বেহাল অবস্থায় স্কুল চত্বর। ছবি: অরুণ লোধ
বন্ধ রয়েছে প্রি প্রাইমারি বিভাগে ভর্তি। ৫৭টি শিক্ষক পদের ২৪টি শূন্য। দ্বিতল হোস্টেল ভবনটিরও খারাপ অবস্থা। তথৈবচ স্কুলঘরগুলিরও। ব্রেইল বইয়ের ছাপাখানাটি কয়েক বছর বন্ধ। ব্রেইল চিত্রশিক্ষার আনগ্রেডেড ক্লাসটি এখন আর হয় না। বন্ধ হয়ে গিয়েছে কারিগরি শিক্ষা, লো ভিশন ক্লিনিক এবং কম্পিউটার ল্যাব। প্রায় ১০০ জন পড়ুয়া নিয়ে ধুঁকছে বেহালার ‘ক্যালকাটা ব্লাইন্ড স্কুল’। পরিকাঠামো ভেঙে পড়ায় সম্প্রতি হাইকোর্টের নির্দেশে রাজ্যের গণশিক্ষা দফতর স্কুলের ম্যানেজিং কমিটি ভেঙে অ্যাডমিনিস্ট্রেটর নিয়োগ করেছে।
শতবর্ষেরও বেশি পুরনো এই ব্লাইন্ড স্কুলটিতে আশির দশকে প্রায় ১৮০ জনের মতো ছাত্রছাত্রী ছিল। এখন তা ১০০-র নীচে নেমে গিয়েছে। বেশিরভাগই আবাসিক। অভিযোগ, প্রায় ভেঙে পড়ার মতো অবস্থায় রয়েছে হোস্টেল ভবনটি। অপরিসর জায়গায় অস্বাস্থ্যকর ভাবে থাকে ছাত্রছাত্রীরা। ২০১১ থেকে বন্ধ হয়ে গিয়েছে প্রি প্রাইমারিতে ভর্তি। আনগ্রেডেড ক্লাসটিও তখন থেকেই বন্ধ। স্কুলের এক শিক্ষক জানাচ্ছেন, পড়ে থেকে থেকে নষ্ট হচ্ছে কম্পিউটার ল্যাব এবং লো ভিশন ক্লিনিকের কম্পিউটার-সহ মূল্যবান যন্ত্রপাতি। ২০০১ থেকে শুরু হয়েছিল ব্রেইল বইয়ের ছাপাখানাটি। এখানে ইতিহাস এবং ভূগোলের ব্রেইল বই ছাপা হত। বিজ্ঞান-সহ অন্যান্য বইয়ের ব্রেইল ছাপাখানা রয়েছে নরেন্দ্রপুর ব্লাইন্ড বয়েজ অ্যাকাডেমিতে। অন্যান্য ব্লাইন্ড স্কুলগুলিকে বিনামূল্যে বই দেওয়ার জন্য রাজ্য সরকার এই স্কুল থেকে প্রতি বছর ৫০-৬০ হাজার টাকার বই কিনত। এর বদলে এই স্কুল অন্যান্য বই বিনামূল্যে পেত। ২০১০ থেকে ’১২ পর্যন্ত ধুঁকে ধুঁকে চলে তা বর্তমানে বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ব্রেইলের ছাপাখানা বন্ধ হওয়ায় বই পেতে সমস্যা হচ্ছে ছাত্রছাত্রীদের। ব্রেইল বই ছাপানোর চার-পাঁচটি বিদেশি মেশিন পড়ে থেকে নষ্ট হয়ে গিয়েছে।
বয়সে রাজ্যে প্রথম, এশিয়ায় দ্বিতীয় এই ব্লাইন্ড স্কুলটিতে এসেছিলেন হেলেন কেলার। এখান থেকে পাশ করে বেরনো ছাত্রছাত্রীরা দেশে-বিদেশে স্ব-স্ব ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। শিক্ষকের অভাবে সেই স্কুলই ঘোর সঙ্কটে। ৫৭টি শিক্ষক পদের ২৪টি শূন্য। ছাত্রছাত্রীদের অভিযোগ, দ্বাদশ শ্রেণীর স্কুলটিতে অঙ্ক, পদার্থবিদ্যা এবং জীববিদ্যায় এক জনও শিক্ষক নেই। বাংলা ও ইংরেজির দু’টি করে পদের প্রতিটিতে রয়েছেন এক জন করে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাদশ শ্রেণীর এক ছাত্রীর অভিযোগ, কয়েক বছরে পড়ানোর মান অনেকটাই পড়ে গিয়েছে। একের পর এক কারিগরি শিক্ষার ক্লাস বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পরবর্তী কালে চাকরি ক্ষেত্রে সমস্যায় পড়ছে পড়ুয়ারা। শ্যামলী সর্দার নামে এক অভিভাবক জানান, এমনিতেই দৃষ্টিহীনদের জন্য উপযুক্ত স্কুলের অভাব। খুব ছোটবেলা থেকেই শিক্ষার পরিকাঠামোয় আনতে না পারলে পরবর্তী ক্ষেত্রে বড় সমস্যা হবেই। প্রি প্রাইমারি উঠে যাওয়ায় খুবই সমস্যা হচ্ছে। শিক্ষকদের একাংশের দাবি, শিক্ষক নিয়োগ ২০০৩ থেকে বন্ধ। এগারো বছরে কয়েক বার বিজ্ঞাপন দিয়েও কোনও লাভ হয়নি।
ক্যালকাটা ব্লাইন্ড স্কুলের বর্তমান টিচার ইন চার্জ লিজা বন্দ্যোপাধ্যায়, এই সব অভিযোগের প্রেক্ষিতে কোনও কথা বলতে নারাজ। তাঁর দাবি, “বহু পুরনো স্কুল। সমস্যা থাকবেই। সে সব মেটাতে সচেষ্ট কর্তৃপক্ষ। তবে বর্তমানে স্কুলের দায়িত্বে রয়েছেন দক্ষিণ ২৪ পরগনার অতিরিক্ত জেলাশাসক।” অতিরিক্ত জেলা শাসক (দক্ষিণ ২৪ পরগনা) অলোকেশপ্রসাদ রায় বলেন, “বিষয়টি আমরা দেখছি। এ মুহূর্তে স্কুল চালানোই আমাদের প্রাথমিক লক্ষ্য। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব স্কুলে নতুন ম্যানেজমেন্ট কমিটি গঠনের চেষ্টা করা হচ্ছে। তাঁদেরই উপরে স্কুল পরিচালনার ভার তুলে দেওয়া হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy