Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

শব্দবাজি রুখতে গিয়ে প্রহৃত পুলিশই

পুলিশের সাফল্যের দাবি কার্যত নস্যাৎ করে এ বার শব্দবাজি নিয়ন্ত্রড়ে নেমে আক্রান্ত খোদ পুলিশই। পাশাপাশি মুড়িমুড়কির মতো বোমা-পটকা ফাটার অভিযোগ এসেছে শহরের বিভিন্ন হাসপাতাল চত্বর থেকে। বাদ যায়নি পুলিশ হাসপাতালও। শব্দবাজির প্রতিবাদ করে মার খেয়েছেন এক মোটরবাইক আরোহী। সব মিলিয়ে এই চিত্র ফের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল মানুষের সচেতনতা তৈরি হয়নি। পুলিশ প্রশাসনও পরিস্থিতি সামলাতে অনেকটা ব্যর্থ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৫ অক্টোবর ২০১৪ ০০:০৩
Share: Save:

পুলিশের সাফল্যের দাবি কার্যত নস্যাৎ করে এ বার শব্দবাজি নিয়ন্ত্রড়ে নেমে আক্রান্ত খোদ পুলিশই। পাশাপাশি মুড়িমুড়কির মতো বোমা-পটকা ফাটার অভিযোগ এসেছে শহরের বিভিন্ন হাসপাতাল চত্বর থেকে। বাদ যায়নি পুলিশ হাসপাতালও। শব্দবাজির প্রতিবাদ করে মার খেয়েছেন এক মোটরবাইক আরোহী। সব মিলিয়ে এই চিত্র ফের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল মানুষের সচেতনতা তৈরি হয়নি। পুলিশ প্রশাসনও পরিস্থিতি সামলাতে অনেকটা ব্যর্থ।

যদিও নিজেদের ব্যর্থতা মানতে রাজি নয় পুলিশ। তাদের দাবি, এ বার শব্দবাজি ফেটেছে অনেক কম। অভিযোগ পাওয়ামাত্র ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। লালবাজারের হিসেব, গত বারের তুলনায় অর্ধেকের কম (১০৫) অভিযোগ এসেছে। নিষিদ্ধ শব্দবাজি ফাটানোর অভিযোগে প্রায় ৯০০ জনকে ধরা হয়েছে। আটক ৬৫০ কেজি বাজি।

কালীপুজোর রাতে কেমন ছিল শহরের শব্দ-চিত্র? রাত ন’টা। ফুলবাগান মোড়ের কাছে বি সি রায় শিশু হাসপাতালে সাত মাসের সন্তানকে বুকে আগলে বসে মা। তুমুল শব্দে কেঁপে উঠছেন দু’জনেই। কারণ হাসপাতাল চত্বরেই দেদার ফাটছে শব্দবাজি। একই অবস্থা আরজিকর, এনআরএস কিংবা বিদ্যাসাগর হাসপাতাল সর্বত্রই। এমনকী এনআরএসে কর্মী আবাসনের সামনেও ফেটেছে শব্দবাজি।

পাশাপাশি শব্দবাজি ফাটানোয় বাধা দিয়ে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে খাস কলকাতাতেই। পুলিশ জানায়, বেহালার চণ্ডীতলায় রাত ১০টা নাগাদ অটোয় টহলদারির সময়ে কয়েক জন যুবককে নিষিদ্ধ শব্দবাজি ফাটাতে দেখে তা বন্ধ করতে বলেন বেহালা থানার কনস্টেবল সুব্রত গোস্বামী-সহ তিন পুলিশকর্মী। অভিযোগ, এ নিয়ে বচসা বাধলে ওই যুবকেরা সুব্রতবাবুর মুখে ঘুষি মারেন। ঘটনাস্থল থেকে চন্দন ঠাকুর নামে এক অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়। বাকিদের খোঁজ চলছে। গত বছরও কালীপুজোর পরের দিন রাতে শব্দবাজি আটকাতে গিয়ে মার খেতে হয়েছিল শ্যামপুকুর থানার পুলিশকে।

অন্য দিকে, পাইকপাড়ার বাসিন্দা সোমনাথ মণ্ডল রাত সওয়া ১০টা নাগাদ মোটরবাইক চেপে চিৎপুরের উমাকান্ত সেন লেন দিয়ে যাচ্ছিলেন। পুলিশের কাছে সোমনাথবাবু অভিযোগ করেছেন, আচমকাই তাঁর বাইকের সামনে একটি বাজি ফাটে। প্রতিবাদ করলে কয়েক জন যুবক তাঁকে মারধর করেন। পুলিশের দাবি, এর জেরে দুই পাড়ার মধ্যে বচসা ও মারামারিতে তিন জন আহত হন। তবে এই ঘটনায় শুক্রবার রাত পর্যন্ত কেউ ধরা পড়েনি।

পুলিশেরই একাংশের দাবি, আলোচনা বা প্রচার চালিয়েও শব্দবাজি সে ভাবে রোখা যায়নি। কালীপুজোর রাতে শহরে ঘুরেছেন সবুজ মঞ্চ ও দুষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের কর্মীরা। তাঁদের একাংশ জানাচ্ছেন, বহুতল থেকে শব্দবাজি ফাটানো এ বারও আটকানো যায়নি। হাসপাতালগুলোর আশপাশেও দেদার ফেটেছে শব্দবাজি। এমনকী ভবানীপুরের পুলিশ হাসপাতালেও যে একই ছবি, তা বলছে এলাকার পুলিশই। পরিবেশবিদ নব দত্তের অভিযোগ, হাসপাতালের আশপাশে গত বারের থেকেও বেশি শব্দবাজি ফেটেছে। সবুজ মঞ্চের হয়ে উত্তর কলকাতার দায়িত্বে ছিলেন পরিবেশবিদ এবং আইনজীবী গীতানাথ গঙ্গোপাধ্যায়। হাসপাতালগুলো ‘নো সাইলেন্ট জোন’ হওয়া সত্ত্বেও পুলিশ ব্যবস্থা নেয়নি কেন, প্রশ্ন তাঁর।

তবে শুধু গ্রেফতার করে যে শব্দবাজিতে পুরোপুরি লাগাম টানা সম্ভব নয়, তা মেনেই নিচ্ছেন লালবাজার কর্তাদের একাংশ ও পর্ষদ কর্তারা। নব দত্ত বলেন, “শব্দবাজি রুখতে মানুষকে সচেতন করতে হবে।” পুলিশের বক্তব্য, শহর লাগোয়া জেলা পুলিশ এলাকায় শব্দবাজি তৈরি এবং বিক্রি হচ্ছে। শহরের কোথাও শব্দবাজি বিক্রির খবর পেলেই গ্রেফতার করা হয়েছে।

বিধাননগর কমিশনারেটেরও দাবি, অন্য বারের তুলনায় সল্টলেক ও লাগোয়া লেকটাউন, বাগুইআটিতে শব্দবাজি কম ফেটেছে। লেকটাউন থানার পুলিশ জানায়, প্রতি বার বহুতল থেকে নিষিদ্ধ বাজি ফাটানোর অভিযোগ আসে। এ বার কিছু বহুতল আবাসনে বিশেষ পুলিশি নজরদারি রেখে কাজ হয়েছে। তবে বাইপাসে গাড়িকে লক্ষ করে চকোলেট বোমা ছোড়ার অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ, রাত ন’টা থেকে ১২টা পর্যন্ত শব্দবাজির দাপট সবথেকে বেশি ছিল। বিধাননগর কমিশনারেট সূত্রে খবর, ১২২ জনকে গ্রেফতার করা হয়। আটক হয় ২০০ কেজি বাজি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE