আন্দোলন যতই তীব্র হোক, যাত্রী প্রত্যাখ্যান নিয়ে ট্যাক্সিচালকদের বিরুদ্ধে অভিযান কমবে না। এমনটাই সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার। ফলও মিলেছে হাতেনাতে। রাজ্য পরিবহণ দফতর সূত্রের খবর, যাত্রী প্রত্যাখ্যান নিয়ে ট্যাক্সিচালকদের বিরুদ্ধে অভিযোগের বহর আগের থেকে অনেকটাই কমেছে।
যাত্রী প্রত্যাখ্যান রুখতে মাস পাঁচেক আগে ফেসবুকে পেজ চালু করেছিল কলকাতায় পরিবহণ দফতরের অফিস ‘পাবলিক ভেহিক্লস ডিপার্টমেন্ট’ (পিভিডি)। কোনও ট্যাক্সি প্রত্যাখ্যান করলে ওই পেজে অভিযোগ করতে পারতেন যাত্রীরা। পিভিডি-র এক অফিসার জানাচ্ছেন, পেজ চালু হওয়ার পর থেকে প্রতি সপ্তাহে নিয়মিত সেখানে ৫০-৬০টি করে অভিযোগ জমা হচ্ছিল। এখন সেই অভিযোগ জমা পড়ার হার কমে হয়েছে সপ্তাহে চার-পাঁচটি।
তাতে অবশ্য সরকার যাত্রী প্রত্যাখ্যান নিয়ে নমনীয় হবে, এমন কোনও লক্ষণ নেই। বরং, যাত্রী প্রত্যাখ্যান নিয়ে ট্যাক্সিচালকদের উপরে এই চাপ বজায়ই রাখতে চান রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষ কর্তারা। পিভিডি সূত্রের খবর, গত মাসেই নানা অভিযোগে ২২ জন ট্যাক্সিমালিককে দফতরে ডেকে পাঠানো হয়েছিল। তাঁদের চালককেও সঙ্গে করে নিয়ে আসতে বলা হয়েছিল। এর মধ্যে নির্দিষ্ট তারিখে পরিবহণ দফতরের যাত্রী প্রত্যাখ্যান খতিয়ে দেখার সংশ্লিষ্ট কমিটির সামনে হাজির হয়েছেন মাত্র ন’জন ট্যাক্সিচালক। অভিযুক্তদের পাঁচ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল মিটারে কারচুপি করার। যদিও তা প্রমাণিত না-হওয়ায় সংশ্লিষ্ট ট্যাক্সিমালিকদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। বাকি চার জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল যাত্রী প্রত্যাখ্যানের। এর মধ্যে একটি ট্যাক্সির বিরুদ্ধে যাত্রী প্রত্যাখ্যানের দোষ প্রমাণিত হওয়ায় তাঁকে তিন হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
চিঠি পাওয়া সত্ত্বেও যে ১৩ জন শুনানিতে উপস্থিত ছিলেন না, সেই সব ট্যাক্সিচালককে ফের পরবর্তী একটি নির্দিষ্ট দিনে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ভাবে পরপর তিন বার চিঠি পাওয়া সত্ত্বেও না এলে ওই ১৩টি ট্যাক্সির পারমিট বাতিল করা হবে বলে জানিয়েছেন পিভিডি-র অধিকর্তা সি মুরুগান। তিনি বলেন, “এর আগে ৪০টি ট্যাক্সির পারমিট বাতিল করা হয়েছে। ওই সব ট্যাক্সিমালিককে বারবার চিঠি দেওয়া সত্ত্বেও তাঁরা শুনানিতে আসেননি। সে কারণেই তাঁদের পারমিট বাতিল করা হয়েছে।” যদিও পিভিডি সূত্রের খবর, পারমিট বাতিল হওয়ার পরে ওই ৪০টি ট্যাক্সির কয়েকটির মালিক ইতিমধ্যেই যোগাযোগ করে ফের পারমিট চালুর আবেদন জানিয়েছেন। মুরুগান বলেন, “ফের আবেদন জানালে আমরা ‘কেস টু কেস’ বিচার করে পারমিট আবার দিতেই পারি। কিন্তু অনুমোদন পাওয়ার পরে সংশ্লিষ্ট মালিককে যাত্রী প্রত্যাখ্যানের তিন হাজার টাকা জরিমানা এবং নতুন পারমিটের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ জমা করতে হবে। তবেই তিনি ফের পারমিট পাবেন।”
পরিবহণ কর্তারা জানিয়েছেন, মোটর ভেহিক্লস আইনের ১২০ ধারা অনুযায়ী ট্যাক্সির পারমিট বাতিল করা হচ্ছে। ওই ধারায় বলা আছে, ট্যাক্সির পারমিট পাওয়ার সময়ে মালিকদের বেশ কিছু শর্ত দেওয়া হয়। সেই সব শর্ত না মানা হলে পরিবহণ দফতর চাইলে সংশ্লিষ্ট ট্যাক্সির পারমিট বাতিল করতেই পারে। পরিবহণ দফতরের এক কর্তা বলেন, “যাত্রী প্রত্যাখ্যান করবেন না, এমন লিখিত নিশ্চয়তা দিয়েই রাস্তায় ট্যাক্সি নামান মালিকেরা। তাই যাত্রী প্রত্যাখ্যান করলে পরিবহণ দফতর চাইলে সংশ্লিষ্ট ট্যাক্সির পারমিট বাতিল করতেই পারে।”
শুধু পরিবহণ দফতরই নয়, কলকাতা পুলিশ সূত্রেও খবর, প্রশাসন কড়া হওয়ার পর থেকে এবং তিন হাজার টাকা জরিমানা চালু করার পর থেকে কলকাতার রাস্তায় যাত্রী প্রত্যাখ্যান অনেকটাই কমেছে। কলকাতা পুলিশের এক কর্তার কথায়, “আগে প্রত্যাখ্যান করলে মাত্র একশো টাকা জরিমানা দিতে হত। অনেক ক্ষেত্রেই ট্যাক্সিচালকেরা প্রত্যাখ্যান করে যাত্রীকে পাল্টা হুমকি দিতেন, পুলিশকে বললে কিছুই হবে না। একশো টাকা জরিমানা দিয়ে দেব। এখন তিন হাজার টাকা জরিমানা হয়ে গিয়ে সেটা অনেকটাই কমেছে।”
তবে পরিবহণ দফতরের নির্দেশ মেনে অধিকাংশ ট্যাক্সিমালিকই এখনও পর্যন্ত গ্যারাজ রেজিস্টার চালু করেননি বলে খবর। পরিবহণ দফতর ইতিমধ্যেই প্রত্যেক মালিককে নির্দেশ দিয়েছে, প্রতিদিন কোন চালক গাড়ি চালাচ্ছেন, তার একটি হিসেব রেজিস্টারে লিখে রাখতে হবে। যাতে অভিযোগের দিন যে চালক গাড়ি চালিয়েছেন, তাঁকে সহজেই চিহ্নিত করা যায়। এর পাশাপাশি জরিমানার প্রক্রিয়ায় প্রত্যাখ্যানের হার কমানো যাতে বজায় রাখা যায়, সেটার জন্য মালিকদের উপরে চাপ তৈরির কথা ভাবা হচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy