স্ত্রী-পরিবার নিয়ে বৃহস্পতিবার রাতে ট্যাক্সির অপেক্ষায় শরৎ বসু রোডে দাঁড়িয়ে ছিলেন রাহুল সেন। কিন্তু কোনও ট্যাক্সি যেতে চাইছিল না। সাহায্যের জন্য নজরে আসছিলেন না ট্রাফিক পুলিশও। হঠাৎই মোটরবাইক নিয়ে হাজির হলেন ভবানীপুর থানার দুই পুলিশকর্মী। এক ট্যাক্সিচালককে কড়া ভাষায় ধমক দিতেই সঙ্গে সঙ্গে যেতে রাজি হয়ে গেলেন তিনি।
গড়িয়ার বাবুলাল দাসের কপাল অবশ্য এতটা ভাল ছিল না। শুক্রবার রাত সাড়ে আটটা নাগাদ বেন্টিঙ্ক স্ট্রিটে কাজ সেরে বাড়িতে ফেরার সময়ে একটিও ট্যাক্সি পাননি তিনি। বাবুলাল বললেন, “লালবাজারের নাকের ডগায় তিনটে ট্যাক্সিকে দাঁড় করালেও চালকেরা কেউ গড়িয়া অবধি যেতে রাজি হননি।” শুধু তা-ই নয়, রাহুলের মতো তাঁকে সাহায্য করতে কোনও পুলিশকর্মীও সেখানে ছিলেন না।
ওই রাতেই চাঁদনি চক মেট্রো স্টেশনের কাছে একই অভিজ্ঞতা হয় কুঁদঘাটের বাসিন্দা, ৫০ বছরের রতন পালের। রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা একের পর এক ট্যাক্সি তাঁকে প্রত্যাখ্যান করলেও আশপাশে কোনও পুলিশের দেখা পাননি তিনি। বৃহস্পতিবার একই সমস্যায় পড়তে হয়েছে বেঙ্গল ট্যাক্সি অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক বিমল গুহকে। তিনি ট্যাক্সিচালকের বিরুদ্ধে বেনিয়াপুকুর থানায় অভিযোগও দায়ের করেছেন।
লালবাজারের পুলিশকর্তাদের দাবি, সম্প্রতি একের পর এক ট্যাক্সি-দৌরাত্ম্যের ঘটনা সামনে আসার পর থেকে তাঁরা সক্রিয় হয়েছেন। এমনকী, ট্যাক্সি-দমনে শুধু ট্রাফিক পুলিশের উপরে ভরসা না রেখে থানাগুলিকেও এই কাজে নামিয়েছেন পুলিশের শীর্ষ কর্তারা। কিন্তু সেটা যে কার্যত সিন্ধুতে বিন্দুর মতো সাহায্য, তা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন শহরের রাস্তায় ট্যাক্সির অপেক্ষায় থাকা বাবুলাল বা রতনের মতো অনেকেই। তাঁরা বলছেন, “পুলিশ যতই ধরপাকড় করুক, শহরের ট্যাক্সি-চিত্রে এখনও বিশেষ কোনও বদল আসেনি। রতন বললেন, “ফোন করে অভিযোগ জানাতেই পারতাম। কিন্তু লাভ কী?”
পুলিশ অবশ্য বলছে, ১০৭৩ নম্বরে ফোন করে অভিযোগ জানানোর ব্যবস্থা দীর্ঘ দিন ধরেই রয়েছে। সেখানে ফোন করলেই ওই এলাকায় থাকা ট্রাফিক পুলিশকর্মীরা ব্যবস্থা নেন। এখন তার সঙ্গে জুড়ে গিয়েছেন থানার পুলিশকর্মীরাও। প্রতি থানার তিন-চারটি দল মোটরবাইকে চেপে নিজেদের এলাকায় টহল দিচ্ছে। নাগরিকদের সাহায্য করার পাশাপাশি জরিমানাও করছেন তাঁরা। এক পুলিশকর্তা বললেন, “থানার কর্মীরাও যে তৎপর, তা শরৎ বসু রোডের ঘটনা থেকেই পরিষ্কার।” কিন্তু শহরের সর্বত্র ওই এলাকার মতো পুলিশি টহলদারি চালু হয়েছে কি না, তা নিয়ে অবশ্য প্রশ্ন রয়েই যাচ্ছে।
এই ব্যবস্থা যে শহরের সর্বত্র পুরোপুরি চালু হয়নি, তা অবশ্য মেনে নিয়েছেন লালবাজারের একাংশ। কিন্তু তাঁদের বক্তব্য, ট্যাক্সির এই রোগ খুব দ্রুত সারানো অসম্ভব। বিশেষ করে যে শহরে ট্যাক্সির সংখ্যার সঙ্গে ট্রাফিক পুলিশের অনুপাত অনেকটাই কম। তাই যে এলাকায় ট্রাফিক পুলিশের নজরদারি কম, সেখানে থানার দলগুলিকে টহল দিতে বলা হয়েছে। এক পুলিশকর্তার মন্তব্য, “অনেক সময়েই বয়স্ক বা মহিলারা রাস্তার মাঝখান থেকে ট্যাক্সি ধরার চেষ্টা করেন। সেখানেও যাতে হেনস্থার শিকার হতে না হয়, সে দিকে নজর রাখতে বলা হয়েছে।”
এই পরিস্থিতিতে শহরবাসীর প্রশ্ন, কবে সারবে ট্যাক্সির এই প্রত্যাখানের অসুখ? পুলিশের বক্তব্য, ট্যাক্সি-দৌরাত্ম্য কমাতে ইতিমধ্যেই বেশ কিছু কড়া দাওয়াই চালু করেছে তারা। অবাধ্য ট্যাক্সি ধরতে রাস্তায় বেশি সংখ্যক পুলিশ নামানো হয়েছে। যাত্রী প্রত্যাখানে তিন হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা করা হচ্ছে। প্রয়োজনে সাময়িক ভাবে লাইসেন্সও কেড়ে নিচ্ছে পুলিশ। কলকাতা পুলিশের ডি সি (ট্রাফিক) ভি সলোমন নিসাকুমার বলেন, “শনিবার রাত পর্যন্ত শহরে প্রায় ৭০০ গাড়িকে তিন হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। আর সেই সঙ্গে ৬৫ জনের লাইসেন্স সাময়িক ভাবে কেড়ে নেওয়া হয়েছে।”
পুলিশ সূত্রে খবর, ওই ৬৫ জন আপাতত ১৫ দিন গাড়ি চালাতে পারবেন না। ফের এমন অপরাধ করলে লাইসেন্স বাতিল করা হবে। ইতিমধ্যেই শহরের বিভিন্ন জায়গায় ট্যাক্সির জন্য নির্দিষ্ট ‘বে’ করা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, শহরে এখন ১১টি জায়গায় ওই ‘ট্যাক্সি বে’ থাকলেও আগামি মাসেই তা দ্বিগুণ করা হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy