Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

নমো-রাগা-দিদির বসত বাঙালির ভিয়েনেও

লেডি ক্যানিং, মতিলাল নেহরু, সচিন তেন্ডুলকরের সঙ্গে নরেন্দ্র মোদীর মিল কী? মোদীর বদলে রাহুল গাঁধী বা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামও রাখা যেতে পারে অবশ্য। কিন্তু এমন প্রশ্নের মুখে পড়লে বাঘা ক্যুইজ বিশারদও নির্ঘাত ঘোল খাবেন। জবাবটা আসলে রয়েছে, বাঙালি ময়রার আস্তিনে। মিষ্টান্নের রেকাবে এখন পাশাপাশি রয়েছেন, নমো-রাগা-দিদি। ঠিক যেমন সচিন বা নেহরু বা ক্যানিং!

ঋজু বসু
শেষ আপডেট: ১৯ এপ্রিল ২০১৪ ০২:৩১
Share: Save:

লেডি ক্যানিং, মতিলাল নেহরু, সচিন তেন্ডুলকরের সঙ্গে নরেন্দ্র মোদীর মিল কী?

মোদীর বদলে রাহুল গাঁধী বা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামও রাখা যেতে পারে অবশ্য। কিন্তু এমন প্রশ্নের মুখে পড়লে বাঘা ক্যুইজ বিশারদও নির্ঘাত ঘোল খাবেন। জবাবটা আসলে রয়েছে, বাঙালি ময়রার আস্তিনে।

মিষ্টান্নের রেকাবে এখন পাশাপাশি রয়েছেন, নমো-রাগা-দিদি। ঠিক যেমন সচিন বা নেহরু বা ক্যানিং!

ওষুধের বাজারের পর এ বার মিষ্টির দোকানেও ভোটের হাওয়া। মোদী, রাহুল, মমতাদের নিয়ে তোলপাড় চলছে বাঙালি ময়রার ‘ভেনঘরে’ (ভিয়েন)। নতুন তিন সৃষ্টির নাম: নমো, রাগা ও দিদি। স্রষ্টা ভবানীপুরের বলরাম মল্লিক।

সমকালের কোনও ঘটনা বা ব্যক্তিত্বের ছায়ায় বাঙালি মিষ্টি সৃষ্টির এমন ট্র্যাডিশন অবশ্য এমনিতে অনেক পুরনো। ‘লেডিকেনি’র কাহিনি কে না জানেন! লর্ড ও লেডি ক্যানিংকে নিয়ে সে-কালের কলকাতায় তুমুল হইচইয়ের পটভূমিতে পান্তুয়ার আদল সামান্য পাল্টে লেডিকেনির জন্ম। অনেকেরই মত, এই কৃতিত্ব ভীম নাগের বাবা পরাণচন্দ্র নাগের। আবার বিশ শতকের দ্বিতীয় দশকে মতিলাল নেহরু যখন কংগ্রেসের সভাপতি হয়ে কলকাতায় এলেন, তাঁর ডিনারে গিয়েছিল ভীম নাগের সৃষ্টি পেস্তার ‘নেহরু সন্দেশ’। রানি ভিক্টোরিয়ার অভিষেক উপলক্ষে সৃষ্টি ‘করোনেশন সন্দেশ’ বা ‘কুইন্স কেক’-এর কৃতিত্বও দাবি করে ভীম নাগ পরিবার। কোনও কোনও সাবেক মিষ্টি-স্রষ্টা এখনও অর্ডারমাফিক এই সব সন্দেশ বানিয়ে থাকেন।

ভিক্টেরিয়ার সঙ্গে নামতুতো সম্পর্কের ‘এমপ্রেস গজা’ও রিষড়ার ফেলু ময়রার হাতে বহাল তবিয়তে। তবে আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের নামে ‘আশুভোগ’ বা নবাব ওয়াজেদ আলি শাহের স্মৃতি-জড়ানো ‘নবাবখাস’-এর সৃষ্টিতত্ত্ব আজ বিস্মরণের অতলে। ভীম নাগের পরিবারের প্রতাপচন্দ্র নাগ বলেন, “সেই কারিগররা নেই। কেমন ছিল সে মিষ্টি, কেউ বলতে পারবে বলে মনে হয় না।” নেহরুভোগ অবশ্য এখনও মিলবে।

ইতিহাস-রাজনীতির অনুষঙ্গে আর এক সৃষ্টি সন্দেশ ‘জয়হিন্দ’। সেন মহাশয়ের কর্ণধার সন্দীপ সেনের দাবি, “দেশের প্রথম প্রজাতন্ত্র দিবসে ‘জয়হিন্দ’ আমাদেরই সৃষ্টি। তেরঙা পতাকার আদল।” নতুনবাজারের মাখন ও নলিনের সন্দেশের দোকানে এখনও দেলখোশ সন্দেশে জাফরান, পেস্তা, সরের মিশেলে একটু অন্য চেহারায় এই ‘জয়হিন্দ’-এর দেখা মেলে। হাল আমলে সরের পুরঠাসা ‘সচিন’ সন্দেশটির জন্ম দিয়েছেন নকুড় নন্দী। তবে নকুড়-কর্তা প্রতীপ নন্দীর মতে, “নামের জোরে সাময়িক সুবিধে মেলে। কিন্তু সেটাই শেষ কথা নয়।” আসল হল মিষ্টির গুণাগুণ!

বলরামের তরুণ কর্তা সুদীপ মল্লিক সে কথা বিলক্ষণ মনে রেখেছেন! নরেন্দ্র মোদীর চা-বিক্রির ইতিহাস নিয়ে অনেক দিনই প্রচার শুরু করেছে বিজেপি। মোদী-থিমের মিষ্টিতেও এই চা-ওয়ালা মোদীর অনুষঙ্গই উঠে আসছে। “দুধ-ছানার সঙ্গে চা বেক করে এটা তৈরি হচ্ছে। সঙ্গে সামান্য এলাচগুঁড়ো ও আদা। এই মিষ্টিতে খানিকটা সাহেবি মুসে-র আদল আছে।” ‘নমো’ দেখতেও ঠিক যেন সর-পড়া দুধেল চা। কাচের গ্লাসে ভরা ঠান্ডা-ঠান্ডা মিষ্টি চামচেয় কেটে-কেটে চাখতে হবে। মাটির হাঁড়িতে ক্ষীর-ছানা-পাটালির মিশেলে সন্দেশে ‘মা-মাটি-মানুষ’-এর নেত্রীর ছায়া। নামকরণ হয়েছে ‘দিদি’। আর দেশের তরুণ নেতা রাহুলের নামে মিষ্টিতে রাখা হয়েছে সন্দেশের সঙ্গে কফি-চকলেট। ডেজার্ট গ্লাসের আধারে আসছে ‘রাগা’! শোকেসে তিন মহারথীর সহাবস্থান।

দেদার বিকোচ্ছে বিভিন্ন দলের প্রতীকের ছাঁচের মিষ্টিও। পয়লা বৈশাখের বাম ঐক্যের বার্তা দিতে চার বাম শরিকের প্রতীকের সন্দেশ ‘অর্ডার’ দিয়েছিল ফরোয়ার্ড ব্লক। শাসক দলের নেতাদের উপহার দিতে জোড়াফুল ছাপ সন্দেশ বা বিজেপি প্রার্থীদের জন্য পদ্মফুল-ছাপ সন্দেশের কেকেরও কাটতি রয়েছে। “তবে মিষ্টির কাটতি বাড়লেই তা ভোটযন্ত্রে ছাপ ফেলবে, এমন গ্যারান্টি নেই কিন্তু,” হেসে ফেললেন সমাজতত্ত্বের শিক্ষক রামানুজ গঙ্গোপাধ্যায়। “এ সবই বিপণনের কৌশল। দল বা নেতার নামে মিষ্টি যাঁরা বেচছেন, দিচ্ছেন বা খাচ্ছেন, তিনি সমথর্র্ক না-ও হতে পারেন।”

ভোটের ফল বেরোনোর পরে কোন দল মিষ্টিমুখ করবে, সেটা অতএব বলা যাচ্ছে না!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

riju basu vote sweets
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE