প্রতীকী ছবি।
জিএসটি-র জটে থমকে গিয়েছে কলকাতা পুরসভার অনেক কাজ। এ বার সেই জট কাটাতে গিয়ে নতুন করে সমস্যায় পড়ল পুর প্রশাসন।
পুরসভা সূত্রের খবর, জট কাটাতে দিন কয়েক আগে মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় পুরসভার পদস্থ ইঞ্জিনিয়ার, অফিসার ও রাজ্যের কমার্শিয়াল ট্যাক্স দফতরের (যারা মূলত জিএসটি কর দেখছে) একাধিক কর্তাকে নিয়ে বৈঠকে বসেছিলেন। সেই বৈঠকের পরে মেয়র জানিয়েছিলেন, কাজ শেষ হওয়ার পরেও জিএসটি-র কারণে যে সব ঠিকাদার টাকা পাননি, জরুরি ভিত্তিতে (অ্যাড-হক) তাঁদের কিছু টাকা দেওয়ার ব্যবস্থা করবে পুরসভা। এ বিষয়ে অনুমোদন পেতে রাজ্য সরকারের কাছে প্রস্তাব পাঠানো হচ্ছে বলেও জানান তিনি। এখন সেই প্রস্তাবকে ঘিরেই শুরু হয়েছে জল্পনা। পুরসভার একাধিক অফিসারের মতে, এই ধরনের কোনও প্রস্তাব সরকারের কাছে পাঠানো যুক্তিসঙ্গত কি না, তা ভেবে দেখা দরকার। কারণ, জিএসটি শুধু কলকাতা বা রাজ্যের বিষয় নয়। আর জিএসটি জটে আটকে ঠিকাদারদের এমন হাল সারা দেশেই। তাই কলকাতা পুরসভা এ নিয়ে আলাদা করে কিছু সুবিধা পেলে প্রশ্ন উঠবে সর্বত্র। আপাতত, সে সব ভেবেই চিন্তিত পুর প্রশাসনের কর্তারা।
তবে মেয়র নিজেই ঠিকাদারদের বকেয়া মেটানো নিয়ে আশ্বাস দেওয়ায় কেউ তার যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন তুলতে পারছেন না। যদিও রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়নমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম সাফ বলে দিয়েছেন, ‘‘জরুরি ভিত্তিতে টাকা দেওয়ার ক্ষমতা আমাদের নেই।’’ তিনি জানান, তাঁদের অধীনে এমন অনেক কম্প্যাক্টর ভ্যাট রয়েছে, যেখানে জুলাইয়ের আগে থেকে কাজ হচ্ছে। সেখানকার ঠিকাদারেরা এখন নতুন করে বিল দিতে গেলে জিএসটি ধরে হিসেব করতে হবে। তা নিয়েই তৈরি হয়েছে সমস্যা। এমনকী, কয়েকটি তো বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে।
গত জুলাইয়ে দেশ জুড়ে জিএসটি (গুডস অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্যাক্স বা পণ্য পরিষেবা কর) চালু হয়েছে। অর্থাৎ, জুন মাসের পর থেকে যে কোনও পণ্য বা পরিষেবা কিনতে গেলে এই কর দিতে হবে। পুরসভার এক অফিসার জানান, জুন মাসের মধ্যে যে সব প্রকল্পের কাজ শেষ হয়ে গিয়েছে, তার ক্ষেত্রে ওই কর বলবৎ করা হয়নি। কিন্তু জুলাইয়ের আগে কাজের বরাত দেওয়া হয়ে গিয়েছে, অথচ কাজ শেষ হয়নি, এমন প্রকল্পের ঠিকাদারেরাই পড়েছেন অসুবিধায়। কারণ, তাঁরা দরপত্র দিয়েছিলেন জিএসটি-র বাড়তি কর না ধরেই। কাজের বরাতও পেয়েছেন সেই হিসেবে। জুলাই থেকে নতুন কর চালু হতেই বিল দেওয়া নিয়ে সমস্যায় পড়েছেন তাঁরা।
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রতি বছর শহরের উন্নয়ন ও পরিষেবা খাতে প্রায় এক হাজার কোটি টাকা খরচ হয়। এপ্রিল থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ন’মাসে তার প্রায় ৩০ শতাংশ টাকা খরচ হয়। জানুয়ারি থেকে বাকি তিন মাসে খরচের পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ৭০ শতাংশ। অর্থাৎ, বাজেটের হিসেবে প্রায় ৭০০ কোটি টাকা। যার অর্থ, আর্থিক বছরের শেষ তিন মাসেই খরচ সব চেয়ে বেশি। এখন ঠিকাদারেরা আগের বিল না পাওয়ায় নতুন করে কাজ ধরতে পারছেন না। আর বছরের শেষে কাজ না হলে প্রকল্পের টাকা ফেরত পাঠানোর নির্দেশ রয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর। তা নিয়ে ব্যতিব্যস্ত পুর প্রশাসন। এ সব ভেবেই সম্প্রতি মেয়র পারিষদদের বৈঠকে জরুরি ভিত্তিতে টাকা দেওয়ার বিষয়টি ওঠে। তাতে অর্থ দফতর থেকে বলা হয়, এমন ধরনের কোনও প্রস্তাব আনা ঠিক হবে না। কারণ, জিএসটি-র বিষয়টি সারা দেশেই প্রযোজ্য। শুধু কলকাতার ক্ষেত্রে বিশেষ কোনও পদক্ষেপ করা হলে অন্য পুরসভাও তার দৃষ্টান্ত তুলে সরকারকে চাপ দিতে পারে। আর বিষয়টি পুরোপুরি কেন্দ্রের। তাই কেন্দ্রীয় সরকারের অনুমোদনও জরুরি বলে কেউ কেউ মনে করছেন। এখন পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরও নিজেদের অক্ষমতা জানিয়ে দেওয়ায় পুর কর্তাদের অস্বস্তি আরও বেড়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy