Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

বেহাল নজরদারি, লাইনে ফাটল মেট্রোয়

আগেভাগে লাইনের ফাটল টের পাওয়ার প্রযুক্তি রয়েছে। কিন্তু প্রযুক্তি ব্যবহার করে পর্যবেক্ষণ যদি ঠিকমতো না হয়, তবে ফাটলে চাকা পড়ে ট্রেন লাইনচ্যুত হয়ে দুর্ঘটনাও ঘটতে পারে বলে মনে করেন রেলকর্তাদের একাংশ। বুধবার সকালে যার সাক্ষী রইল কলকাতার মেট্রো।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২২ জানুয়ারি ২০১৫ ০০:০০
Share: Save:

আগেভাগে লাইনের ফাটল টের পাওয়ার প্রযুক্তি রয়েছে। কিন্তু প্রযুক্তি ব্যবহার করে পর্যবেক্ষণ যদি ঠিকমতো না হয়, তবে ফাটলে চাকা পড়ে ট্রেন লাইনচ্যুত হয়ে দুর্ঘটনাও ঘটতে পারে বলে মনে করেন রেলকর্তাদের একাংশ। বুধবার সকালে যার সাক্ষী রইল কলকাতার মেট্রো।

এ দিন সকাল ৯টা ২০ মিনিট নাগাদ বেলগাছিয়া স্টেশনের কাছে সুড়ঙ্গে লাইনে ফাটল ধরা পড়ে। আগে থেকে তার অস্তিত্ব জানা যায়নি। লাইনের ওই অংশ পার হওয়ার সময়ে বিকট শব্দ শুনে চালক ট্রেন থামিয়ে দেন। পরীক্ষায় দেখা যায়, লাইনে ফাটল রয়েছে। প্রায় আধ ঘণ্টা বন্ধ থাকে মেট্রো চলাচল। তবে চালকের নজর এড়ালে বড় বিপদ হতে পারত বলে ধারণা মেট্রোকর্তাদের একাংশের।

রেলকর্তাদের বক্তব্য, লাইনে ফাটল সম্পূর্ণ আটকানো না গেলেও ফাটলের অস্তিত্ব আগেভাগে টের পেতে প্রযুক্তি আছে। কিন্তু ঠিক মতো পর্যবেক্ষণ করা না হলে তা টের পাওয়া যাবে না। বুধবার তেমনই ঘটেছে বলে মেট্রোকর্তাদের একাংশের দাবি। তাঁদের বক্তব্য, চালক ফাটলের কথা জানতেন না। বিকট শব্দ শুনে তিনি ব্রেক কষাতেই বেঁচে যায় ট্রেনটি।

কী কী কারণে লাইনে ফাটল ধরতে পারে? বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য:

১) কেমিক্যাল ত্রুটি (তৈরির সময়ে লোহায় হাইড্রোজেন গ্যাসের বুদবুদ থেকে যাওয়া) থাকলে,

২) লাইনের বহনক্ষমতার চেয়ে বেশি মাল নিলে,

৩) তৈরির সময়ে ভিতরে ফাঁপা অংশ থেকে গেলে,

৪) লাইনের লোহায় মরচে পড়ে ক্ষয় হলে এবং

৫) তাপমাত্রার হেরফের ঘটলে। লাইনের মাঝে ফাটল ধরে সাধারণত প্যানড্রোল ক্লিপের ফুটো থেকে মরচে পড়ে। কিন্তু ফিশপ্লেটের কাছে ফাটল ধরে তাপমাত্রার হেরফেরে।

বিশেষজ্ঞদের দাবি, এ দিন মেট্রোর লাইনের কোথায় ফাটল ধরেছে, তা সঠিক জানা গেলে স্পষ্ট করে কারণ বলা সম্ভব হত।

মেট্রোকর্তারা সরকারি ভাবে জানান, এ দিনের ফাটল তাপমাত্রার তারতম্যেই। তবে এই যুক্তি কর্তাদের আর এক অংশ মানতে চাননি। তাঁদের দাবি, সুড়ঙ্গে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের যন্ত্র আছে। তাপমাত্রা হেরফেরের অর্থ ওই যন্ত্রও পুরোপুরি খারাপ হয়ে গিয়েছে।

তবে কি মেট্রোয় লাইন পর্যবেক্ষণ হচ্ছে না? মেট্রো সূত্রের খবর, আগে ‘কি-ম্যানেরা’ হাতুড়ির মতো একটি যন্ত্র দিয়ে ঠুকতে ঠুকতে পায়ে হেঁটে লাইন পর্যবেক্ষণ করতেন। সেই পদটিই তুলে দিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। এখন তার বদলে ট্রলিতে চেপে কিছু ট্র্যাক-ম্যান ঘোরেন। তাঁদের পক্ষে লাইনের ভিতরের অবস্থা দেখা সম্ভব হচ্ছে না। এমনকী, আগে মেট্রোর চিফ ইঞ্জিনিয়ার সদলবল প্রতি শনিবার লাইন পর্যবেক্ষণ করতেন। এখন তা-ও হয় না বলে মেট্রো সূত্রে খবর। মাটির উপরে সাধারণ রেললাইন পরীক্ষার জন্য রয়েছে ‘আল্ট্রাসাউন্ড ফ্ল ডিটেক্টর’। মেট্রোর ওই যন্ত্রগুলিও দীর্ঘদিন খারাপ। ফলে লাইন পর্যবেক্ষণ হচ্ছে না বলে আগেভাগে ধরা পড়ছে না ফাটল। তাতেই বাড়ছে যাত্রীদের আশঙ্কা।

এ দিন দমদম থেকে গিরিশ পার্ক পর্যন্ত প্রায় আধ ঘণ্টা মেট্রো বন্ধ রাখা হয়। নাকাল হন অসংখ্য যাত্রী। লাইন মেরামতির পরে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়। তবে এই আধ ঘণ্টায় গিরিশ পার্ক থেকে কবি সুভাষ পর্যন্ত ট্রেন চলেছে বলে কর্তৃপক্ষের দাবি। সকাল ১০টার পরে পরিষেবা পুরো স্বাভাবিক হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

metro rail track crack
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE