Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
লেক গার্ডেন্স

উড়ালপুলে দেহ, পুলিশ জানল দেড় ঘণ্টায়

ভোরে মোটরবাইক দুর্ঘটনা। তার পরে প্রায় ঘণ্টা দেড়েক লেক গার্ডেন্স উড়ালপুলে পড়ে রইলেন আহত যুবক। অথচ ঘটনাস্থলের কাছেই রয়েছে বেশ কয়েকটি পুলিশ কিয়স্ক। কিন্তু ওই যুবককে পড়ে থাকতে দেখলেন না কোনও পুলিশকর্মীই। শেষ পর্যন্ত সকালে স্থানীয়দের থেকে পুলিশের কানে যখন খবর পৌঁছল, ততক্ষণে মৃত্যু হয়েছে ওই যুবকের। এর পরে পুলিশ গিয়ে দেহটি উদ্ধার করে। সোমবার ভোরের এই ঘটনা বেপরোয়া বাইক-নিয়ন্ত্রণে কলকাতা পুলিশের ভূমিকার পাশাপাশি তাদের অস্তিত্ব নিয়েও প্রশ্ন তুলে দিল।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৩ ডিসেম্বর ২০১৪ ০১:৫৯
Share: Save:

ভোরে মোটরবাইক দুর্ঘটনা। তার পরে প্রায় ঘণ্টা দেড়েক লেক গার্ডেন্স উড়ালপুলে পড়ে রইলেন আহত যুবক। অথচ ঘটনাস্থলের কাছেই রয়েছে বেশ কয়েকটি পুলিশ কিয়স্ক। কিন্তু ওই যুবককে পড়ে থাকতে দেখলেন না কোনও পুলিশকর্মীই। শেষ পর্যন্ত সকালে স্থানীয়দের থেকে পুলিশের কানে যখন খবর পৌঁছল, ততক্ষণে মৃত্যু হয়েছে ওই যুবকের। এর পরে পুলিশ গিয়ে দেহটি উদ্ধার করে। সোমবার ভোরের এই ঘটনা বেপরোয়া বাইক-নিয়ন্ত্রণে কলকাতা পুলিশের ভূমিকার পাশাপাশি তাদের অস্তিত্ব নিয়েও প্রশ্ন তুলে দিল।

এর আগে ১৩ নভেম্বর শেষ রাতে ভাড়া নিয়ে বচসার জেরে এক যাত্রীকে ক্ষুর মেরে পালান এক ট্যাক্সিচালক। পরে মহাত্মা গাঁধী মেট্রো স্টেশনের সামনে থেকে বিশাল আনন্দ নামে ধানবাদের হিল কলোনির বাসিন্দা ওই যুবককে আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। সেই ঘটনাতেও পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। রাতে পুলিশি টহলদারি এবং মোড়ে মোড়ে সিসিটিভি থাকা সত্ত্বেও তাঁকে উদ্ধার করতে পারেননি কোনও পুলিশকর্মী। তার দেড় মাস পরে লেক গার্ডেন্স উড়ালপুলের ঘটনা ফের উস্কে দিল সেই স্মৃতিকেই।

পুলিশ জানিয়েছে, মৃতের নাম শচীন হেলা (১৯)। বাড়ি গড়িয়াহাটের গড়চা ফার্স্ট লেনে। সোমবার সকালে স্থানীয়েরাই উড়ালপুলের উপরে তাঁকে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছন লালবাজারের গোয়েন্দারা। একটু দূরে পড়ে ছিল একটি হেলমেট ও মোবাইল। ঘটনাস্থলে রাস্তায় ও রেলিংয়ে রক্তের দাগও ছিল। পুলিশ জানায়, যুবকের গলায় আঘাতের চিহ্নও মিলেছে। হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা ওই যুবককে মৃত ঘোষণা করেন।

তদন্তে পুলিশ জানতে পারে, রবিবার দুপুর থেকে বন্ধুদের সঙ্গেই ছিলেন শচীন। পাঁচ জন বন্ধুর সঙ্গে ছিলেন এক তরুণীও। পুলিশ পরে ওই তরুণীর সঙ্গে কথা বলে জানতে পেরেছে, রাতেও তাঁরা মোটরবাইকে ঘুরছিলেন। মদ্যপানও করেছিলেন বলে জেনেছে পুলিশ। ভোরে উড়ালপুল দিয়ে ফেরার সময়ে আচমকা নিয়ন্ত্রণ হারায় মোটরবাইকটি। বাইকের পিছন থেকে পড়ে গিয়ে রাস্তার পাশের রেলিংয়ে ধাক্কা খান শচীন। তখনই তাঁর গলায় আঘাত লাগে। আহত শচীনকে ফেলে রেখে পালান সকলে। সেখানে পড়ে থেকে পরে মৃত্যু হয় শচীনের। আহত তরুণীকে লেক থানা এলাকার একটি হাসপাতালে ভর্তি করে দিয়ে পালিয়ে যান অন্যেরা। পুলিশ জানায়, শচীন শনিবার থেকে বাড়ি না ফিরলেও তার পরিজনেরা খোঁজ করেননি। থানায় অভিযোগও দায়ের করেননি। শচীনের বন্ধুদের খোঁজে তল্লাশি শুরু হয়েছে। বাড়ির লোকজনকেও জিজ্ঞাসা করা হচ্ছে।

উড়ালপুলের উপরে রয়েছে পুলিশ পিকেট। তা সত্ত্বেও পুলিশ কেন ওই যুবককে দেখল না? যদিও ডেপুটি কমিশনার (দক্ষিণ) মুরলীধর শর্মার বক্তব্য, “সকাল পৌনে সাতটা নাগাদ ঘটনাটি ঘটেছে। ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি। সিসিটিভি অল্প কিছুটা দূরে থাকায় সঙ্গে সঙ্গে জানা যায়নি।” কিন্তু স্থানীয় থানার এক পুলিশকর্তার মতে, দুর্ঘটনাটি ঘটে পৌনে ছ’টা নাগাদ। তবে কি নিজেদের বয়ানেই অসঙ্গতি রয়েছে পুলিশের? নাকি নিজেদের দোষ ঢাকতে আলাদা আলাদা বক্তব্য বলছেন বিভিন্ন পুলিশকর্তা? উত্তর মেলেনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

lake gardens flyover accident sachin hela
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE