Advertisement
১৭ এপ্রিল ২০২৪

ভিনদেশি স্বাদে গ্লোবাল হচ্ছে বাঙালির মিষ্টিমুখ

ছিল কালীপুজো, হল দিওয়ালি। ছিল মিষ্টান্ন ভাণ্ডার, হল কনফেকশনারি। ভবানীপুরের শতাব্দীপ্রাচীন ময়রার দোকানে ঢুকলেই চোখে পড়ছে রেকাবে সাজানো বিজাতীয় চেহারা। খানিকটা ক্যারামেল কাস্টার্ডপানা ছিরিছাঁদ। নামেও বাঙালিয়ানার ঘ্রাণ নেই। সোজাসাপ্টা পানাকোতা সন্দেশ।

ঋজু বসু
শেষ আপডেট: ২৩ অক্টোবর ২০১৪ ০০:০১
Share: Save:

ছিল কালীপুজো, হল দিওয়ালি।

ছিল মিষ্টান্ন ভাণ্ডার, হল কনফেকশনারি।

ভবানীপুরের শতাব্দীপ্রাচীন ময়রার দোকানে ঢুকলেই চোখে পড়ছে রেকাবে সাজানো বিজাতীয় চেহারা। খানিকটা ক্যারামেল কাস্টার্ডপানা ছিরিছাঁদ। নামেও বাঙালিয়ানার ঘ্রাণ নেই। সোজাসাপ্টা পানাকোতা সন্দেশ।

ইতালিয় মিষ্টি পানাকোতায় তো মধু, ক্রিমের সঙ্গে ডিমের ভাব-সাব। প্রসাধনে ফলের টুকরো বা নির্যাস। বাঙালির মিষ্টি মানে দেবতাকে নিবেদনের প্রসাদে ডিমের প্রবেশ নিষেধ। কিন্তু খাঁটি নিরামিষত্ব বজায় রেখেই দুধ-ছানাকে আপন করে পানাকোতার মসৃণ আঁটোসাঁটো বাঁধুনি ধরা পড়েছে। এর পিছনে কিছু গোপন তুকতাকও রয়েছে, যা ফাঁস করতে নারাজ বলরামের কর্ণধার সুদীপ মল্লিক। তবে গত বিজয়া-পর্ব থেকেই রাবড়ি, ছানার পায়েসকে পিছনে ফেলে কেজি দরে এই পানাকোতা বাড়ি নিয়ে যাচ্ছেন গেরস্ত বাঙালি। মিষ্টির ভাগ পরিমিত। ক্রমশ গ্লোবাল হয়ে ওঠা কলকাতার বদলানো রুচির সঙ্গে এই স্বাদ দিব্যি মিলেজুলে গিয়েছে।

শহরের আর এক প্রান্তে উত্তরের মিষ্টি হেভিওয়েট নকুড়েও ইদানীং একটু রংচঙে চেহারার ফল বা চকোলেট স্বাদের সন্দেশেরই বেশি কদর। তরুণ কর্তা পার্থ নন্দী ওরফে রাজা বলছিলেন, “আগে বড় সাইজের সাবেক দেলখোস, পারিজাতদের খোঁজ পড়ত ভাইফোঁটায়। কিন্তু তার আয়ু মেরেকেটে এক দিন। এখন ভাইবোনেরা দূর দূর থেকে আসবেন বলে সন্দেশ টেকসই হওয়াটা কাম্য।”

কলকাতা ছাড়িয়ে জিটি রোড ধরে এগিয়ে রিষড়ার ফেলু ময়রার দোকানেও চমত্‌কৃত হতে হবে। ফি-ভাইফোঁটায় ফেলু তাদের সব ধরনের মিষ্টির লিস্টি বানিয়ে হাতে-হাতে নোটিস বিলি করে। এ বার ফেসবুকে সেই তালিকা টাঙিয়ে দেওয়া হয়েছে। রোজকার কেনাকাটিতে বিস্মৃত সব মিষ্টিকে মনে করানোই এই প্রয়াসের লক্ষ্য। তবে এ বারের তালিকায় সাবেক মনোরঞ্জন, গোলাপি পেঁড়া, ঝুরো দরবেশদের সঙ্গে বাটারস্কচ, চকো নাটি রোলদের উপস্থিতি। ফেলু ময়রার কর্ণধার অমিতাভ মোদক কবুল করছেন, “অতীতের ভাইফোঁটায় দারুণ আদরের বাটি-ভরা চন্দনী ক্ষীর ইদানীং চলছে না। হয়তো প্লেট থেকে টুকটাক তুলে খেতেই ভাইবোনেরা স্বচ্ছন্দ। বাটির ক্ষীর সামলাতে পারে না!”

“নতুনের টানে পুরনোটা যদি ধরে রাখতে না পারি, তবে কিন্তু বাঙালির মিষ্টি আর বাঙালি থাকে না!” রেগে যাচ্ছেন কেসি দাশ-কর্তা ধীমান দাশ। কেসি দাশের দোকানের লক্ষ্মী এখন পর্যটকদের কাছে বাংলার মুখ টিনে-ভরা বিশুদ্ধ স্পঞ্জ রসগোল্লা। কিন্তু রুচির বদলটা পুরোপুরি অস্বীকার করতে পারছেন না ধীমানও। কেসি দাশও সম্প্রতি চিজ, আমেরিকান কর্ন, ক্যাপসিকাম ভরপুর স্পেশাল শিঙাড়া চালু করেছে।

তবু সেন মহাশয়, ভীম নাগ, যাদব দাশেরা এখনও নতুন-পুরনো দুটোই আঁকড়ে ধরেছে। বলরামও ভাইফোঁটা স্পেশাল ডালা প্যাকেজিং করছে।

ফেলু বা নকুড়েও পুরনো পরম্পরা বাঁচিয়ে রাখতে উপাদানে আপস নেই। তবে বিপদের একটা গন্ধও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।

ঝকঝকে নব্য মিষ্টি-স্রষ্টার শো-কেসে নানা দেশি-বিদেশি কসরত মিশলেও সন্দেশের পাক-বৈচিত্র্য প্রায় উধাও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

riju basu sweets global taste
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE