Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

পেটে সেলাই, স্যালাইন নিয়ে পরীক্ষা পার

একসঙ্গে ক্লাস করেছেন দীর্ঘদিন। আড্ডা দিয়েছেন অঢেল। কিন্তু চূড়ান্ত পরীক্ষার সময়েই তাঁকে বন্ধুদের থেকে কত বাধ্যতামূলক দূরে ঠেলে দিল একটা আকস্মিক অসুখ! বন্ধুদের সকলেই পরীক্ষা দিতে গিয়েছিলেন স্কুলের পোশাকে। তিনিও গিয়েছিলেন পরীক্ষা দিতে। কিন্তু তাঁর পরনে ছিল হাসপাতালের পোশাক।

শাদাব রাজা।

শাদাব রাজা।

সুপ্রিয় তরফদার
শেষ আপডেট: ২৬ মে ২০১৫ ০৩:৩৩
Share: Save:

একসঙ্গে ক্লাস করেছেন দীর্ঘদিন। আড্ডা দিয়েছেন অঢেল। কিন্তু চূড়ান্ত পরীক্ষার সময়েই তাঁকে বন্ধুদের থেকে কত বাধ্যতামূলক দূরে ঠেলে দিল একটা আকস্মিক অসুখ! বন্ধুদের সকলেই পরীক্ষা দিতে গিয়েছিলেন স্কুলের পোশাকে। তিনিও গিয়েছিলেন পরীক্ষা দিতে। কিন্তু তাঁর পরনে ছিল হাসপাতালের পোশাক। বাঁ হাতে স্যালাইনের নল। পেটের ডান পাশে তিনটি সেলাই। পাশে দাঁড়িয়ে তাঁর উপরে সতর্ক নজরদারি নার্সদের।

চিকিৎসকেরা নিষেধ করেছিলেন। কিন্তু অদম্য জেদ সেই নিষেধ অমান্য করার শক্তি জুগিয়েছিল। রোগযন্ত্রণা সয়ে, আরোগ্য নিকেতনের পোশাকেই গত ১০ মার্চ সিবিএসই-র দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাস পরীক্ষা দিয়েছিলেন অভিনব ভারতী স্কুলের শাদাব রাজা। সোমবার ওই পরীক্ষার ফল বেরিয়েছে। শাদাব পেয়েছেন মোট ৯৩.২ শতাংশ নম্বর, ইতিহাসে ৯৫। গোটা দেশে এ বার সার্বিক পাশের হার ৮২%। ছাত্রদের পাশের হার ৭৭.৭৭%, ছাত্রীদের ৮৭.৫৭%।

কলকাতার মহাত্মা গাঁধী রোডের বাসিন্দা শাদাব জানান, ২ মার্চ, পরীক্ষার প্রথম দিন ইংরেজি পরীক্ষা দিয়ে আসার পরেই তাঁর পেটে যন্ত্রণা শুরু হয়। প্রথমে তেমন গুরুত্ব দেননি। কিন্তু ব্যথা ক্রমশ বাড়তে থাকে। হলটা কী? চিকিৎসকেরা জানান, যত দ্রুত সম্ভব ওই তরুণের অ্যাপেনডিক্স অপারেশন করতে হবে। এবং অসুস্থ শরীরে পরীক্ষাটাও দেওয়া যাবে না।

শাদাব অবশ্য দমে যাওয়ার পাত্র নন। পরীক্ষা তিনি দেবেনই। কিন্তু পেড়ে ফেলতে চাইছে যন্ত্রণা। অস্ত্রোপচার না-করলেই নয়। অগত্যা ৮ মার্চ পেট কেটে অ্যাপেনডিক্স অপারেশন হল। শাদাবের কথায়, ‘‘পেটে অসহ্য যন্ত্রণা। অপারেশন থিয়েটারে শুয়ে আছি। চার দিকে চিকিৎসক, নার্স। শুয়ে শুয়ে ভাবছি, যে করে হোক, পরীক্ষা আমি দেবই।’’

কিন্তু ইতিহাস পরীক্ষা যে দু’দিন পরেই। অ্যানেস্থেশিয়া, অস্ত্রোপচারের ধকল কাটিয়ে এত অল্প সময়ে তৈরি হয়ে পরীক্ষার টেবিলে বসা যাবে কি! সংশয় যে না ছিল, তা নয়। তবে এটা-সেটা ভেবে হাল ছাড়েননি শাদাব। হাসপাতালের বিছানার শুয়েই চালিয়ে গিয়েছেন পড়াশোনা। পরীক্ষার দিন ওই বেসরকারি হাসপাতালের পোশাক পরে, হাতে স্যালাইনের বোতল নিয়েই সটান পৌঁছে যান পরীক্ষা কেন্দ্রে। স্কুলের অফিসঘরে তাঁর বসার ব্যবস্থা করা হন। পরীক্ষার শেষে সেখান থেকে ফের ওই বেসরকারি হাসপাতালে ফেরা। পরে ছুটি নিয়ে বাড়ি।

এ দিন পরীক্ষার ফল বেরোনোর পরে শাদাব এবং তাঁর পরিবার স্বভাবতই খুশি। শাদাবের স্কুলের অধ্যক্ষা শ্রাবণী সামন্তের কথায়, ‘‘ওই ছাত্রের মনের জোরের প্রশংসা তো করতেই হবে। সেই সঙ্গে সঙ্কটের সময়ে মনের জোর না-হারিয়ে ওর বাড়ির লোকজন যে-ভাবে সাহস জুগিয়েছেন, সেটাও বিরল।’’

বাবা নুর আলি বলেন, ‘‘শাদাবের কষ্ট দেখে খারাপ লেগেছে ঠিকই। তবে তা মোটেই প্রকাশ করিনি। ভয় ছিল, যদি ও দুর্বল হয়ে পড়ে! এই সাফল্যের পুরোটাই ওর নিজের।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE