Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

বাইশ বছর পরে হারানো বাবাকে পেলেন মেয়ে

মহানগরের রাস্তার পাশে শুয়ে কাতরাচ্ছিলেন এক বৃদ্ধ। ভবঘুরে চেহারা। এই যন্ত্রণাই যে ২২ বছর পরে তাঁকে ফেরাবে পরিবারের কাছে, ভাবতেও পারেননি বোকারোর ইস্পাতনগরীর বাসিন্দা আবুল হাসান! পুলিশ জানায়, ১৯৯৩-এ নিখোঁজ হন আবুল। দিন কয়েক আগে কলকাতা পুলিশের ফোনে সেই হারানো বাবার খোঁজ পেয়ে চমকে ওঠেন আবুলের মেয়ে চাঁদনি খাতুন। বাবা হারানোর সময়ে তাঁর বয়স ছিল মাত্র এক বছর! আর নিত্য দিন নানা অভিযোগের কাঠগড়ায় ওঠা কলকাতা পুলিশের ‘মানবিক’ মুখও ফুটে উঠেছে চাঁদনি-আবুলের মিলনে! কী ভাবে পরিবার ফিরে পেলেন আবুল?

বাবার সঙ্গে চাঁদনি। —নিজস্ব চিত্র।

বাবার সঙ্গে চাঁদনি। —নিজস্ব চিত্র।

মেহবুব কাদের চৌধুরী
শেষ আপডেট: ০১ মার্চ ২০১৫ ০০:৪০
Share: Save:

মহানগরের রাস্তার পাশে শুয়ে কাতরাচ্ছিলেন এক বৃদ্ধ। ভবঘুরে চেহারা। এই যন্ত্রণাই যে ২২ বছর পরে তাঁকে ফেরাবে পরিবারের কাছে, ভাবতেও পারেননি বোকারোর ইস্পাতনগরীর বাসিন্দা আবুল হাসান!

পুলিশ জানায়, ১৯৯৩-এ নিখোঁজ হন আবুল। দিন কয়েক আগে কলকাতা পুলিশের ফোনে সেই হারানো বাবার খোঁজ পেয়ে চমকে ওঠেন আবুলের মেয়ে চাঁদনি খাতুন। বাবা হারানোর সময়ে তাঁর বয়স ছিল মাত্র এক বছর!

আর নিত্য দিন নানা অভিযোগের কাঠগড়ায় ওঠা কলকাতা পুলিশের ‘মানবিক’ মুখও ফুটে উঠেছে চাঁদনি-আবুলের মিলনে! কী ভাবে পরিবার ফিরে পেলেন আবুল?

কলকাতা পুলিশের এক কর্তা বলেন, রাস্তার পাশ থেকে অসুস্থ অবস্থায় উদ্ধার করার পরে আবুলকে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরিজনের খোঁজ না মেলায় তাঁর দায়িত্ব নিতে এগিয়ে আসে এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা।

পুলিশ জানায়, ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্মীরাই বৃদ্ধের সঙ্গে কথা বলে জানেন, বিহারের নালন্দায় তাঁর বাড়ি। তালতলা থানার অতিরিক্ত ওসি শান্তনু মজুমদার এবং দুই এসআই অতীন্দ্র মণ্ডল ও সুনীল দেবনাথকে বৃদ্ধের বাড়ি খোঁজার ভার দেওয়া হয়। নালন্দায় এসপি-র অফিসে যোগাযোগ করা হয়। গ্রামের কিছু পুরনো বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে পুলিশ জানতে পারে, বহু দিন আগেই আবুল পরিবার-সহ ঝাড়খণ্ডের বোকারোয় চলে যান। সেই সূত্রেই ইস্পাতনগরীতে আবুলের পরিবারের খোঁজ মেলে। পরিজনেরা জানিয়েছেন, আবুল এক সময়ে বোকারো স্টিল প্ল্যান্টে চাকরি করতেন। মানসিক অবসাদের কারণে ১৯৯০ সালে স্বেচ্ছাবসর নেন। ১৯৯৩-এ হঠাৎই উধাও হয়ে যান।

পুলিশের কাছে খবর পেয়েই চাঁদনি এক দাদার সঙ্গে বৃহস্পতিবার হাজির হন তালতলা থানায়। তার পরে মেডিক্যাল। “কার্যত প্রথম বার বাবাকে দেখে চোখের জল সামলাতে পারেননি চাঁদনি,” বললেন এক পুলিশ অফিসার। সে দিনই বাবাকে নিয়ে বোকারো ফেরেন তিনি। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার তরফে নিতাইদাস মুখোপাধ্যায় বলেন, “সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় বাইশ বছর পরে আবুলের পরিবারে ফেরা দেখে ভাল লাগছে।”

শনিবার ফোনে চাঁদনি বলেন, “বাবার কোনও ছবি ছিল না। মায়ের মুখেই গল্প শুনতাম। ভাবিনি, কোনও দিন ফিরে পাব। কলকাতা পুলিশকে অসংখ্য ধন্যবাদ।” তালতলা থানার অফিসারদের প্রশংসা করে ডিসি (সেন্ট্রাল) দেবেন্দ্রপ্রকাশ সিংহ বলেন, “ভাল কাজের জন্য ওই পুলিশকর্মীদের পুরস্কৃত করা হবে।”

বাবাকে ফিরে পেয়েও বাইশ বছরের দগদগে স্মৃতি ভুলতে পারছেন না চাঁদনি। বললেন, “আমি একরত্তি ছিলাম। তিন দাদাও শৈশব পেরোয়নি। মা তখন লোকের বাড়ি কাজ করে সংসার চালাতেন।” এখন অবশ্য সব ভুলে শুধু বাবাকে নিয়েই মেতে থাকতে চান চাঁদনি। “এত দিন পরে বাবাকে পেয়েছি। আর কিছু চাই না,” টেলিফোনের ওপারে ধরে আসে তরুণীর গলা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE