রাস্তা আটকে সিভিক পুলিশকর্মীদের বিক্ষোভ। বৃহস্পতিবার, রানি রাসমণি অ্যাভিনিউয়ে। —নিজস্ব চিত্র।
পথের শৃঙ্খলা রক্ষা করা যাঁদের কাজ, নিয়ম ভেঙে অবরোধে সামিল হয়ে নাগরিক দুর্ভোগের কারণ হলেন তাঁরাই। বৃহস্পতিবার দিনের শুরুতেই সিভিক পুলিশদের সেই অবরোধে নাজেহাল হলেন সাধারণ যাত্রীরা।
এ দিন সকাল ন’টা নাগাদ ধর্মতলার ডোরিনা ক্রসিংয়ে রাজ্যের প্রায় পনেরো হাজার সিভিক পুলিশ কর্মী জড়ো হন। পুলিশ সূত্রে খবর, প্রায় চল্লিশ মিনিট রাস্তা আটকে অবরোধ করেন তাঁরা। ফলে জওহরলাল নেহরু রোড, চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ, এস এন ব্যনার্জি রোডে তুমুল যানজট হয়। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে দুপুর বারোটা বেজে যায়।
যান নিয়ন্ত্রণ, আইনশৃঙ্খলা-সহ পুলিশের বিভিন্ন কাজে সাহায্যের জন্য রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় এই সিভিক পুলিশদের নিয়োগ করেছিল সরকার। পুলিশের এক কর্তা দাবি করেন, এই সিভিক পুলিশেরা রাজ্যে পুলিশবাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ বিশেষত উৎসবের মরসুমে পরিস্থিতি সামাল দিতে তাদের সবচেয়ে বেশি দরকার পড়ে। তাদেরই এমন নজিরবিহীন বিক্ষোভ নিয়ে তাই প্রশ্ন উঠেছে পুলিশেরই একাংশে। তাঁদের বক্তব্য, সিভিক পুলিশদের এই কাজ করার সাহস কারা জোগালো, তা তদন্ত করে দেখা দরকার। না হলে ভুল বার্তা যাবে সাধারণ মানুষের কাছে। যদিও প্রকাশ্যে এই বিষয়ে মুখ খুলতে চাননি রাজ্য পুলিশের কোনও কর্তাই।
সিভিক পুলিশের সংগঠন ওয়েস্ট বেঙ্গল সিভিক পুলিশ অ্যাসোসিয়েশন এ দিন বিভিন্ন দাবিতে কলকাতার রানি রাসমণি অ্যাভিনিউয়ে প্রকাশ্য সমাবেশের ডাক দেয়। কিন্তু সকালে সেখানে কোনও মঞ্চ না থাকায় জেলা থেকে আসা কয়েক হাজার সিভিক পুলিশ ডোরিনা ক্রসিং অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন। অভিযোগ, পুলিশ প্রথমে লাঠি নিয়ে তাঁদের ধাওয়া করে। লাঠির আঘাতে দুই সিভিক পুলিশকর্মী জখমও হন।
এক পুলিশকর্তা জানান, ব্যস্ত সময়ে ডোরিনা ক্রসিং আটকে রাখায় ধর্মতলার বিভিন্ন রাস্তায় প্রচুর গাড়ি আটকে যায়। তাই সিভিক পুলিশদের রানি রাসমণি অ্যাভিনিউয়ে সরতে বলা হয়। সেখানেই বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত সভা করার অনুমতি দেওয়া হয়।
সিভিক পুলিশের সংগঠনের সম্পাদক রাকিবুল ইসলাম ও সভাপতি সঞ্জয় পারিয়া জানান, এক মাস কাজ করলে চার মাস পরে পারিশ্রমিক মেলে। কোনও নিয়োগপত্র নেই। উর্দি বা নিরাপত্তারও বালাই নেই। এমনকী সিভিক পুলিশের কাজ করতে গিয়ে মৃতদের পরিবারকে কোনও সাহায্যও করা হয় না। সঞ্জয় বলেন, “নিয়োগের সময়ে থানায় শুধু একটা খাতায় নাম লিখে বলা হয়েছিল তোমরা আজ থেকে পুলিশ হয়ে গেলে।” সংগঠনের দুই কর্তাই জানান, নির্ধারিত সরকারি মজুরি, অন্য সরকারি কর্মীদের মতো ইএসআই, গ্র্যাচুইটি-সহ সামাজিক সুরক্ষা এবং অন্য পুলিশকর্মীদের মতো প্রশিক্ষণের দাবি জানিয়ে এই কর্মসূচির ডাক দেন তাঁরা। সভা থেকেই শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটকের সঙ্গে দেখা করেন সংগঠনের একটি প্রতিনিধিদল।
পুলিশ সূত্রে খবর, গোটা রাজ্যে মোট দেড় লক্ষ সিভিক পুলিশ রয়েছেন। বিভিন্ন থানায় তাঁদের নাম নথিভুক্ত করা রয়েছে। দরকার পড়লে তাঁদের ডাকা হয়। কাজের সময়ে দৈনিক পরিশ্রমিক দেওয়া হয় ১৪১ টাকা ৮১ পয়সা করে। এঁদের প্রথমে ৯০ দিনের জন্য কাজে নেওয়া হয়। পরে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১২০ দিনে। রাজ্য পুলিশের এক উচ্চপদস্থ কর্তা বলেন, “সিভিক পুলিশদের এই ধরনের আচরণ শৃঙ্খলাভঙ্গের শামিল এবং শাস্তিযোগ্য। পুলিশের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা প্রকাশ্যে এই ধরনের বিক্ষোভ দেখাতে পারেন না।”
তা হলে কী করে এই ঘটনা ঘটল? কেন বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হল না?
রাজ্য পুলিশের ওই কর্তা বলেন, “আমরা পরিস্থিতির উপরে নজর রাখছিলাম। লালবাজারের রিপোর্ট পেয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ভাবা হবে।” এ বিষয়ে কিছু বলতে চাননি লালবাজারের কর্তারা। রাজ্য পুলিশের তরফে সিভিক পুলিশের দায়িত্বে রয়েছেন স্পেশাল আইজি (হেড কোয়াটার্স) সঞ্জীব বসু। তিনিও বলেন, “এ নিয়ে কোনও কথা বলব না।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy