বিশ্বভারতীর পরে এ বার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়।
হস্টেলের বন্ধ ঘরে এক ছাত্রীকে মারধর, শ্লীলতাহানির অভিযোগ উঠল যাদবপুরের এক দল ছাত্রের বিরুদ্ধে। মঙ্গলবার যাদবপুর থানায় এই মর্মে অভিযোগ দায়ের করেছেন ছাত্রীটি। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের পড়ুয়া। আর অভিযুক্তেরা মূলত ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ছাত্র। যদিও বিশ্ববিদ্যালয়-কর্তৃপক্ষের কাছে ওই ছাত্রী এখনও পর্যন্ত লিখিত ভাবে কোনও অভিযোগ দায়ের করেননি।
শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় জানান, যাদবপুরের উপাচার্য অভিজিৎ চক্রবর্তীর সঙ্গে তিনি কথা বলেছেন। অভিজিৎবাবু মন্ত্রীকে জানিয়েছেন, ওই ছাত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে লিখিত ভাবে কোনও অভিযোগ দায়ের করেননি। তবে পুলিশের কাছে দায়ের করা অভিযোগপত্রের ভিত্তিতেই বিশ্ববিদ্যালয়কে বিষয়টি খতিয়ে দেখার নির্দেশ দিয়েছেন মন্ত্রী। তিনি বলেন, “উপাচার্যকে বলেছি, বিষয়টি খতিয়ে দেখে দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোরতম ব্যবস্থা নিতে হবে।” পাশাপাশি পুলিশকে দ্রুত তদন্ত চালিয়ে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলেছে সরকার।
অভিযোগকারী ছাত্রীটি এ বছর ছাত্র সংসদের নির্বাচনে কলা শাখার একটি পদের জন্য তৃণমূল ছাত্র পরিষদ বা টিএমসিপি-র প্রার্থী হয়েছিলেন। যদিও ঘটনাটিতে কোনও রাজনৈতিক রং লাগানো ঠিক হবে না বলেই মন্তব্য করেছেন টিএমসিপি-র রাজ্য সভাপতি শঙ্কুদেব পণ্ডা। তাই দোষীদের কড়া শাস্তির দাবি জানালেও বিষয়টি নিয়ে তাঁদের কোনও রাজনৈতিক কর্মসূচি নেই বলে জানিয়ে দিয়েছেন শঙ্কুদেব।
অভিজিৎবাবু আপাতত দিল্লিতে। তাঁকে ফোন এবং এসএমএস করেও জবাব মেলেনি। রেজিস্ট্রার প্রদীপ ঘোষ এ দিন বিশ্ববিদ্যালয়ে যাননি। তাঁর সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা যায়নি।
পুলিশকে কী জানিয়েছেন অভিযোগকারী ছাত্রী?
যাদবপুর থানা সূত্রের খবর, ছাত্রীটি জানান, ২৮ অগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে কলা শাখার ফেস্ট চলছিল। সে-দিন সন্ধ্যায় শৌচাগারে যাওয়ার সময় উঁচু ক্লাসের কয়েক জন ছাত্র জোর করে তাঁকে একটি হস্টেলের ঘরে নিয়ে যায়। সেখানে আটকে রেখে ছাত্রীটির শ্লীলতাহানি ও মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। তিনি চিৎকার-চেঁচামেচি শুরু করলে অভিযুক্তেরা তাঁকে ছেড়ে দেয় বলে পুলিশকে জানিয়েছেন ওই ছাত্রী। পুলিশ জানায়, অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সূত্রের খবর, ছাত্রীটি ওই দিন এক বন্ধুকে নিয়ে ক্যাম্পাসে হাজির হন। তাঁর সেই সঙ্গী অবশ্য যাদবপুরের পড়ুয়া নন। নেশাগ্রস্ত অবস্থায় তাঁদের দু’জনকে ঘনিষ্ঠ ভাবে বসে থাকতে দেখেন এক দল ছাত্র। তাঁরাই ওই দু’জনকে নিয়ে যান বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ওল্ড পিজি’ হস্টেলে। সেখানে বহিরাগত যুবককে মারধর ও ছাত্রীটিকে ধমকধামক দিয়ে ধাক্কাধাক্কি করা হয় বলে অভিযোগ।
পুলিশি সূত্রে জানা গিয়েছে, ঘটনার পরের দিনই ওই ছাত্রী মৌখিক ভাবে বিষয়টি জানান বিশ্ববিদ্যালয়-কর্তৃপক্ষকে। সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েক জন কর্তা অভিযোগকারিণী এবং অভিযুক্তদের নিয়ে বৈঠকে বসেন। উপাচার্য সেখানে দু’পক্ষকে মিটমাট করে নেওয়ার পরামর্শ দেন বলে বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর। যদিও বিশ্ববিদ্যালয়ের কেউই এই বিষয়ে সরকারি ভাবে মুখ খোলেননি।
সম্প্রতি বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে কলাভবনের দুই ছাত্রী শ্লীলতাহানির শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ জানান। এক ছাত্রীর অভিযোগের ভিত্তিতে কলাভবনেরই তিন ছাত্র গ্রেফতার হয়েছেন। এ বার একই ধরনের অভিযোগ উঠল যাদবপুরে। মাসখানেক আগে যাদবপুরের দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের হস্টেল থেকে এক ছাত্রের ঝুলন্ত মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। পরপর এই দু’টি ঘটনার জেরে প্রশ্ন উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা নিয়েও।
বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কর্তা বলেন, “বিশাল ক্যাম্পাসের কোথায় কে কী করছে, তার উপরে তো সব সময় নজরদারি চালানো সম্ভব নয়। তবে আরও কড়া নিরাপত্তার বন্দোবস্ত করা যায় কি না, তা ভেবে দেখা হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy