Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

শুকনো গরমের দোসর হতে পারে তাপপ্রবাহ

বৈশাখের প্রথম সপ্তাহও পেরোয়নি। তার মধ্যেই কলকাতায় ফের তাপপ্রবাহের আশঙ্কা করছেন আবহবিদেরা। বাড়তে পারে শুকনো গরম হাওয়ার দাপটও। কলকাতার পাশাপাশি দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলিতেও তাপপ্রবাহের আশঙ্কা করছেন হাওয়া অফিসের বিজ্ঞানীরা। দক্ষিণবঙ্গের আম-বাঙালিকে এখনই স্বস্তির বার্তা দিতে পারছেন না তাঁরা। কলকাতায় গরম এ বার অস্বাভাবিক। ভরা বৈশাখে রোদে বেরোলে ঘামে ভিজে যাওয়াটাই এ শহরের দস্তুর।

অবাক জলপান। একটু জল পাই কোথায়? দুপুরের তপ্ত ময়দানে। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক।

অবাক জলপান। একটু জল পাই কোথায়? দুপুরের তপ্ত ময়দানে। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২২ এপ্রিল ২০১৪ ০০:৩০
Share: Save:

বৈশাখের প্রথম সপ্তাহও পেরোয়নি। তার মধ্যেই কলকাতায় ফের তাপপ্রবাহের আশঙ্কা করছেন আবহবিদেরা। বাড়তে পারে শুকনো গরম হাওয়ার দাপটও। কলকাতার পাশাপাশি দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলিতেও তাপপ্রবাহের আশঙ্কা করছেন হাওয়া অফিসের বিজ্ঞানীরা। দক্ষিণবঙ্গের আম-বাঙালিকে এখনই স্বস্তির বার্তা দিতে পারছেন না তাঁরা।

কলকাতায় গরম এ বার অস্বাভাবিক। ভরা বৈশাখে রোদে বেরোলে ঘামে ভিজে যাওয়াটাই এ শহরের দস্তুর। কিন্তু এ বছর সেখানে শুকনো গরম পড়েছে। রোদে বেরোলে জ্বালা করছে চোখ-নাক-মুখ। প্রসঙ্গত, এর আগে মার্চের শেষে এ মরসুমের প্রথম তাপপ্রবাহের কবলে পড়েছিল কলকাতা। তখনও কিন্তু এমনই শুকনো গরমের দাপট দেখা গিয়েছিল।

হাওয়া অফিস সূত্রের খবর, কলকাতা এবং সংলগ্ন দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলিতে রোজই পারদ চড়ছে। সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কমছে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ। আবহবিদ্দের দাবি, গরমকালে ঝড়বৃষ্টির জন্য বাতাসে পর্যাপ্ত জলীয় বাষ্প প্রয়োজন। এ বার সেটা কম থাকায় শহরে ঝড়বৃষ্টি মিলছেই না। অন্য বছর এপ্রিলে যেখানে গড়ে ৩-৪টি কালবৈশাখী মেলে, সেখানে এ বছর এপ্রিলের মাঝামাঝি পেরিয়েও কলকাতার কপাল মন্দ। মার্চে এক দিন ঝড়বৃষ্টি হলেও দাপুটে কালবৈশাখীর দেখা মেলেনি। এক আবহবিজ্ঞানী বললেন, “কালবৈশাখী না হওয়ায় গরমের লাগামে টান পড়ছে না।”

সোমবার কলকাতায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৯.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস, স্বাভাবিকের থেকে ৪ ডিগ্রি বেশি। সাধারণত, গরমকালে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা স্বাভাবিকের থেকে ৫ ডিগ্রি উপরে উঠলে তাকে তাপপ্রবাহ বলা হয়। এ দিনের পরিস্থিতি দেখে বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, আগামী দিন দুয়েকের মধ্যে শহরে দিনের তাপমাত্রা সেই মাত্রা ছুঁয়ে ফেলতে পারে। তবে আজ, মঙ্গলবারই যে শহর তাপপ্রবাহের কবলে পড়বে, তা অবশ্য নিশ্চিত করে বলছে না হাওয়া অফিস। তবে পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলির ক্ষেত্রে তাপপ্রবাহের আশঙ্কা কলকাতার তুলনায় জোরালো বলেই হাওয়া অফিস সূত্রের খবর।

আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গোকুলচন্দ্র দেবনাথ এ দিন বলেন, “জলীয় বাষ্প কম থাকায় কলকাতা ও সংলগ্ন দক্ষিণবঙ্গে শুকনো গরমের দাপট বাড়বে। তাপমাত্রা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দুপুরের দিকে লু-এর মতো গরম হাওয়া বইতে পারে।”

শহরে গরম এ বার এমন শুকনো কেন? হাওয়া অফিসের বিজ্ঞানীরা এর পিছনে মূলত দায়ী করছেন, বঙ্গোপসাগরে উচ্চচাপ বলয়ের অনুপস্থিতিকে। সাগরের উপরে থাকা উচ্চচাপ বলয়ই কলকাতা ও দক্ষিণবঙ্গের পরিমণ্ডলে জলীয় বাষ্পের জোগান দেয়। একই সঙ্গে বিজ্ঞানীরা দায়ী করছেন দক্ষিণবঙ্গের উপরে থাকা নিম্নচাপ বলয়ের দুর্বলতাকেই। তবে শুধু এই দু’টি কারণ নয়। আবহবিদ্দের একাংশ বলছেন, গরমের এই ভোলবদলে দায়ী ভূমধ্যসাগরীয় এলাকা থেকে কাশ্মীর ও উত্তর ভারতে আছড়ে পড়া পশ্চিমী ঝঞ্ঝাও।

মৌসম ভবনের আবহবিদেরা লক্ষ্য করেছেন, এ বছর উত্তর ভারতে ঘন ঘন পশ্চিমী ঝঞ্ঝা আছড়ে পড়ছে। তার গতিপথেও কিছুটা বদল ঘটেছে। সাধারণত, পাহাড়ি এলাকা দিয়ে বয়ে যাওয়া ঝঞ্ঝা এ বার উত্তর ভারতের সমতলের দিকে নেমে এসেছে। যার প্রভাবে গুজরাত ও মধ্য ভারতে শক্তিশালী ঘূর্ণাবর্ত তৈরি হচ্ছে। আবহাওয়া দফতরের এক বিজ্ঞানীর মন্তব্য, “এই দু’য়েরই প্রভাব পড়ছে পূর্ব ভারতের আবহাওয়ায়।”

ওই বিজ্ঞানীর ব্যাখ্যা, পশ্চিমী ঝঞ্ঝা ও তার প্রভাবে তৈরি হওয়া ঘূর্ণাবর্ত পূর্ব ভারতে জলীয় বাষ্পের গতিপথে বাধা সৃষ্টি করছে। ফলে নষ্ট হচ্ছে স্বাভাবিকতা।

ঘটনাচক্রে, চলতি সপ্তাহেই এ বছরের বর্ষার প্রাথমিক পূর্বাভাস ঘোষণা করবে মৌসম ভবন। আবহবিজ্ঞানীদের একাংশের আশঙ্কা, গরমের এই ছন্দপতন পূর্ব ভারতে বর্ষার স্বাভাবিকতায় ব্যাঘাত ঘটাতে পারে। যদিও মৌসম ভবনের বিজ্ঞানীরা এখনই এমন সিদ্ধান্তে পৌঁছতে নারাজ। তাঁরা বলছেন, এই অস্বাভাবিকতার ফলে বর্ষাও যে বিঘ্নিত হবে, এমন কথা নিশ্চিত ভাবে বলা যাবে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

dry weather loo wind
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE