Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

গাড়ি চাপা-কাণ্ডে নেতার বিরুদ্ধে নরম ধারাই

দু’টি ঘটনাই বেপরোয়া ভাবে গাড়ি চালানোর। দু’টিতেই গাড়ির চাকায় পিষে মারা গিয়েছেন মানুষ। ২৯ দিনের ব্যবধানে ঘটা দু’টি ঘটনায় ফারাক শুধু লালবাজারের আচরণে।

কণিষ্ক মজুমদার

কণিষ্ক মজুমদার

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০২:৩২
Share: Save:

দু’টি ঘটনাই বেপরোয়া ভাবে গাড়ি চালানোর। দু’টিতেই গাড়ির চাকায় পিষে মারা গিয়েছেন মানুষ। ২৯ দিনের ব্যবধানে ঘটা দু’টি ঘটনায় ফারাক শুধু লালবাজারের আচরণে।

১৩ জানুয়ারি রেড রোডে কুচকাওয়াজের মহড়া চলার সময় বায়ুসেনার অফিসার অভিমন্যু গৌড়কে পিষে দিয়েছিলেন তৃণমূল নেতা মহম্মদ সোহরাবের ছেলে সাম্বিয়া সোহরাব। সেই ঘটনায় খুনের মামলা রুজু করে সাম্বিয়া এবং তাঁর দুই বন্ধু শানু ও জনিকে পাকড়াও করেছে পুলিশ। কিন্তু ১১ ফেব্রুয়ারি, বৃহস্পতিবার মাঝরাতে গড়িয়াহাটে এক ব্যক্তিকে গাড়িচাপা দিয়ে মারার অভিযোগ উঠলেও টিএমসিপি নেতা কণিষ্ক মজুমদারের বিরুদ্ধে সরাসরি খুনের মামলা তো দূরস্থান, অনিচ্ছাকৃত খুনের মামলাও রুজু করেনি পুলিশ!

লালবাজারের একাংশ বলছে, ওই টিএমসিপি নেতার বিরুদ্ধে যে সব ধারা দেওয়া হয়েছে, তাতে এক জনের মৃত্যু ঘটানোর অভিযোগ ওঠার পরেও প্রকাশ্যে বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়াবেন তিনি। পুলিশ সূত্রের খবর, মামলায় ধারা সংশোধনের আর্জি জানানোর ২৪ ঘণ্টা পরেও কণিষ্ককে ডেকে নতুন করে জিজ্ঞাসাবাদ করেননি তদন্তকারীরা। তার ফলে এই ঘটনার তদন্ত শুক্রবার সকালে যে তিমিরে ছিল, এখনও সেই তিমিরেই।

পুলিশের একাংশ বলছে, বৃহস্পতিবার গড়িয়াহাটের ঘটনায় গুরুতর জখম হওয়া ব্যক্তি ওই রাতেই ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজে মারা যান। কিন্তু শুক্রবার দুপুরে কণিষ্ককে আলিপুর আদালতে হাজির করানো পর্যন্ত পুলিশ তা ‘জানতে পারেনি’। আদালতকেও তা জানাননি তদন্তকারী অফিসার। শুক্রবার রাতে অবশ্য কলকাতা পুলিশের ডিসি (ট্রাফিক) ভি সলোমন নেসাকুমার জানান, আহত ব্যক্তি মারা যাওয়ায় কণিষ্কের বিরুদ্ধে মামলার ধারায় সংশোধন করে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০৪এ ধারা (গাফিলতির জেরে কারও মৃত্যু ঘটানো) যুক্ত করা হয়েছে। কলকাতা পুলিশ আলিপুর আদালতে শুক্রবার বিকেলে ধারা সংশোধনের আর্জি জানিয়েছে।

কিন্তু যে ধারা পুলিশ দিচ্ছে, তাতেই বা কী রয়েছে?

পুলিশ ও সরকারি আইনজীবীদের একাংশ জানান, ওই ধারা যুক্ত করা বা না-করা সমান। কারণ, ৩০৪এ ধারা জামিনযোগ্য অপরাধ। সর্বোচ্চ সাজা দু’বছর জেল। এক অবসরপ্রাপ্ত পুলিশকর্তার কথায়, ‘‘ধারা সংশোধন করে পুলিশ পিঠ বাঁচাতে চাইছে। আবার টিএমসিপি নেতা কণিষ্কের গায়ে যাতে আঁচ না-লাগে, সে দিকেও খেয়াল রাখা হল।’’

রেড রোড কাণ্ডে খুনের মামলা কেন— এর ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন লালবাজারের কর্তারা। তাঁরা জানান, কোনও বেপরোয়া কাজে কারও মৃত্যু হতে পারে জেনেও তেমন কাণ্ড ঘট়ালে তাকে খুন বলেই ধরা হয়। প্রশ্ন উঠেছে, গড়িয়াহাটের রাস্তায় বেপরোয়া ভাবে গাড়ি চালালে যে তার পরিণতি খারাপ হতে পারে, কণিষ্কও তো ভাল ভাবেই জানেন। তা হলে তাঁর ক্ষেত্রে ওই ধারা প্রয়োগ করা হল না কেন?

এ প্রশ্নের উত্তর পেতে কলকাতা পুলিশের ডিসি (ট্রাফিক) ভি সলোমন নেসাকুমারকে ফোন করা হলে তিনি ফোন ধরেননি। এসএমএসেরও উত্তরও দেননি। তবে লালবাজারের এক কর্তার ব্যাখ্যা— গাড়িটি কণিষ্কই চালাচ্ছিলেন কি না, সে ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

রেড রোড কাণ্ডেও গাড়ির চালক কে ছিলেন, সে সম্পর্কে নিশ্চিত ছিল না পুলিশ। তাই সাম্বিয়া-সহ তিন জনের বিরুদ্ধেই খুনের মামলা দায়ের করা হয়! কণিষ্কের ক্ষেত্রে এর ব্যতিক্রম কেন হল, তার উত্তরও লালবাজারের কর্তাদের কাছে মেলেনি।

তবে পুলিশের এমন ‘দু’মুখো নীতি’-র ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে লালবাজারের অন্দরেই অনেকে বলছেন, রে়ড রোডে তৃণমূল নেতার ছেলের গাড়ির তলায় যিনি চাপা পড়েছিলেন, তিনি সেনা অফিসার। ফলে চাপ এসেছিল প্রতিরক্ষা মন্ত্রক থেকে। তাতে নবান্নকেও নড়েচড়ে বসতে হয়। বিষয়টি সহজে ধামাচাপা দেওয়া যাবে না বুঝে শাসক দলের নেতার ছেলের বিরুদ্ধেও খুনের মামলা দায়ের করে পুলিশ।

কিন্তু গড়িয়াহাটে নিহত ব্যক্তি নেহাতই ফুটপাথবাসী ভবঘুরে। তাই পুলিশের ওপরেও চাপ দেওয়ার কেউ নেই। সেই কারণেই শাসক দলের ছাত্রনেতাকে আইনে বাঁধার চেষ্টা হয়নি বলে মনে করছেন পুলিশেরই একাংশ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE