বৃষ্টির আশা তো দূর অস্ত্, উল্টে কলকাতায় আবার ফিরে আসছে শুকনো গরম! শুক্রবার বায়ুমণ্ডলের হাল-হকিকত খতিয়ে দেখে এমনটাই জানিয়েছেন আলিপুর আবহাওয়া দফতরের কর্তারা। তাঁদের পূর্বাভাস, আজ, শনিবার থেকে কলকাতা ও সংলগ্ন এলাকার বাতাসে জলীয় বাষ্প কমবে।
বস্তুত, বৈশাখের কলকাতায় তীব্র গরমের সঙ্গে ঘামটাই পরিচিত দৃশ্য। কিন্তু এ বছর তেমনটা একেবারেই হচ্ছে না। বরং মাঝেমধ্যেই দিল্লি, হরিয়ানার মতো শুকনো গরম হাজির হচ্ছে। রোদে বেরোলে রীতিমতো জ্বালা ধরছে গায়ে। গরম হল্কা লাগছে চোখে-মুখে।
এ বছর মার্চ মাসের শেষ থেকেই কলকাতায় শুকনো গরমের দাপট শুরু হয়েছিল। ওই মাসের শেষেই এক দিন তাপপ্রবাহের কবলে পড়ে মহানগর। তার পরেও দু’-এক বার শুকনো গরম পড়েছে কলকাতায়। আবহবিজ্ঞানীরা এর পিছনে দায়ী করছেন বঙ্গোপসাগরের উচ্চচাপ বলয়কেই।
কেন? হাওয়া অফিসের বিজ্ঞানীদের বক্তব্য, গরমকালে বঙ্গোপসাগরের উপরে তৈরি হওয়া উচ্চচাপ বলয় থেকেই কলকাতা ও দক্ষিণবঙ্গের পরিমণ্ডলে জলীয় বাষ্প ঢোকে। সেই জলীয় বাষ্পের প্রভাবেই গ্রীষ্মে কালবৈশাখী বা ঝড়বৃষ্টি হয়। “কিন্তু এ বার সেই উচ্চচাপ এতই দুর্বল যে ঝড়বৃষ্টি ঘটাতে পারছে না,” মন্তব্য এক আবহবিদের।
বস্তুত, গত কয়েক দিন ধরে কলকাতায় যে ভ্যাপসা গরম মিলছিল, তার পিছনেও ছিল এমনই একটি দুর্বল উচ্চচাপ। সেই উচ্চচাপের আশাতেই গত কয়েক দিন ধরে কলকাতা ও সংলগ্ন এলাকায় ঝড়বৃষ্টির আশা করছিল হাওয়া অফিস। কিন্তু সেই আশাতেই জল ঢেলেছে উচ্চচাপ। হাওয়া অফিসের খবর, এ দিন রাত থেকেই সেটি আরও দুর্বল হয়ে পড়ার ইঙ্গিত দিয়েছে। তার ভিত্তিতেই ফের শুকনো গরমের আগমনী দিচ্ছে আলিপুরের হাওয়া অফিস। আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গোকুলচন্দ্র দেবনাথ বলেন, “আগামী দিন দু’য়েক দিনের বেলায় শহরে তাপমাত্রা ৩৮-৩৯ ডিগ্রির আশপাশে ঘোরাফেরা করবে।”
তা হলে কি সেই সঙ্গে ফের তাপপ্রবাহ হাজির হবে?
তেমন আশঙ্কা অবশ্য এখনই দেখছে না হাওয়া অফিস। আবহবিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, ঝাড়খণ্ড-ওড়িশায় স্থানীয় ভাবে বৃষ্টি হওয়ার ফলে তাপমাত্রা অপেক্ষাকৃত কম রয়েছে। তার ফলে পশ্চিমের গরম হাওয়া বা ‘লু’ বইবার আশঙ্কা আপাতত নেই।
কিন্তু এ বছর উচ্চচাপ বলয়গুলি এত দুর্বল হচ্ছে কেন? এটা কি জলবায়ু বদলের কোনও ইঙ্গিত?
আবহবিদেরা তেমনটা মনে করেন না। তাঁদের ব্যাখ্যা, বঙ্গোপসাগরের উপরে পরিমণ্ডলের উপরের স্তরে বায়ুপ্রবাহ অনুকূল না হওয়ার ফলেই উচ্চচাপ শক্তিশালী হতে পারছে না। কেউ কেউ আবার এর পিছনে পেরু উপকূলে তৈরি হওয়া ‘এল নিনো’র সম্পর্কও দেখছেন।
তবে কেন বায়ুপ্রবাহ অনুকূল নয়, সে ব্যাপারে কোনও নিশ্চিত ব্যাখ্যাও বিজ্ঞানীদের কাছে পাওয়া যায়নি। “প্রকৃতির এই রহস্যের বিজ্ঞানসম্মত ব্যাখ্যা এখনও আমরা জানি না,” মন্তব্য এক আবহবিদের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy