Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

লাইন পরীক্ষা শিকেয় তুলে মেট্রো চলে ফাটল-পথেই

দুর্ঘটনা রোখা না গেলেও অন্তত এড়ানোর মতো ব্যবস্থা ছিল মেট্রোয়। অভিযোগ, সেই ব্যবস্থাটাকেই কার্যত লাটে তুলে দিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। ফলে বিপদের আশঙ্কা মাথায় নিয়ে মেট্রোয় যাতায়াতই ভবিতব্য যাত্রীদের। সম্প্রতি মেট্রোর লাইনে ফাটল ধরার একের পর এক ঘটনা সামনে আসার পরে আতঙ্ক ছড়িয়েছে যাত্রীদের মধ্যে। রেলকর্তাদের একাংশেরই অভিযোগ, রেললাইনগুলি নিয়মিত পরীক্ষা করার যে ব্যবস্থা দীর্ঘদিন ধরে চালু ছিল, সম্প্রতি তা কার্যত বন্ধ করে দিয়েছেন মেট্রো কর্তৃপক্ষ। সে কারণে লাইনে ফাটলের বিষয়টি নিয়ে এর ফলে লাইনে সামান্য চিড় থাকলেও প্রাথমিক অবস্থায় তা ধরা পড়ছে না।

অমিতাভ বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ০৫ জুলাই ২০১৪ ০০:৩৯
Share: Save:

দুর্ঘটনা রোখা না গেলেও অন্তত এড়ানোর মতো ব্যবস্থা ছিল মেট্রোয়। অভিযোগ, সেই ব্যবস্থাটাকেই কার্যত লাটে তুলে দিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। ফলে বিপদের আশঙ্কা মাথায় নিয়ে মেট্রোয় যাতায়াতই ভবিতব্য যাত্রীদের।

সম্প্রতি মেট্রোর লাইনে ফাটল ধরার একের পর এক ঘটনা সামনে আসার পরে আতঙ্ক ছড়িয়েছে যাত্রীদের মধ্যে। রেলকর্তাদের একাংশেরই অভিযোগ, রেললাইনগুলি নিয়মিত পরীক্ষা করার যে ব্যবস্থা দীর্ঘদিন ধরে চালু ছিল, সম্প্রতি তা কার্যত বন্ধ করে দিয়েছেন মেট্রো কর্তৃপক্ষ। সে কারণে লাইনে ফাটলের বিষয়টি নিয়ে এর ফলে লাইনে সামান্য চিড় থাকলেও প্রাথমিক অবস্থায় তা ধরা পড়ছে না।

বুধবারও রাতে মেট্রোয় সেই ঘটনারই পুনরাবৃত্তি হয়েছিল গিরিশ পার্কের কাছে। লাইনে ফাটল ধরায় বিপর্যস্ত হয় পরিষেবা। এ ক্ষেত্রেও শেষ মুহূর্তে চালকের নজরে পড়ায় বড়সড় দুর্ঘটনার হাত থেকে বেঁচে গিয়েছেন মেট্রোযাত্রীরা। রেল লাইনে ফাটল হয়, এটা সবারই জানা। কিন্তু ফাটল ধরা লাইনের উপর দিয়ে ট্রেন চলাচল করতে গিয়ে যে কোনও সময়ে বড় দুর্ঘটনায় পড়ার আশঙ্কা থাকে।

অভিযোগ, মেট্রোয় ঠিক মতো লাইন পরীক্ষার কাজ হচ্ছে না। যদিও মেট্রোকর্তাদের দাবি, নিয়মিতই ওই পরীক্ষার কাজ হয়। তা হলে কেন ফাটল ধরা পড়ছে শেষ মুহূর্তে?

রেলের ইঞ্জিনিয়ারেরা জানান, মেট্রোর লাইন ভেঙে রয়েছে কি না দেখতে যন্ত্র দিয়ে পরীক্ষারও বিশেষ ব্যবস্থা করা হয়েছে। যন্ত্রটির নাম ‘আল্ট্রাসনিক ফ্ল ডিটেক্টর’ বা ইউএসএফডি। এই যন্ত্র লাইনের উপর দিয়ে চলতে শুরু করলেই তার মধ্যে থেকে আল্ট্রাসনিক শব্দ বেরোতে শুরু করে। সেই আওয়াজের সাহায্যে লেখচিত্র ফুটে ওঠে। তার মাধ্যমেই বোঝা যায় লাইনে ফাটল বা ফাঁক-ফোকর আছে কি না। এর পাশাপাশি লাইন পরীক্ষার জন্য গ্যাংম্যান (লাইন পরীক্ষার কর্মী) আছেন।

মেট্রোকর্তা ও কর্মীদের একাংশের অভিযোগ, আগে মেট্রোর কর্তারা ওই যন্ত্র নিয়ে প্রতি সপ্তাহে অন্তত এক দিন করে রাতে গোটা পথের লাইন পরীক্ষা করতেন। কিন্তু এখন আর তা করা হয় না। এখন প্রতি রাতে একটি ট্রলি নিয়ে কয়েক জন সুড়ঙ্গের মধ্যে আপ লাইন দিয়ে গিয়ে ডাউন লাইন ধরে ফিরে আসেন। কিন্তু এই পরীক্ষায় লাইনে ফাটল থাকলে তা ধরা পড়ছে না। রেলের নিয়মে মেট্রোয় থাকার কথা কি ম্যানের। তাঁদেরও পায়ে হেঁটে লাইন পরীক্ষা করার কথা। মেট্রোর মেনস ইউনিয়নের সভাপতি দিলীপ মুখোপাধ্যায়ের অভিযোগ, “মেট্রোতে কি-ম্যানের কাজও বন্ধ।” এর ফলে যাত্রীদের নিরাপত্তাও বিঘ্নিত হচ্ছে বলে দিলীপবাবুর বক্তব্য।

লাইন ভাঙা পুরোপুরি ঠেকানো সম্ভব নয়, এটা সবারই জানা। বৃহস্পতিবারও সেটাই বলেছেন মেট্রোর মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক রবি মহাপাত্র। তিনি বলেন, রেলে সর্বত্র লাইনে ফাটল হয়। এখানেও হচ্ছে। এটা নতুন কিছু নয়।” রবিবাবুর বক্তব্য ঠিক। কিন্তু সে জন্যই তো অত বার করে লাইন পরীক্ষার কথা বলা হয়েছে রেলের নিয়মে। রক্ষণাবেক্ষণের কাজ ঠিক মতো করা হলে লাইনে ফাঁক-ফোকর আগেই ধরা পড়ার কথা। কিন্তু অভিযোগ, সেটা না হওয়ায় ট্রেন চালাতে গিয়ে বারবার চালকের নজরে আসছে লাইন ভাঙা।

গত ২৪ জুন একটি সাধারণ ট্রেনের ব্রেক ভালভ আটকে যাওয়ায় সুড়ঙ্গেই আটকে যায় মেট্রো। তার জেরে অনেক যাত্রী অসুস্থও হয়ে পড়েন। সে দিন মেট্রোর শীর্ষ কর্তা ও কর্মীরা এগিয়ে না এলেও ঘটনার ভয়াবহতা দেখে যাত্রীরা ভেবেছিলেন, এ বার ভাল পরিষেবা দেওয়ায় নজর দেবেন মেট্রোকর্তারা। কিন্তু যাত্রীদের অভিযোগ, কার্যক্ষেত্রে মেট্রোর অবস্থা যে এতটুকুও বদলায়নি, বুধবার রাতে সুড়ঙ্গের ভিতরে আবার লাইনে ফাটল ধরা পড়া সেটাই প্রমাণ করে দিল।

কিন্তু লাইনে ফাটল কেন হয়?

রেলের ইঞ্জিনিয়ারেরা জানান, রেললাইন তৈরির সময়ে ইস্পাত (লোহার মিশ্রণ) ভাল না হলে গরম অবস্থায় তার মধ্যে হাওয়া ঢুকে ফাঁক-ফোকর তৈরি হয়। সেখান থেকেই পরবর্তীতে ফাটল ধরে। আবার আবহাওয়ার তাপমাত্রায় আচমকা প্রচণ্ড হেরফের হলেও ইস্পাতের তৈরি লম্বা লাইনে ফাটল ধরে ভেঙে যেতে পারে। ইঞ্জিনিয়ারদের বক্তব্য, সাধারণ রেলে (মাটির উপরে) তাপমাত্রার হেরফেরের জন্য মাঝেমধ্যেই ভেঙে যায় রেললাইন।

কিন্তু মেট্রোর সুড়ঙ্গে তো আচমকা তাপমাত্রা হেরফের হওয়ার কথা নয়। কারণ সেখানে তাপমাত্রা এক রাখার বাতানুকূল ব্যবস্থা চালু রাখার কথা। ইঞ্জিনিয়ারদের বক্তব্য, এখন ইস্পাতের লাইন অনেক উন্নত প্রযুক্তিতে তৈরি। যার সহনশীলতা বেশি। দামও বেশি। ওই লাইনে ফাঁক-ফোকর প্রায় থাকেই না। দ্বিতীয়ত, সুড়ঙ্গে তাপমাত্রার পরিবর্তনও হওয়ার কথা নয়।

কিন্তু তবু লাইনে ফাটল ধরছেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

amitabh bandyopadhyay metro line
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE