার ঘটেছে নিউ মার্কেটে। তবে আশপাশে জলের জোগান থাকাটা খানিক বাঁচোয়া বলে মনে করেন দমকলকর্তারা।
হাতিবাগান বাজার: বছর ছয় আগের বিধ্বংসী আগুনের স্মৃতি এখনও ফিকে হয়নি। নানা জটে জেরবার বাজারটির সঙ্কট কাটেনি। দমকল সূত্রের খবর, হাতিবাগান বাজারে আজও জলাধার নেই। কিন্তু অরবিন্দ সরণির দিকের গভীর নলকূপ কিছুটা ভরসা। কিছু দিন আগেই রাজ্য বিধানসভার স্ট্যান্ডিং কমিটির সঙ্গে পরিদর্শনে গিয়েছিলেন দমকলকর্তারা। তখন মালুম হয়েছে বাজারটির মালিক বা বাড়িওয়ালার সঙ্গে ব্যবসায়ীদের একাংশের বেজায় গোলমাল। ফলে বাজারে অনেক জায়গাতেই দোকানে দোকানে স্প্রিঙ্কলার, ফায়ার অ্যালার্ম বসানো নিয়েও জটিলতা আছে।
সূর্য সেন স্ট্রিট বাজার: পাঁচ বছর আগে কলেজ স্ট্রিট এলাকার এই বাজারটিতে ১৯ জন পুড়ে মারা গিয়েছিলেন। এখনও পর্যন্ত দমকলের ছাড়পত্র মেলেনি। দমকলের এক কর্তা অবশ্য বলেন, বাজারটিতে বিপদঘণ্টি, জল তোলার বন্দোবস্ত, আগুন নেভানোর যন্ত্র, স্প্রিঙ্কলার ইত্যাদির ব্যবস্থা হয়েছে। সব কিছু চালু হওয়ার চূড়ান্ত পর্যায়ে। সিইএসসি-র সাহায্যে বৈদ্যুতিক ব্যবস্থাও ঢেলে সাজা হয়েছে।
তিনি বলেন: ‘‘আসল মুশকিল আসান কিন্তু লোকের সচেতনতায়! জোড়াতালি দিয়ে বেশি দিন চালানো সম্ভব নয়। বিপদ রুখতে কিছু ব্যবস্থা নিতে হবে, এটা মানুষকেই বুঝতে হবে। ‘সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ’-এর মতো আগুনের বিপদেও সচেতনতা-অভিযান গড়ে উঠলে কাজ হয়,’’ বলছেন দমকলের ডিজি জগমোহন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy