Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

গোপালের কাছে যেতেন নেতারা, কবুল ধৃতদের

বিভিন্ন নেতানেত্রীর সভায় সে যে সোজা মঞ্চে উঠে যেত, তার সচিত্র বিবরণ পাওয়া যাচ্ছে সংবাদমাধ্যমে। এ বার জানা গেল, গিরিশ পার্কে পুলিশ অফিসারকে গুলির ঘটনার মূল চক্রী বলে অভিযুক্ত গোপাল তিওয়ারির বাড়িতে নিয়মিত আনাগোনা ছিল মধ্য কলকাতার কয়েক জন রাজনৈতিক নেতার। ইতিমধ্যেই ধরা পড়া গোপাল-ঘনিষ্ঠ বিভিন্ন দুষ্কৃতীকে জেরা করে এই তথ্য পেয়েছেন তদন্তকারীরা।

গোপাল তিওয়ারি।—ফাইল চিত্র।

গোপাল তিওয়ারি।—ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৫ মে ২০১৫ ০৩:১৩
Share: Save:

বিভিন্ন নেতানেত্রীর সভায় সে যে সোজা মঞ্চে উঠে যেত, তার সচিত্র বিবরণ পাওয়া যাচ্ছে সংবাদমাধ্যমে।

এ বার জানা গেল, গিরিশ পার্কে পুলিশ অফিসারকে গুলির ঘটনার মূল চক্রী বলে অভিযুক্ত গোপাল তিওয়ারির বাড়িতে নিয়মিত আনাগোনা ছিল মধ্য কলকাতার কয়েক জন রাজনৈতিক নেতার। ইতিমধ্যেই ধরা পড়া গোপাল-ঘনিষ্ঠ বিভিন্ন দুষ্কৃতীকে জেরা করে এই তথ্য পেয়েছেন তদন্তকারীরা।

লালবাজারের গোয়েন্দারা কিছু সিসিটিভি-র ফুটেজ বাজেয়াপ্ত করেছেন গোপালের বাড়ি থেকে। তাঁরা জানিয়েছেন, বড়বাজারের ত্রাস গোপালের আস্তানায় ওই নেতাদের যাতায়াতের জোরালো প্রমাণ জোগাড় করতে সেই সব ফুটেজও যাচাই করা হবে। পালিয়ে বেড়ানো গোপালকে ওই নেতাদের কেউ আশ্রয় দিয়েছেন কি না, খতিয়ে দেখা হবে তা-ও।

১৮ এপ্রিল, কলকাতা পুরসভার ভোটের দিন বিকেলে গিরিশ পার্কের সিংহিবাগানে কংগ্রেস ও তৃণমূলের গোলমাল থামাতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হন কলকাতা পুলিশের সাব-ইনস্পেক্টর জগন্নাথ মণ্ডল। সেই ঘটনায় দুই তৃণমূলকর্মী-সহ ১০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ঘটনার দু’দিন পরে কলকাতা থেকে পালিয়ে যায় গোপাল। গত বৃহস্পতিবার বীরভূমের নলহাটিতে গোপাল-ঘনিষ্ঠ দুষ্কৃতী সমীর দাস ওরফে ছোট্টুকে পাকড়াও করেন লালবাজারের গোয়েন্দারা। তার কাছ থেকেই গোপালের বাড়ির অস্ত্রাগার এবং সিসিটিভি-র হদিস পাওয়া গিয়েছে। শুক্রবার সকালে তল্লাশি চালিয়ে সেই সব অস্ত্র, প্রচুর বিস্ফোরক এবং সিসিটিভি-র ফুটেজ বাজেয়াপ্ত করেন তদন্তকারীরা।

সিসিটিভির আটক ফুটেজ খতিয়ে দেখতে গিয়ে আরও একটি তথ্য হাতে পেয়েছেন গোয়েন্দারা। তাঁরা বলছেন, পুলিশ পিছনে লেগেছে বুঝতে পেরে ২০ এপ্রিল তড়িঘড়ি কলকাতা ছেড়ে পালিয়ে যায় গোপাল। তাই নিজের বাড়িতে রাখা অস্ত্রশস্ত্র ও বিস্ফোরক সরিয়ে ফেলতে পারেনি। অস্ত্রাগারের দেখভাল করার জন্য বাপ্পা নামে এক শাগরেদকে রেখে গিয়েছিল সে। লালবাজারের এক কর্তা বলেন, ‘‘সিসিটিভি ফুটেজ অনুযায়ী বাপ্পাকে ২৩ এপ্রিল পর্যন্ত গোপালের বাড়িতে ঢুকতে-বেরোতে দেখা গিয়েছে।’’ বাপ্পার খোঁজে কয়েক দিন ধরে মহানগরী, শহরতলি এবং শহরের বাইরে তল্লাশি চালিয়েছে পুলিশ।

গোপাল গেল কোথায়?

ধৃতদের কয়েক জনকে জেরা করে পুলিশ জেনেছে, সিংহিবাগানের ঘটনার পরে মধ্য কলকাতার এক রাজনৈতিক নেতার আশ্রয়ে ছিল গোপাল। কিন্তু গিরিশ পার্ক কাণ্ড নিয়ে লালবাজার উঠেপড়ে লাগতেই গোপালকে কলকাতা ছেড়ে পালাতে বলেন সেই নেতা। তার পরেই ২০ এপ্রিল সে কলকাতা ছেড়ে পালায়। ফেরার গোপালের হদিস পেতে তার বাড়িতে হানা দিয়ে বেশ কিছু ব্যবসায়িক নথিপত্র বাজেয়াপ্ত করেন তদন্তকারীরা। তার ভিত্তিতেই লালবাজারের একটি সূত্র জানায়, হায়দরাবাদ ও রাজস্থানে গোপালের ব্যবসা রয়েছে। সে অন্ধ্রপ্রদেশ বা রাজস্থানের কোথাও লুকিয়ে আছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। গোপালের হদিস পেতে তার আত্মীয়বন্ধুদের নাম-ঠিকানা জোগাড় করছেন তদন্তকারীরা। লালবাজারের খবর, সোমবার দুপুরে পাথুরিয়াঘাটা স্ট্রিটে গোপালের বাড়িতে হানা দেন গোয়েন্দারা। সেখানে গোপালের স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন এলাকায় এবং ভিন্‌ রাজ্যে থাকা গোপালের আত্মীয় ও বন্ধুদের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করেছেন তদন্তকারীরা।

গোপাল ও তার ফেরার শাগরেদদের হদিস পেতে ছোট্টুই এখন গোয়েন্দাদের মূল হাতিয়ার। গোপালের দীর্ঘদিনের সঙ্গী ছোট্টু এ ব্যাপারে অনেক তথ্য দিয়েছে বলে লালবাজারের একাংশের দাবি। গোয়েন্দা সূত্রের খবর, গত দশকের গোড়ায় একটি মামলায় গ্রেফতার হয়ে জেলে গিয়েছিল গোপাল।
তখন অন্য একটি মামলায় জেলবন্দি ছিল ছোট্টুও। সেখানেই দু’জনের
ভাব জমে। জেল থেকে বেরিয়ে গোপালের ঘনিষ্ঠ শাগরেদ হয়ে ওঠে ছোট্টু। গত দশকের মাঝামাঝি বড়বাজারে একটি চায়ের দোকানিকে গুলি করার ঘটনায় গোপাল গ্রেফতার হওয়ার পরে তার পরিবারের মূল ভরসা হয়ে ওঠে ছোট্টুই। গোপালের নির্মাণ ব্যবসা দেখভালের পাশাপাশি ভোটের সময় সে-ই গোপালের হয়ে অস্ত্র জোগাড় করেছিল বলে তদন্তকারীদের দাবি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE