দিল্লি-মুম্বই পারে, কলকাতা পারে না!
দিল্লি বিমানবন্দরে নতুন করে তৈরি করতে হয়েছে ১৫ কিলোমিটার লম্বা ট্যাক্সি-ওয়ে। বাড়াতে হয়েছে রানওয়ের প্রস্থও। মুম্বই বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ নতুন করে তৈরি করেছেন র্যাপিড ট্যাক্সি-ওয়ে। রানওয়েতে নামার পরে যে রাস্তা দিয়ে দ্রুত বেরিয়ে আসতে পারবে বিমান।
এ সমস্ত প্রস্তুতিই ‘এয়ারবাস ৩৮০’ বিমানকে জায়গা করে দেওয়ার জন্য। এই প্রথম ভারতের ওই দুই বিমানবন্দর থেকে নিয়মিত যাত্রী নিয়ে যাতায়াত করবে আড়াই হাজার কোটি টাকা দামের বিশ্বের সর্ববৃহত্ বিমানটি। প্রস্তাবটি ছিল সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সের। সেই মতো দুই বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ উঠে-পড়ে লেগে পরিকাঠামো তৈরি করেছেন গত দু’মাস ধরে। ঠিক হয়েছে, দিল্লি ও মুম্বই বিমানবন্দর থেকে ৩০ মে চালু হবে ‘দৈত্য বিমান’-এর উড়ান।
বিমানসংস্থার সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট লি ওয়েন ফেন জানাচ্ছেন, এখন রোজ তিনটি করে বোয়িং ৭৭৭ বিমান সিঙ্গাপুর থেকে দিল্লি ও মুম্বইয়ে যাতায়াত করে। কিন্তু, এ ৩৮০-র পেটে অনায়াসে ঢুকে যেতে পারেন দুই বিমানের যাত্রী। তাই, ৩০ মে থেকে এ ৩৮০ চলবে একটি করে। সঙ্গে চলবে একটি করে ৭৭৭।
কলকাতা কিন্তু পিছিয়ে! এই বিমানবন্দরে এ ৩৮০ বিমানে নামাওঠার জন্য প্রয়োজনীয় পরিকাঠামোই নেই। যে রানওয়েতে এই বিমান নামাওঠা করবে তার প্রস্থ ন্যূনতম ৬০ মিটার হতে হবে, যেখানে কলকাতার ৩৬২৭ মিটার লম্বা প্রধান রানওয়ের প্রস্থ ৪৫ মিটার। ইন্টারন্যাশনাল সিভিল অ্যাভিয়েশন অর্গ্যানাইজেশন (ইকাও)-এর নির্দেশিকা অনুযায়ী, এ ৩৮০ নামার জন্য সংশ্লিষ্ট বিমানবন্দরে ১০ নম্বর ক্যাটাগরির অগ্নি-নির্বাপক ব্যবস্থা থাকার প্রয়োজন। এটি সেই বিমানবন্দরে যাত্রী ও উড়ান সংখ্যার উপরে নির্ভর করে। কলকাতার ক্ষেত্রে অগ্নি-নির্বাপক ব্যবস্থাটি ৯ নম্বর ক্যাটাগরির।
দোতলা এই বিমানে প্রথম, বিজনেস এবং সাধারণ শ্রেণি মিলিয়ে ৫২৫ জন যাত্রী ধরে। এক সঙ্গে এত সংখ্যক যাত্রী বিমান থেকে নামাওঠা করতে গেলে তিনটি অ্যারোব্রিজ-এর (টার্মিনালের সঙ্গে বিমানের সংযোগকারী চলমান বারান্দা) প্রয়োজন। তার মধ্যে একটি আবার দোতলার দরজায় গিয়ে লাগবে। কলকাতায় এই ‘ডাবল ডেক’ অ্যারোব্রিজ নেই। মুম্বইতেও ছিল না। মুম্বই বিমানবন্দরের মুখপাত্রের কথায়, “গত তিন মাসে আমাদের এই সমস্ত পরিকাঠামোর ব্যবস্থা করতে হয়েছে। একটি মাত্র গেটে আমরা তিনটি অ্যারোব্রিজ দিয়ে এই বিমানের যাত্রীদের নামাওঠায় সাহায্য করব।” জানা গিয়েছে, বেঙ্গালুরু ও হায়দরাবাদ বিমানবন্দরেও এই বিমান নামাওঠা করার মতো পরিকাঠামো রয়েছে। ২০১১ সালের জুন মাসে একটি বিদেশি এ ৩৮০ বিমান জরুরি কারণে হায়দরাবাদে নেমেওছিল।
দিল্লি বিমানবন্দরের মুখপাত্র বলেন, “আমাদের রানওয়ের প্রস্থ ছিল ৬০ মিটার। তার পরেও দু’দিকে আরও সাড়ে সাত মিটার করে বাড়ানো হয়েছে।” এ ৩৮০ বিমানের একটি ডানার শেষ প্রান্ত থেকে অন্য ডানার শেষ প্রান্তের প্রস্থ ৫৯০ ফুট। বিমানে চারটি ইঞ্জিন থাকে। তার মধ্যে বিশাল ওই দুই ডানার ধার ঘেঁষে যে দুই ইঞ্জিন থাকে, তা বিমানের শরীর থেকে ৮২ ফুট দূরে থাকে। দেখা গিয়েছে, নামার পরে বিমানের ডানা রানওয়ে ছাড়িয়ে মাটির উপরে চলে যাচ্ছে। ডানার ধারের সেই ইঞ্জিন দু’টিও মাটির উপরেই থাকছে। তাই আশঙ্কা, প্রচণ্ড আকর্ষণের ফলে ইঞ্জিনের ভিতরে মাটি ঢুকে আসতে পারে।
একসঙ্গে এত যাত্রীকে পরিষেবা দিতে দিল্লিতে বাড়ানো হয়েছে চেক-ইন, অভিবাসন কাউন্টারের সংখ্যা। একসঙ্গে ১ হাজার ব্যাগ ধারণ ক্ষমতা-সহ কনভেয়ার বেল্ট বানানো হয়েছে। তিনটি গেট প্রস্তুত রাখা হয়েছে, যেখানে তিনটি করে অ্যারোব্রিজ রয়েছে।
এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা! আর দেখার, শেষ পর্যন্ত কলকাতা শহর কবে পারে?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy