Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
বালি

তৎপর যাত্রীরা, ট্রেনে ‘উদ্ধার’ শিশু

তখন সন্ধ্যা সাড়ে ছ’টা। হাওড়া-ব্যান্ডেল লেডিজ স্পেশালে বেশ ভিড়। মাঝের একটি কামরায় ওঠার সময়ে যাত্রীরা দেখলেন, দরজার পাশে শোয়ানো তিন-চার মাসের শিশু। পাশেই সে এক মহিলা, ভবঘুরের মতো চেহারা। যাত্রীরা প্রশ্ন করতে শিশুটিকে ব্যাগে ভরে ফেলে দিতে যান ওই মহিলা। শেষে বালি স্টেশনে যাত্রীরা ট্রেন থেকে নামিয়ে তাঁকে রেলপুলিশের হাতে তুলে দেন। শিশুটি উদ্ধার হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে বৃহস্পতিবার। যদিও ধৃত ওই মহিলা জানান, তাঁর নাম আশা এবং ওই শিশুপুত্রটি তাঁরই।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২২ মে ২০১৫ ০১:১৯
Share: Save:

তখন সন্ধ্যা সাড়ে ছ’টা। হাওড়া-ব্যান্ডেল লেডিজ স্পেশালে বেশ ভিড়। মাঝের একটি কামরায় ওঠার সময়ে যাত্রীরা দেখলেন, দরজার পাশে শোয়ানো তিন-চার মাসের শিশু। পাশেই সে এক মহিলা, ভবঘুরের মতো চেহারা। যাত্রীরা প্রশ্ন করতে শিশুটিকে ব্যাগে ভরে ফেলে দিতে যান ওই মহিলা। শেষে বালি স্টেশনে যাত্রীরা ট্রেন থেকে নামিয়ে তাঁকে রেলপুলিশের হাতে তুলে দেন। শিশুটি উদ্ধার হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে বৃহস্পতিবার। যদিও ধৃত ওই মহিলা জানান, তাঁর নাম আশা এবং ওই শিশুপুত্রটি তাঁরই।

এক যাত্রী ববিতা সোয়েলা জানান, কামরায় উঠতেই তিনি দেখেন, দরজার পাশে শুইয়ে রাখা অপরিচ্ছন্ন পোশাকের একটি শিশু। পাশেই অপরিচ্ছন্ন টি-শার্ট ও প্যান্ট পরে বসে ওই মহিলা। ববিতা ও অন্য মহিলারা পাশের ওই মহিলাকেই শিশুটির মা ভেবে তাকে সাবধানে তাঁর কাছে রাখতে বলেন। কিন্তু অভিযোগ, মহিলার তরফে কোনও উত্তর মেলেনি। ট্রেন হাওড়া স্টেশন ছাড়তেই শিশুটি কাঁদতে শুরু করে। ববিতা বলেন, ‘‘দেখি, মহিলা শিশুটিকে সরিয়েও রাখছেন না, দুধও খাওয়াচ্ছেন না। তাঁকে দুধ কিনতে দশ টাকা দিই। তা-ও নেননি।’’

নিশা সিংহ নামে অন্য এক যাত্রীও জানান, শিশুটি কাঁদতেই থাকে এবং মহিলা আগের মতোই বসে থাকে। তাতেই সন্দেহ হয় তাঁদের। ববিতা, নিশা-সহ কয়েক জন ওই মহিলাকে ধরে শিশুটি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেন এবং না বললে তাকে পুলিশের কাছে নিয়ে যাওয়ার ভয় দেখান। তখন এক বার ওই মহিলা জানান শিশুটি তাঁর, পর মুহূর্তেই আবার অস্বীকার করেন। অভিযোগ, যাত্রীরা আরও জিজ্ঞাসাবাদ করায় তিনি শিশুটিকে ব্যাগে ভরে ছুঁড়ে ফেলে দিতে যান এবং বেশি প্রশ্ন করলে শিশুটিকে ফেলে দেওয়ার ভয় দেখান। বিপদ বুঝে তাঁরা কয়েক জন চুপচাপ ওই মহিলার পাশেই বসে পড়েন বলে জানান নিশা।

সন্ধ্যা সওয়া ৭টা নাগাদ ট্রেন বালিতে ঢুকতেই যাত্রীরা শিশু-সহ ওই মহিলাকে টেনে নামান। ওই মহিলা নিশার হাত কামড়ে পালানোর চেষ্টা করলে বাকিরা ধরে ফেলেন। তখন স্টেশনে কর্তব্যরত ছিলেন আরপিএফ-এর মহিলা কনস্টেবল পিঙ্কি পাণ্ডে। তিনি ওই মহিলাকে ধরেন। ওই মহিলা কাপড় দিয়ে নিজের মুখ ঢাকার চেষ্টা করছিলেন বলে জানায় রেলপুলিশ। আরপিএফ অফিসার প্রবীরকুমার গুপ্ত এসে মহিলাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি অসংলগ্ন কথা বলতে থাকেন। পিঙ্কি এবং কয়েক জন যাত্রীর সঙ্গে তাঁকে বেলুড় জিআরপি-তে পাঠান প্রবীরবাবু। রেলপুলিশ গ্রেফতার করে ওই মহিলাকে। পুলিশের দাবি, প্রথমে ওই মহিলা জানান, তাঁর স্বামী কলকাতায় কাজ করেন। মুম্বই থেকে তিনি তাঁর সঙ্গে দেখা করতে এসেছেন। আবার বলেন, তিনি এসেছেন মেটিয়াবুরুজ থেকে। কখনও কখনও তিনি মারাঠি ভাষাতেও কথা বলছেন বলে জানায় পুলিশ। এ দিকে, প্রথমে অস্বীকার করলেও পরে ওই মহিলা শিশুটিকে নিজের বলেই দাবি করেন। তিনি মানসিক ভারসাম্যহীন কি না, খতিয়ে দেখছে পুলিশ।

রেলপুলিশ জানায়, গত কিছু দিন ওই মহিলাকে বেলুড়-বালি স্টেশনে ছেঁড়া ব্যাগ নিয়ে ঘুরতে দেখা গিয়েছিল। বৃহস্পতিবার সকালেও তাঁকে বেলুড় স্টেশনে দেখা যায়। কিন্তু সঙ্গে কোনও শিশু ছিল না। পুলিশ জানায়, কিছু দিন হল কলকাতাতেও তাঁকে ঘুরে বেড়াতে দেখা গিয়েছে। স্থানীয়েরা ও রেলপুলিশ শিশুটির দুধ, জামা-কাপড়ের ব্যবস্থা করেছেন। রেলপুলিশের কাছেই রয়েছে শিশুটি। তার চিকিৎসাও চলছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE