Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

বিদেশিদের টাকা লোপাট, শহরে গ্রেফতার জালিয়াতি চক্রের চাঁই

বছর চারেক আগে বিদেশি জালিয়াতেরা ঘাঁটি গেড়েছিল এ শহরে। এখানে বসেই এ দেশের নাগরিকদের ক্রেডিট কার্ড জালিয়াতি করে টাকা বিদেশে পাচার করত তারা। ২০১৪ সালে ছবিটা উল্টো। এ দেশে বসে বিদেশি নাগরিকদের টাকা হাতাচ্ছিল দেশি জালিয়াতেরা। বুধবার শহর থেকে ক্রেডিট কার্ড জালিয়াতির এক চক্রকে গ্রেফতার করার পরে এমনই দাবি করছেন লালবাজারের গোয়েন্দারা।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৫ জুলাই ২০১৪ ০০:৩৭
Share: Save:

বছর চারেক আগে বিদেশি জালিয়াতেরা ঘাঁটি গেড়েছিল এ শহরে। এখানে বসেই এ দেশের নাগরিকদের ক্রেডিট কার্ড জালিয়াতি করে টাকা বিদেশে পাচার করত তারা। ২০১৪ সালে ছবিটা উল্টো। এ দেশে বসে বিদেশি নাগরিকদের টাকা হাতাচ্ছিল দেশি জালিয়াতেরা। বুধবার শহর থেকে ক্রেডিট কার্ড জালিয়াতির এক চক্রকে গ্রেফতার করার পরে এমনই দাবি করছেন লালবাজারের গোয়েন্দারা।

গোয়েন্দারা জানাচ্ছেন, বিনা পরিশ্রমে আয়ের লোভে এই চক্রে জড়িয়ে পড়েছেন এক শ্রেণির দোকানদারেরাও। তাঁদের ‘শিখণ্ডী’ খাড়া করেই কলকাতা-সহ দেশের বহু শহরে চলছিল এই চক্র। মে মাসে এক বেসরকারি ব্যাঙ্ক এই জালিয়াতির ফাঁদে পড়ে প্রায় ৩৬ লক্ষ টাকা খোয়ানোর অভিযোগ দায়ের করে। পুলিশের অবশ্য দাবি, গোটা দেশে ছড়িয়ে থাকা এই জালিয়াতির পরিমাণ কয়েক কোটি টাকা।

যুগ্ম কমিশনার (অপরাধ দমন) পল্লবকান্তি ঘোষ জানান, বুধবার শহরের এক হোটেল থেকে ব্যাঙ্ক জালিয়াতি চক্রের চাঁই রাকেশ শর্মাকে ধরা হয়। ধরা পড়ে সৌম্য বসু, হীরেন আচার্য এবং কুলদীপ সিংহরাঠৌর নামে আরও তিন জন। উদ্ধার হয়েছে কার্ড জালিয়াতির যন্ত্র, সোয়াইপ মেশিন, জাল ক্রেডিট ও ডেবিট কার্ড, ল্যাপটপ, মোবাইল। সৌম্য কলকাতার ব্যবসায়ী। বাকিরা জালিয়াতি চক্রের ‘লিঙ্কম্যান’ বলে দাবি পুলিশের।

পুলিশ জানায়, ধৃতদের জেরা করে চেন্নাই, হরিয়ানা, পুণে-সহ দেশ জুড়ে চলা এই চক্র সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য মিলেছে। রাকেশকে জেরায় পুলিশ জেনেছে, বছর কয়েক আগে বেঙ্গালুরুর এক ব্যক্তির থেকে সে এই বিদ্যা রপ্ত করে। রাকেশের সেই ‘শিক্ষকের’ খোঁজেও তল্লাশি হবে বলে লালবাজার সূত্রের খবর। এই চক্রের খোঁজ করছিল চেন্নাই, চণ্ডীগড়ের পুলিশও। তাঁদেরও খবর পাঠানো হবে বলে জানা গিয়েছে।

কী ভাবে জালিয়াতি চক্র চালাত দুষ্কৃতীরা? পুলিশ জানায়, বিদেশের চক্র মারফত সে দেশের নাগরিকদের ক্রেডিট ও ডেবিট কার্ডের তথ্য হাতিয়ে নিত রাকেশ ও তার দল। ঘরে বসেই যন্ত্র মারফত সেই তথ্য খালি ম্যাগনেটিক কার্ডে ভরত। ওই কার্ডটি হয়ে যেত আসল কার্ডের প্রতিলিপি। ব্যাঙ্ক জালিয়াতি শাখার বর্তমান ওসি সৌম্য বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে একটি দল ২০১০ সালে প্রথম এমন চক্রের হদিস পায়। তখন কিছু নাইজিরীয় নাগরিককে ধরা হয়। পুলিশ জানায়, ওই জালিয়াতেরা এ দেশের কার্ডের তথ্য হাতিয়ে নানা দামি জিনিস কিনত। পরে সেগুলি বিক্রি করে আয় করত। এ বার বিভিন্ন ভুয়ো অ্যাকাউন্ট মারফত সরাসরি টাকা হাতাচ্ছে তারা। এই কাজে তারা ব্যবহার করছে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ীকে।

গোয়েন্দারা জানাচ্ছেন, ব্যবসায়ীদের কার্ড সোয়াইপ মেশিন হাতিয়ে নিত জালিয়াতেরা। জিনিস কেনার ছল করে তাতে কার্ড পাঞ্চ করত। ফলে জিনিসের দাম বাবদ টাকা দোকানদারের অ্যাকাউন্টে জমা পড়ত। কিন্তু জিনিস কেনা হত না। দোকানদার অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা জালিয়াতদের দেওয়া ভুয়ো অ্যাকাউন্টে পাঠাতেন। এক গোয়েন্দাকর্তা বলেন, “এই চক্রের সঙ্গে যুক্ত দোকানদারেরা মোট টাকার ১৫-২০ শতাংশ কমিশন পেতেন।’’ পুলিশ জানায়, দোকানদারের অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠানোর পরেই বিদেশি ব্যাঙ্ক থেকে এ দেশের ব্যাঙ্ককে জানান হত, বিদেশিদের কার্ড জালিয়াতি হয়েছে। তাই খোয়া যাওয়া টাকা এ দেশের ব্যাঙ্ককে ফেরত দিতে হবে।

মে মাসে এমন অভিযোগ পাওয়ার পরে লালবাজারের গোয়েন্দারা দেখেন, বেশির ভাগ টাকাই রাজস্থানে একটি অ্যাকাউন্টে জমা পড়ছে। কিন্তু অ্যাকাউন্ট-মালিকের পরিচয় মেলেনি। পরে স্থানীয় সোর্স মারফত রাকেশের খোঁজ মেলে। জয়পুরের একটি ঘিঞ্জি এলাকার ফ্ল্যাটে বসে সে এই চক্র চালাত বলে জানিয়েছে পুলিশ। টোপ দিয়ে রাকেশকে কলকাতায় ডেকে পাঠায় পুলিশ। লালবাজার সূত্রের খবর, সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে রাকেশ বুধবার শহরের এক পাঁচতারা হোটেলে ওঠে। এ দিনই ব্যাঙ্ক জালিয়াতি দমন শাখার অতিরিক্ত ওসি নীলকণ্ঠ রায়ের নেতৃত্বে একটি দল হোটেলে হানা দিয়ে তাকে ধরে। রাতে ধরা পড়ে বাকিরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

money fraud imposter leader arrested
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE