Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

ভোরের পথে দুই বাসের রেষারেষি,পিষ্ট ছাত্রী

মেঘলা সকালে তখনও যানবাহনের ভিড় বাড়েনি বেহালার ডায়মন্ড হারবার রোডে। নিত্যদিনের অভ্যাসবশতই রাস্তা পেরোচ্ছিলেন এক কলেজছাত্রী। আচমকাই রেষারেষি করতে করতে হাজির হয় দু’টি বেসরকারি বাস। মাঝরাস্তায় আর সরে যাওয়ার সুযোগ পাননি ওই তরুণী। একটি বাসের চাকায় পিষ্ট হয়ে যান তিনি।

প্রীতি পাত্র।

প্রীতি পাত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ৩১ জানুয়ারি ২০১৫ ০০:০০
Share: Save:

মেঘলা সকালে তখনও যানবাহনের ভিড় বাড়েনি বেহালার ডায়মন্ড হারবার রোডে। নিত্যদিনের অভ্যাসবশতই রাস্তা পেরোচ্ছিলেন এক কলেজছাত্রী। আচমকাই রেষারেষি করতে করতে হাজির হয় দু’টি বেসরকারি বাস। মাঝরাস্তায় আর সরে যাওয়ার সুযোগ পাননি ওই তরুণী। একটি বাসের চাকায় পিষ্ট হয়ে যান তিনি।

পুলিশ জানায়, প্রীতি পাত্র (১৮) নামে ওই তরুণীকে রক্তাক্ত অবস্থায় স্থানীয় বিদ্যাসাগর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। শুক্রবার সকাল সাতটার এই ঘটনা ফের সামনে এনেছে শহরের রাজপথের রেষারেষিকে। হাজারো ঘটনার পরেও যাকে নিয়ন্ত্রণে আনতে কার্যত ব্যর্থ পুলিশ। এ দিন অবশ্য ঘটনায় অভিযুক্ত চালককে গ্রেফতার করা হয়েছে। কিন্তু সেই গ্রেফতার বাসের রেষারেষি আদৌ বন্ধ করতে পারবে কি না, তা নিয়ে ধন্দ রয়েছে লালবাজারের অন্দরেই।

বস্তুত, মহানগরে বাসের রেষারেষি কোনও নতুন ঘটনা নয়। বছর কয়েক আগে মেয়ো রোডে দুই বাসের রেষারেষিতে হাত খুইয়েছিলেন এক দম্পতি। মাস কয়েক আগেই ভরসন্ধ্যায় যাদবপুর ৮বি বাসস্ট্যান্ডের কাছে দুই বাসের রেষারেষিতে মৃত্যু হয় এক কিশোর পড়ুয়ার। নাগরিকেরা বলছেন, রেষারেষির ঘটনা ঘটলেই দিন কয়েক রাস্তায় পুলিশের তৎপরতা চোখে পড়ে। তার পরেই ফের শুরু হয় যানবাহনের দৌরাত্ম্য।


দুর্ঘটনাস্থলে পড়ে রয়েছে মৃত ছাত্রীর মাফলার।

পুলিশ জানায়, প্রীতি বেহালার ‘বিবেকানন্দ কলেজ ফর উইমেন’-এ কলা বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্রী ছিলেন। তিনি দক্ষিণ ২৪ পরগনার ফলতার হাসানপুকুর গ্রামের পাত্রপাড়ার বাসিন্দা। সকাল সাতটা নাগাদ বেহালা চৌরাস্তায় বাস থেকে নামেন প্রীতি। রাস্তা পেরোলেই তাঁর কলেজের গেট। কিন্তু ওইটুকু সময়েই তাঁর গায়ের উপর দিয়ে চলে গেল বাসের চাকা।

কলকাতা ট্রাফিক পুলিশ সূত্রের খবর, মহানগরে ট্রাফিক পুলিশের ডিউটি শুরু হয় সকাল ৬টায়। অনেক সময়েই দেখা গিয়েছে, ভোরের দিকে ফাঁকা রাস্তায় বাসের রেষারেষি চলে। একটু গভীর রাতেও ছবিটা একই রকম। কিন্তু এ দিন দুর্ঘটনাটি ঘটেছে সকাল সাতটায়। সে সময়ে ওই এলাকায় ট্রাফিক পুলিশ ছিল কি?

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ফাঁকা রাস্তায় তারাতলামুখী ১২সি/১ ও ২১/১ রুটের দু’টি বাসের মধ্যে রেষারেষি চলছিল। সে সময়ে ওই এলাকায় পুলিশ ছিল না। তাঁদের বক্তব্য, পুলিশ থাকলে জরিমানার ভয়ে বাসগুলি এত বেপরোয়া হয়ে উঠতে পারে না। বেহালা এলাকার বাসিন্দাদের বক্তব্য, ডায়মন্ড হারবার রোডে মেট্রোর কাজ হচ্ছে। বহু রাস্তায় ব্যারিকেড দেওয়া রয়েছে। বাসগুলিও নিয়ম মেনে দাঁড়ায় না। তার ফলে এমন দুর্ঘটনা নিত্যদিনই ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তাঁরা। এ দিন ঘটনাস্থল ঘুরে সেই অভিযোগের সত্যতাও নজরে এসেছে।

এ দিন প্রীতির মৃত্যুর পরে ডায়মন্ড হারবার রোড অবরোধ করেন শ’পাঁচেক ছাত্রী। সঙ্গে ছিলেন কলেজের শিক্ষিকারাও। পুলিশ গিয়ে উপযুক্ত পদক্ষেপের আশ্বাস দিলে ঘণ্টা দেড়েক পরে অবরোধ ওঠে।

বাসের রেষারেষি ও ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্ববোধ নিয়ে কী বক্তব্য লালবাজারের?

লালবাজারের একাংশের বক্তব্য, ডায়মন্ড হারবার রোডে ট্রাফিক পুলিশ না থাকার অভিযোগ পুরোপুরি ঠিক নয়। ডায়মন্ড হারবার রোডের ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে দু’টি ট্রাফিক গার্ড গড়া হয়েছে। রয়েছে সিগন্যাল ব্যবস্থাও। তবে তা সত্ত্বেও যে বাসের রেষারেষি রোখা যাচ্ছে না, তা-ও স্বীকার করেছেন ট্রাফিক কর্তাদের অনেকেই। তাঁরা মানছেন, সকালের দিকে পুলিশের নজরদারিতে একটু ফাঁক থাকে। সেই সুযোগেই বাসের রেষারেষি চলে। এই ঘটনার পরে ওই এলাকায় ট্রাফিক পুলিশ মোতায়েন করার ব্যাপারেও ভাবনাচিন্তা চলছে বলে লালবাজার সূত্রের খবর।

ছবি: অরুণ লোধ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

accident student behela
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE