ইস্ট-ওয়েস্ট ও জোকা-বি বা দী বাগ মেট্রোর কাজ শুরু হলে বেলাইন হতে পারে ট্রাম। এমনটাই আশঙ্কা ক্যালকাটা ট্রামওয়েজ কোম্পানি (সিটিসি)-র। এই অবস্থায় তাকে শেষ পর্যন্ত কী ভাবে বাঁচানো যায়, তা নিয়ে হিমসিম পরিবহণ দফতর।
সময়ের সঙ্গে তাল মেলাতে গিয়ে শহরের বুকে গণযান হিসেবে ট্রামের সেই রমরমা অনেক দিনই নেই। এখন শহরে বেঁচে রয়েছে হাতে গোনা ২৫টি ট্রামরুট। পরিবহণ দফতর সূত্রের খবর, নয়া পথে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো এবং জোকা-বি বা দী বাগ মেট্রোর কাজ শুরু হলে এর মধ্যে অন্তত ১৫টি রুটই উঠে যাবে। যদিও কলকাতা মেট্রো রেলওয়ে কর্পোরেশন লিমিটেড (কেএমআরসিএল)-এর কর্তাদের দাবি, কয়েক মাসের জন্য কিছু ট্রামরুট বন্ধ হলেও পরে তা পুনর্বাসন দিয়ে চালু করা হবে। এ জন্য ইতিমধ্যেই প্রায় ২০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।
কী ভাবে বেলাইন হওয়ার আশঙ্কা ট্রামের?
পরিবহণ দফতর সূত্রের খবর, পরিবর্তিত মেট্রো মানচিত্রে এসপ্ল্যানেড হতে চলেছে জোকা-বি বা দী বাগ, ইস্ট-ওয়েস্ট এবং নিউ গড়িয়া-দমদম মেট্রোর জংশন স্টেশন। মূলত এসপ্ল্যানেড ট্রাম টার্মিনাস এবং কার্জন পার্কের কিছু অংশ নিয়ে ওই স্টেশন করার ইচ্ছা মেট্রো কর্তাদের। সেই মতো ইতিমধ্যেই কলকাতা পুলিশ, পূর্ত দফতর এবং পরিবহণ দফতরের কর্তাদের সঙ্গে কয়েক দফা আলোচনা সেরেছেন মেট্রো কর্তারা। পাশাপাশি, ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর মহাকরণ স্টেশনের জন্য মেট্রো ও রাজ্য সরকারের শীর্ষ কর্তাদের প্রাথমিক পছন্দ বি বা দী বাগের মিনিবাস স্ট্যান্ড। তার পাশেই বি বা দী বাগ ট্রাম টার্মিনাসে ঢোকার মূল লাইন। মেট্রোর কাজ শুরু হলে পুরো লাইনই তুলে ফেলতে হবে বলে পরিবহণ দফতরকে জানিয়ে দিয়েছেন মেট্রো কর্তারা। তাঁদের বক্তব্য, কাজ শেষ হলে ফের ট্রামলাইন পেতে দেওয়া যাবে। মধ্যে বছরখানেক ট্রাম বন্ধ থাকবে।
ক্যালকাটা ট্রামওয়েজ কোম্পানি (সিটিসি)-র কর্তারা অবশ্য পাল্টা দাবি করছেন, মেট্রোর কাজ শুরু হলে ট্রামই কার্যত উঠে যাবে। কারণ হিসেবে সংস্থার এক কর্তা বলেন, ‘‘উত্তর এবং দক্ষিণ কলকাতার ট্রামরুটের মধ্যে যোগসূত্র তৈরি করে এসপ্ল্যানেড আর বি বা দী বাগ। ওই দুই জংশন বন্ধ হয়ে গেলে কী ভাবে ট্রাম বাঁচবে?’’ কেএমআরসিএল-এর তরফে পুনর্বাসনের যে দাবি করা হচ্ছে, তা-ও কতটা বাস্তবায়িত করা যাবে, তা নিয়েও সন্দিহান ট্রাম সংস্থার কর্তারা।
সিটিসি সূত্রের খবর, বর্তমানে ট্রাম ছাড়ে ছ’টি ডিপো থেকে। এর মধ্যে দু’টি ডিপো বেলগাছিয়া এবং রাজাবাজারে। বাকি চারটি খিদিরপুর, গড়িয়াহাট, পার্ক সার্কাস এবং টালিগঞ্জে। এ ছাড়া, হাওড়া, এসপ্ল্যানেড এবং বি বা দী বাগে ট্রামের তিনটি টার্মিনাস আছে। মূলত ছ’টি ডিপো থেকে বিভিন্ন রুট যুক্ত করা হয়েছে ওই তিনটি টার্মিনাসের সঙ্গে। এ ছাড়া, হেরিটেজ ট্রামযাত্রা-সহ এসি ট্রামের বিশেষ কয়েকটি যে রুট আছে, সেগুলিও বি বা দী বাগ টার্মিনাসের উপর দিয়ে।
সিটিসি-র এক কর্তা বলেন, ‘‘আমরা মেট্রো কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি, দু’টি ভাগে মহাকরণ স্টেশনের কাজ করা হোক। এক ভাগের কাজ চলার সময়ে অন্য ভাগে ট্রাম পরিষেবা চালু থাকবে। তাতে মাসখানেকের বেশি ট্রাম পরিষেবা ব্যাহত হবে না। কারণ অতীতের অভিজ্ঞতা বলছে, এক বার কয়েক মাসের জন্য ট্রাম বন্ধ হলে তা আর চালু হয় না।’’ একই ভাবে এসপ্ল্যানেড স্টেশন তৈরির আগেই ট্রামের পরিবর্তিত রাস্তা বানিয়ে ফেলতে চান ট্রাম সংস্থার কর্তারা। সিটিসি-র ওই কর্তার কথায়, ‘‘সেনাবাহিনীর কাছে ওই জমি আমাদের লিজে নেওয়া। কাজেই নতুন করে অনুমতির প্রয়োজন নেই। আমরা আগেই পরিবর্তিত লাইন পেতে ফেলতে চাই। কলকাতা পুলিশও আমাদের পরিকল্পনায় রাজি। মেট্রো রাজি হলে আর সমস্যা থাকবে না।’’ রাজ্য প্রশাসনের এক শীর্ষকর্তা বলেন, ‘‘কেএমআরসিএল ইতিমধ্যেই ট্রামের পুনর্বাসনে ২০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে। ফলে, পুনর্বাসন হবেই। বড়জোর কিছু দিন বেশি সময় লাগতে পারে।’’
তবে শেষমেশ মেট্রো তাঁদের প্রস্তাবে রাজি না হলে কলকাতায় চার-পাঁচটির বেশি রুটে যে ট্রাম আর চলবে না, তা মেনে নিচ্ছেন ট্রাম কর্তারাই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy