এমনই হাল রাস্তার।
রোগী নিয়ে দ্রুত গতিতে অ্যাম্বুল্যান্স চালাচ্ছিলেন দীপক রায়। সামনেই যে এত বড় গর্ত আছে বুঝতে পারেননি। চাকা পড়তেই গাড়ি লাফিয়ে উঠল। কোনওক্রমে সামলে নিলেন তিনি। মফস্সলের কোনও রাস্তা নয়, এ অবস্থা কলকাতা পুরসভার ১০৮ নম্বর ওয়ার্ডে ইএম বাইপাসের রুবি মোড়ের কাছে আনন্দপুর মেন রোডের।
শুধু দীপকবাবুই নন, এই এলাকায় রোগী নিয়ে যাওয়ার সময়ে অনেক গাড়িরই এমন অভিজ্ঞতা হয়। ইএম বাইপাসের গুরুত্বপূর্ণ অংশ রুবি মোড়। কামালগাজির দিক থেকে এলে এই মোড়ের বাঁদিকে রাসবিহারী কানেক্টর। ডান দিকে আনন্দপুর মেন রোড। বাসিন্দাদের অভিযোগ, এখানে বেশ কয়েকটি হাসপাতাল থাকা সত্ত্বেও রাস্তার বেহাল অবস্থা। বেশ কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হোটেল, কয়েকটি সংস্থার অফিসও রয়েছে।
ভাঙাচোরা, এবড়ো-খেবড়ো আনন্দপুর মেন রোডে পিচ উঠে গিয়েছে। গাড়িতে এমন ঝাঁকুনি হয় যে সুস্থ যাত্রীই অসুস্থ হয়ে পড়েন। বাস, মিনিবাস, রিকশা, অটো, গাড়ি সবই এই রাস্তা দিয়ে চলে। ফুটপাথ নেই। রাস্তার ধারেই হকাররা পসরা সাজিয়ে বসেন। রাস্তার উপরেই বসে সব্জি বাজার। সন্ধ্যায় বসে মাছ বাজার। ভিড়ের জন্য চলাচলে খুবই সমস্যা হয়। যাত্রী নিয়ে বিপজ্জনক ভাবে মোটরভ্যানও চলে বলে অভিযোগ। প্রায়ই ছোটখাটো দুর্ঘটনা ঘটে। সম্প্রতি পাসপোর্ট অফিসের সামনে দু’টি বাসের সংঘর্ষে আহত হন ৩৬ জন বাসযাত্রী। অভিযোগ, এর পরেও প্রশাসনের টনক নড়েনি।
রাস্তায় বসে বাজার।
আনন্দপুর এলাকার বাসিন্দা করবী বিশ্বাসের অভিযোগ, “রোজ এই রাস্তা দিয়ে ছেলেকে স্কুলে নিয়ে যেতে নাজেহাল অবস্থা হয়। ফুটপাথ জুড়ে দোকান থাকায় হাঁটার উপায় নেই। রাস্তায় ঘাড়ের উপর দিয়ে গাড়ি চলে যায়।” আর এক বাসিন্দা ময়ূখ পারেখ বলেন, “অফিস যেতে গিয়ে এক দিন পায়ের পাতার উপর দিয়ে ভ্যানরিকশার চাকা চলে গিয়েছিল। আঙুলের হাড় ভেঙে শয্যাশায়ী ছিলাম।”
এখানে বেশ কিছু হাসপাতাল এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থাকায় এলাকাটি ‘নো হর্ন জোন’। অভিযোগ, সেই নিষেধাজ্ঞাকে অবজ্ঞা করে হর্ন বাজানোর প্রতিযোগিতা চলে। স্থানীয় এক আবাসনের বাসিন্দা শর্মিলা গুহ জানান, রুবির মোড় থেকেই ধুলো এড়াতে নাকে রুমাল চাপা দিতে হয়। এই এলাকার ভিতরের রাস্তাগুলির অবস্থা একই রকম। আনন্দপুর থানার সামনে রাস্তাটিও খুবই ভাঙাচোরা। বর্ষাকালে জল জমে ভয়াবহ অবস্থা হয়।
পুরসভার মেয়র পারিষদ (রাস্তা) সুশান্তকুমার ঘোষ বলেন, “রাস্তাটি কেএমডিএ-র। এ বিষয়ে আমাদের কিছু করার নেই। আগেও হকাররা রাস্তায় বসতেন। সেটা কিছুটা আটকানো গিয়েছে। কী ভাবে আরও নিয়ন্ত্রণ করা যায় তা খতিয়ে দেখব।” হর্ন বাজানোর প্রসঙ্গে কলকাতা পুলিশের ডিসি (ট্রাফিক) দিলীপ আদক বলেন, “সবার আগে চালকদের সজাগ হতে হবে। হাসপাতাল সংলগ্ন থানাগুলিকে ব্যবস্থা নিতে বলেছি।”
কেএমডিএ সূত্রের খবর, ওই রাস্তা কেএমডিএ-র এরিয়া ডেভেলপমেন্ট অথরিটির অন্তর্গত। পুরসভা, মেট্রো এবং একটি বেসরকারি সংস্থার কাজের জন্য খোঁড়াখুঁড়ি হওয়ায় রাস্তার এই দশা। পুরসভা এবং সংস্থাগুলির কাছে রাস্তা সারাইয়ের জন্য নির্দিষ্ট অর্থ চাওয়া হয়েছিল। তাদের টালবাহানার জন্য এই দেরি। সম্প্রতি পুরসভা রাজি হয়েছে। ভোটপর্ব মিটলে খুব শীঘ্রই ওই রাস্তা মেরামতির কাজ শুরু হবে। কেএমডিএ কর্তৃপক্ষ সূত্রে আশ্বাস, বাকি সংস্থাগুলি অর্থ দিতে দেরি করলেও কাজ আর আটকে থাকবে না।
ছবি: শুভাশিস ভট্টাচার্য।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy