Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

পড়ুয়াদের ক্লাসে ফেরাতে সুরক্ষা-বিজ্ঞপ্তি উপাচার্যের

হুমকি-হাঙ্গামার মুখে ক্লাস বয়কট করে নিশ্চিত নিরাপত্তার দাবি তুলেছেন ছাত্রছাত্রীরা। নিরাপত্তার আশ্বাস দিয়ে শারীরবিদ্যার সেই পড়ুয়াদের ক্লাসমুখো করতে শেষ পর্যন্ত প্রেস-বিবৃতি জারি করতে হল কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সুরঞ্জন দাসকে। শুক্রবারের ওই বিবৃতিতে তাঁর দাবি, ক্যাম্পাসে স্বাভাবিক পরিবেশ বজায় আছে। নিরাপত্তা বজায় রাখতে প্রয়োজনীয় বন্দোবস্ত করবে বিশ্ববিদ্যালয়।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ জুলাই ২০১৪ ০৪:২৮
Share: Save:

হুমকি-হাঙ্গামার মুখে ক্লাস বয়কট করে নিশ্চিত নিরাপত্তার দাবি তুলেছেন ছাত্রছাত্রীরা। নিরাপত্তার আশ্বাস দিয়ে শারীরবিদ্যার সেই পড়ুয়াদের ক্লাসমুখো করতে শেষ পর্যন্ত প্রেস-বিবৃতি জারি করতে হল কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সুরঞ্জন দাসকে। শুক্রবারের ওই বিবৃতিতে তাঁর দাবি, ক্যাম্পাসে স্বাভাবিক পরিবেশ বজায় আছে। নিরাপত্তা বজায় রাখতে প্রয়োজনীয় বন্দোবস্ত করবে বিশ্ববিদ্যালয়।

কী ভাবে নিরাপত্তা বজায় রাখা হবে, উপাচার্য তা বিস্তারিত ভাবে জানাতে চাননি। এ দিনও রাজাবাজার বিজ্ঞান কলেজের শারীরবিদ্যা বিভাগের ছাত্রছাত্রীরা ক্লাসে যাননি। এঁরা স্নাতকোত্তর তৃতীয় সেমেস্টারের পড়ুয়া। বুধবারের দু’-একটি ক্লাস বাদ দিলে মঙ্গলবার থেকে টানা ক্লাস বয়কট করছেন তাঁরা। দাবি, ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে হবে।

উপাচার্য বিবৃতিতে জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শাখার দু’জন ডিনের উপস্থিতিতে শুক্রবার শারীরবিদ্যার শিক্ষক-শিক্ষিকা ও ছাত্র সংসদের প্রতিনিধিদের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। দু’পক্ষই সেখানে নিজেদের বক্তব্য জানিয়েছেন। বিভাগে স্বাভাবিক পরিবেশ বজায় রাখতে দু’তরফই সচেষ্ট হবে বলে স্থির হয়েছে ওই বৈঠকে। শারীরবিদ্যা বিভাগের ছাত্রছাত্রীরা উপস্থিত না-থাকায়

তাঁদের সঙ্গে এ দিন কথা বলতে পারেননি দুই ডিন। তাঁদের বক্তব্যও শোনা হবে বলে জানান বিজ্ঞান শাখার ডিন আশুতোষ ঘোষ।

ছাত্রছাত্রীরা অবশ্য জানিয়ে দিয়েছেন, আজ, শনিবারেও তাঁরা কলেজে যাবেন না। উপাচার্যের আবেদনে সাড়া দিয়ে সোমবার থেকে তাঁরা ক্লাসে যাবেন কি না, সেই ব্যাপারেও এ দিন নিশ্চিত ভাবে কিছু বলতে পারেননি পড়ুয়ারা। এক ছাত্র বলেন, “কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে নিরাপত্তা বজায় রাখার লিখিত আশ্বাস পেলে তবেই আমরা ক্লাস করতে যাব।” উপাচার্য লিখিত ভাবে বিবৃতি জারি করেছেন শুনে ওই ছাত্র বলেন, “আমরা তো সেটা পাইনি। এই ব্যাপারে অন্যদের সঙ্গে আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”

সোমবার বিকেলে ওই বিভাগের শিক্ষিকা রোশেনারা মিশ্র এবং কয়েক জন ছাত্রছাত্রীকে ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখানোর অভিযোগ ওঠে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ (টিএমসিপি)-এর বিরুদ্ধে। তার প্রতিবাদে এবং ক্যাম্পাসে নিরাপত্তার দাবিতে মঙ্গলবার ক্লাস বয়কট করেন শারীরবিদ্যা বিভাগের ছাত্রছাত্রীরা। পরের দিন, বুধবার টিএমসিপি ফের তাঁদের হুমকি দেয় বলে অভিযোগ জানিয়ে ওই পড়ুয়ারা বিজ্ঞান কলেজের মূল ফটকের সামনে অবস্থানে বসেন। রিসার্চ স্কলারেরাও সেই অবস্থানে যোগ দেন।

ওই দিনই সন্ধ্যায় কলেজ স্ট্রিট ক্যাম্পাসে সিন্ডিকেটের বৈঠক চলাকালীন বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বারভাঙা ভবনের বাইরে টিএমসিপি-র রাজ্য সভাপতি শঙ্কুদেব পণ্ডার নেতৃত্বে তাণ্ডব চালানো হয়। নিরাপত্তার দাবিতে বৃহস্পতিবার থেকে ক্লাস বয়কট করছেন শারীরবিদ্যা বিভাগের ছাত্রছাত্রীরা। নিরাপত্তার দাবি জানিয়েছে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সংগঠন ‘কুটা’-ও।

শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বুধবার ছাত্রছাত্রীদের ঘেরাও-রাজনীতি থেকে বিরত থাকতে বলেছিলেন। শুক্রবার ফের সে-কথা বলেন তিনি। চন্দনননগর রবীন্দ্র ভবনে একটি দলীয় অনুষ্ঠানে মন্ত্রী বলেন, “শিক্ষাঙ্গনে নানা দাবিতে কখনও ছাত্রেরা, কখনও শিক্ষকেরা বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন। কোনও কোনও ক্ষেত্রে শিক্ষকদের অনুসরণ করে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন ছাত্রেরা।” তাঁর প্রশ্ন, সকলে এ ভাবে সরাসরি বিক্ষোভে চলে যাচ্ছেন কেন? দাবি জানানোর নির্দিষ্ট পদ্ধতি রয়েছে। শিক্ষাঙ্গনে এই পরিবেশ কখনওই কাম্য নয় বলে মন্তব্য করেন পার্থবাবু। টিএমসিপি অবশ্য এ দিনও দাবি করেছে, তারা ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখায়নি। নিজেদের বক্তব্য জানাতেই বুধবার হাজির হয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয়ে।

এই পরিস্থিতিতে উপাচার্য সুরঞ্জনবাবু জানান, ছাত্র-শিক্ষকদের মনোবল ফিরিয়ে আনার জন্য তিনি বিভিন্ন ক্যাম্পাস পরিদর্শন করবেন। ক্যাম্পাসে সন্ত্রাসের ঘটনার তদন্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তাদের নিয়ে একটি কমিটিও গড়া হয়েছে। ছাত্র, শিক্ষক সকলের সঙ্গে কথা বলে শিক্ষামন্ত্রীর কাছে রিপোর্ট পাঠাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

rajabazar science college notice vice-chancellor
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE