কখনও সুড়ঙ্গে আটকে পড়া, কখনও দরজা খোলা রেখেই চলে যাওয়া এক স্টেশন থেকে অন্যত্র, কখনও বা লাইনচ্যুত হওয়া, আবার কখনও মাঝপথে বিদ্যুৎ বিভ্রাট। লাগাতার যান্ত্রিক ত্রুটিতে প্রায় নিয়মিতই বিপত্তি লেগে রয়েছে মেট্রোয়। একই সঙ্গে রয়েছে রুগ্ণ রেকের সমস্যাও। গত তিন মাস লাগাতার এমন চলতে থাকায় আতঙ্কে হু হু করে কমছে যাত্রী-সংখ্যা। পাতালপথে দ্রুত গন্তব্যে পৌঁছনোর বদলে ফের সড়কপথে বেশি সময়ের যাতায়াতেই ঝুঁকছেন নিত্যযাত্রীরা। মেট্রো রেলের পরিসংখ্যানই বলছে গত ৩০ বছরে এ ভাবে যাত্রীর সংখ্যা কমতে দেখা যায়নি। গত তিন মাসের যান্ত্রিক ত্রুটির ধারাবাহিকতা অবশ্য বজায় ছিল বুধবারও। লাইন পাল্টাতে গিয়ে একটি রেক কবি সুভাষ স্টেশনের ওয়াই সাইডিং-এ (যেখানে গিয়ে লাইন পাল্টায় রেক) বাফারে ধাক্কা মেরে আটকে গেলে দুপুরে প্রায় আধ ঘণ্টা বিঘ্নিত হয় পরিষেবা ।
মেট্রোয় গড়ে এক দিনে যাত্রীর সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৫ লক্ষ। মেট্রো দেওয়া হিসেব অনুযায়ী, ২০১৩-১৪ সালের এপ্রিল থেকে জুন মাসে যাত্রী সংখ্যা ছিল ৪ কোটি ৮৭ লক্ষ ১৮ হাজার। কিন্তু এ বছর মানে ২০১৪-১৫ সালের এপ্রিল থেকে জুন মাস পর্যন্ত যাত্রী হয়েছে ৪ কোটি ২৯ লক্ষ ১৭ হাজার। অর্থাৎ গত বছরের তুলনায় এ বছর তিন মাসে যাত্রী কমেছে ৫৮ লক্ষ এক হাজার।
এর মধ্যে শুধু জুন মাসে আগের বছরের তুলনায় যাত্রী কমেছে ১০ লক্ষ ৯৭ হাজার।
এতেও অবশ্য হেলদোল নেই কলকাতা মেট্রো কর্তৃপক্ষের। ভেঙে পড়া পরিষেবার কথা মেনে নেওয়ার বদলে তাঁদের বরং যুক্তি, গত বছর নভেম্বরে ভাড়াবৃদ্ধিই যাত্রী-সংখ্যা কমার মূলে। তাঁদের দাবি, এ রাজ্যে সড়ক পরিবহণের ভাড়া মেট্রোর ভাড়ার চেয়ে এখন কম। তাই সাধারণ মানুষ মেট্রো ছেড়ে সড়ক পরিবহণের উপরেই এখন অনেকটা বেশি নির্ভর করছেন। মেট্রোর মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক রবি মহাপাত্র বলছেন, “মেট্রোর ভাড়া বাড়ায় যাত্রীদের অনেকেই কম ভাড়ার পরিবহণে যাতায়াত করছেন।” যদিও মেট্রোর অফিসার ও কর্মীদের একাংশই বলছেন, ভাড়া বৃদ্ধি হয়েছে গত নভেম্বর থেকে (৮ মাস আগে)।
আর যাত্রী সংখ্যা কমেছে এ বছর এপ্রিল মাস থেকে। যাত্রী সংখ্যা কমলেও এ বছর মেট্রোর আয় বৃদ্ধি পেয়েছে (প্রায় ৫৮ শতাংশ) বলে দাবি রবি মহাপাত্রেরই মেট্রো কর্তৃপক্ষ যা-ই বলুন কেন, যাত্রী কমার দায় কর্তৃপক্ষের উপরেই চাপিয়ে দিয়েছে মেট্রো মেন্স ইউনিয়ন। ইউনিয়নের সভাপতি দিলীপ মুখোপাধ্যায় বলেন, “অবস্থা এখন এমন হয়েছে যে যাত্রীরা কখন গন্তব্যে পৌঁছবেন, তা তাঁরা জানেন না। সুড়ঙ্গেও যে দীর্ঘক্ষণ আটকে থাকতে পারবেন না, সেটুকু নিশ্চয়তাও দিতে পারছেন না কর্তৃপক্ষ। ফলে যাত্রী তো কমবেই।” রেল বোর্ডের প্রাক্তন কর্তা সুভাষরঞ্জন ঠাকুর বলেন, “রেলের জোনগুলিতে এ ভাবে কখনও যাত্রী সংখ্যা কমার কথা শুনিনি। মেট্রোর বাণিজ্যিক শাখার কর্তাদের উচিত এখনই তদন্ত শুরু করা। কোথায় এর গলদ খুঁজে বার করা।”
টানা চার মাস ধরে যাত্রী কমার পরেও মেট্রোর তরফে এ ব্যাপারে কোনও তদন্ত শুরু না হওয়ায় রেলের অন্য জোনগুলির কর্তারাই এ নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। তাঁদের দাবি, রেল বোর্ড অবিলম্বে মেট্রোর পরিচালন ব্যবস্থা খোলনলচে না বদলালে শীঘ্রই কলকাতায় মেট্রোর দৌড় বন্ধ হয়ে যাবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy