Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

ভোট রঙ্গ

‘‘আপনি আমাকে আটকানোর কে? জানেন, আপনাকে এখনই বদলি করে দিতে পারি!’’— কর্তব্যরত পুলিশকর্মীকে বলছিলেন ৬৭ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থী বিজন মুখোপাধ্যায়ের মুখ্য নির্বাচনী এজেন্ট স্বপন চক্রবর্তী। নেতার এই মেজাজে থমথমে ভোটের আবহ। পুলিশের দাবি, দু’জন তরুণী কোনও পরিচয়পত্র ছাড়াই বার বার বুথে ঢুকছিলেন। সঙ্গে কোনও না কোনও ভোটার। বাধা দিতেই এজেন্ট এমন অগ্নিশর্মা!

বর্তমান। মিত্র ইনস্টিটিউশনে ভোট দিয়ে বেরোচ্ছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

বর্তমান। মিত্র ইনস্টিটিউশনে ভোট দিয়ে বেরোচ্ছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

শেষ আপডেট: ১৯ এপ্রিল ২০১৫ ০০:০৭
Share: Save:

বদলা নয় বদলি

‘‘আপনি আমাকে আটকানোর কে? জানেন, আপনাকে এখনই বদলি করে দিতে পারি!’’— কর্তব্যরত পুলিশকর্মীকে বলছিলেন ৬৭ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থী বিজন মুখোপাধ্যায়ের মুখ্য নির্বাচনী এজেন্ট স্বপন চক্রবর্তী। নেতার এই মেজাজে থমথমে ভোটের আবহ। পুলিশের দাবি, দু’জন তরুণী কোনও পরিচয়পত্র ছাড়াই বার বার বুথে ঢুকছিলেন। সঙ্গে কোনও না কোনও ভোটার। বাধা দিতেই এজেন্ট এমন অগ্নিশর্মা!

কালি সাফ

লা মার্টিনিয়ের স্কুলের বুথে ভোট দিয়ে জল খেয়েছিলেন ২২ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা গীতা ভারতী। চক্ষু চড়ক গাছ তার পরেই। আঙুলে জল লেগে মুহূর্তে ধুয়ে মুছে সাফ ভোটের কালি। সটান রাজ্য নির্বাচন কমিশনার সুশান্তরঞ্জন উপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করে এই নালিশ জানাতে গিয়েছিলেন গীতাদেবী। সুশান্তবাবু শুনে হতবাক, ‘‘সে কী কথা! যারা কালি সরবরাহ করে, মহীশূরের সেই সংস্থাই তো এ বারও কালি দিয়েছে।’’

মওকা! মওকা!

কে, কে ভোট দিতে চান?’’— ঘড়ির কাঁটা তিনটে পেরনোর পরে তিলজলা বালিকা বিদ্যালয়ের বুথে ঘোষণা খোদ প্রিসাইডিং অফিসারের। সঙ্গে সঙ্গে বুথের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা তৃণমূল কর্মীরা এগিয়ে দিলেন এক মহিলাকে। আঁচলে কালিমাখা আঙুল ঘষতে ঘষতে মহিলা খানিক জড়োসড়ো, ‘‘আগে দিলাম তো। আবার একটা?’’ দলীয় কর্মীর চাপা ধমক, ‘‘সুযোগ যখন পাচ্ছই, চুপচাপ ... ছাপ!’’

দরজায় তরজা

দর্জিপাড়ায় পুরসভার কমিউনিটি হলের বুথে মুখোমুখি ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের দুই প্রার্থী। তৃণমূল প্রার্থী পার্থপ্রতিম হাজারি আর নির্দল মোহন গুপ্ত। শাসক দলের প্রার্থী তালিকা ঘোষণা অবধি মোহনবাবু এলাকায় শাসক দলের যুব সভাপতি ছিলেন। মোহনবাবু বলছেন, ‘‘দল শো-কজ করেছে ঠিকই। কিন্তু মানুষ আমাকেই চায়।’’ পার্থবাবু আত্মবিশ্বাসী, ‘‘আমার জয় নিয়ে সংশয় নেই।’’

ভোট-জাতক

বউবাজারে ফিয়ার্স লেনের বুথের লাইনেই অসহ্য যন্ত্রণায় বসে পড়লেন রোশেনারা বেগম। পাড়ার মা-দাদিরা সঙ্গে-সঙ্গে ঘিরে ধরেন তাঁকে। সেখানেই এক শিশুপুত্র প্রসব করেন রোশেনারা। সদ্যোজাত তুলোর মতো শিশুর সঙ্গে হাসপাতালে ভর্তি করা হল, নতুন মাকে। সার্জেন্ট ইন্দ্রনারায়ণ চৌধুরি ও তাঁর সহকর্মীরা মিলে মা-বেটাকে ইসলামিয়া হাসপাতালে ভর্তি করেন। পরে তাঁদের মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে সরানো হয়। দু’জনেই এখন সুস্থ, খোশমেজাজে। তবে ভোটটা আর দেওয়া হয়নি রোশেনারার।

জয় তারকনাথ

কখনও সাংবাদিক, কখনও সিপিএম নেতাকে পিটিয়ে শিরোনাম হয়েছেন তিনি। খুনের চেষ্টার অভিযোগে হাজতবাস, পুলিশের চাকরিতে সাসপেন্ড হওয়া, বিভাগীয় তদন্ত—অজস্র পালক তাঁর মুকুটে। পুরভোটে ফের স্বমহিমায় সেই কুখ্যাত কনস্টেবল তারক দাস। ১০০ নম্বর ওয়ার্ডের কয়েক জন বাসিন্দাকে চায়ের দোকানে চড়থাপ্পড় মারার অভিযোগ দায়ের হল তাঁর বিরুদ্ধে। তারপর থেকেই যোগাযোগ করা যাচ্ছে না তারকের সঙ্গে। স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব অবশ্য বলছে, তারক আমাদের কেউ নয়। তবু ঠারেঠোরে চলছে জল্পনা, এ ভাবেও ফিরে আসা যায়!

চা বনাম কোলা

কোকাকোলা চললে চলবে। তবে চা চা-ই চাই! — রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে ফোনে হাঁকলেন সিঁথির তৃণমূল নেতা প্রতাপ গঙ্গোপাধ্যায়। ও-পারের জবাব শুনে খানিক নিশ্চিন্ত, যাক্‌, চা চললে ঠিক আছে! শাসক দলের এক কর্মীই চুপি-চুপি ফাঁস করে দিলেন এই সাঙ্কেতিক ভাষা। ‘কোকাকোলা’ মানে প্রক্সি ভোট। আর ‘চা’ মানে নিখাদ ছাপ্পা। নেতার নিদান, প্রক্সি হলে হবে, তবে ছাপ্পায় আপস নয়। প্রতাপবাবু অবশ্য এমন অভিযোগ শুনে আকাশ থেকে পড়েছেন। তাঁর দাবি, এ-সবই কুৎসা, অপপ্রচার!

কালির কীর্তি

লা মার্টিনিয়র স্কুলের বুথে ভোট দিয়ে জল খেয়েছিলেন ২২ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা গীতা ভারতী। আর তাতে আশ্চর্য কাণ্ড। আঙুলে জল লেগে ভোটের কালি ধুয়ে গেল মুহূর্তেই। সটান রাজ্য নির্বাচন কমিশনার সুশান্তরঞ্জন উপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করে এই নালিশ জানাতে গিয়েছিলেন গীতাদেবী। সুশান্তবাবু শুনে হতবাক্‌, ‘‘সে কী কথা! নির্বাচন কমিশনকে বরাবর যারা কালি সরবরাহ করে মহিশূরের সেই সংস্থাই তো এ বারও কালি দিয়েছে।’’ ৬৬ নম্বর ওয়ার্ডের বিজেপি প্রার্থী দেবাশিস নাথও কালি নিয়ে এমন কেলো হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন।

মানুষ মানুষের জন্য

জীবনের প্রথম ভোটটা পড়ে যাওয়ার শোকে গোমড়ামুখে দাঁড়িয়েছিলেন ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডের এক তরুণ। শাসক দলের কয়েকজন কর্মী তাঁকে আহা-উহু করে সান্ত্বনা দিলেন। এর পরই পোলিং অফিসারের সঙ্গে নেতাদের ঝটপট পরামর্শ চলল। ছেলেটি সত্যিই ভোট দিতে আগ্রহী কি না, ফের যাচাই করে ভোটকর্মীরা তাঁকে অন্য একটি বুথে নিয়ে গেলেন। বোতাম টিপে প্রথম ভোট দিয়ে যুবকের মুখে এ বার বীরের হাসি! তবে তাঁকে কোথাও সই করে নাম লেখাতে হয়নি বলে অভিযোগ।

তোমার পতাকা যারে দাও

তখন সবে তিনটে। জয়োল্লাসে শরৎ বসু রোডে দুই চেক পর্যটককে ঘিরে ধরল সবুজ পাঞ্জাবিপরা যুব-বাহিনী। ৬৯ নম্বর ওয়ার্ডে দিনভর এই জার্সিতেই ভোট করিয়েছেন শাসক দলের ছেলেরা। ইয়ান ও পিটার নামে দুই বিদেশিকে বার বার জোড়াফুল পতাকা হাতে নিজস্বীর জন্য ‘পোজ’ দিতে হচ্ছে। শেষটা ‘এনাফ ইজ এনাফ’ বলে ক্ষান্ত দিলেন ইয়ান। তখন তাঁর কানের কাছে এক ফুরফুরে যুবক তারস্বরে বোঝাচ্ছেন, ‘‘ইউ নো, উই আর মেন অব মমতা ব্যানার্জি!’’

সবিস্তার জানতে ক্লিক করুন...

বেকায়দায় বিজ্ঞানী

পাটুলির কেন্দুয়া মহেন্দ্রনাথ হাই স্কুলে ভোট দিতে গিয়েছিলেন সুবীর সরকার ও সুচন্দ্রা দত্ত। সাহা ইনস্টিটিউট অব নিউক্লিয়ার ফিজিক্স এবং সার্ন-এর গবেষক দম্পতি। বুথে ঢুকে জানতে পারলেন তাঁদের ভোট পড়ে গিয়েছে। সচিত্র ভোটার কার্ড, কালিহীন আঙুল দেখিয়ে বহু কষ্টে সুবীরবাবু সমস্যাটা বোঝালেন। ভোটের অফিসারেরা ভুল স্বীকার করে তাঁকে টেন্ডার ভোট দেওয়ার সুযোগ করে দেন।

তারকারা কাকে ভোট দিলেন?

সবিস্তার জানতে ক্লিক করুন

() দেব () রাইমা () জিৎ এবং () পাওলি
শনিবার ছবিগুলি তুলেছেন কৌশিক সরকার

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE