Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

সরোবর থেকে ডাঙায় কচ্ছপ, সংরক্ষণে জোর দেবে কি কেআইটি?

ভাগ্যিস রবীন্দ্র সরোবরের পাড়ে উঠে পড়েছিল একটি কচ্ছপ। এই ঘটনার পরেই হই হই পড়ে গিয়েছিল এলাকায়। এর পরেই নড়েচড়ে বসেছেন কলকাতা উন্নয়ন সংস্থা (কেআইটি) কর্তৃপক্ষ।। প্রাথমিক ভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, কলকাতা উন্নয়ন সংস্থা (কেআইটি) রবীন্দ্র সরোবরে কচ্ছপ সংরক্ষণ করবে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৬ নভেম্বর ২০১৫ ১৭:৪৫
Share: Save:

ভাগ্যিস রবীন্দ্র সরোবরের পাড়ে উঠে পড়েছিল একটি কচ্ছপ।

এই ঘটনার পরেই হই হই পড়ে গিয়েছিল এলাকায়। এর পরেই নড়েচড়ে বসেছেন কলকাতা উন্নয়ন সংস্থা (কেআইটি) কর্তৃপক্ষ।।

প্রাথমিক ভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, কলকাতা উন্নয়ন সংস্থা (কেআইটি) রবীন্দ্র সরোবরে কচ্ছপ সংরক্ষণ করবে। কিন্তু পরিকাঠামোর অভাবেই সংরক্ষণ প্রকল্প থেকে সরে এসেছে কর্তৃপক্ষ। সংরক্ষণ প্রকল্প না হলেও সরোবরে বর্তমানে যেক’টি কচ্ছপ রয়েছে কাদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। যদিও কর্তৃপক্ষের দাবি, তাঁরা সরোবরের এই নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জেরদার করছে।

কলকাতা উন্নয়ন সংস্থার এক আধিকারিক বলেন, ‘‘পরিকাঠামোগত কারণেই কচ্ছপ সংরক্ষণ প্রকল্প আপাতত করা সম্ভব নয়। তবে, কচ্ছপ সহ এখানে যে সমস্ত পাখি বা মাছ রয়েছে সেগুলির নিরপত্তা যাতে সুরক্ষিত হয়, সেই ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এছাড়া সরোবরের সর্বাঙ্গীন নিরাপত্তার বিষয়টি তো রয়েছেই।’’

নিরাপত্তার জন্য কর্তৃপক্ষ কী ব্যবস্থা নিয়েছেন?

কেআইটির আধিকারিকের কথায়, এখানে ৫৫ জন নিরাপত্তরক্ষীর একটি দল তৈরি করা হয়েছে। দিন রাত সব সময়ই তাঁরা সরোবরের দেখভাল করবেন। তাঁদের দেখার জন্য ছয় জন পরিদর্শক রয়েছেন। এছাড়াও নিরাপত্তা ব্যবস্থার যাবতীয় বিষয় দেখবেন একজন নিরাপত্তা বা (সিকিউরিটি অফিসার)। যেখানে কচ্ছপ রয়েছে সেই সংলগ্ন জায়গা বেড়া দিয়ে দেওয়া হবে। শুধু কচ্ছপ, পাখি বা মাছ নয়, সরোবরের যাবতীয় সুরক্ষার জন্যই এই নিরাপত্তা বহাল থাকছে। ইতিমধ্যে এই ব্যবস্থা মোতায়েনও করা হয়েছে অনেকদিন আগেই। সরোবরের যেখানে প্রাচীর ভেঙে গিয়েছে সেগুলিও সাড়ানো হচ্ছে। নজরদারিও আরও বোশি জোরদার করা হচ্ছে বলেও কর্তৃপক্ষের দাবি।

কেআইটি সূত্রে খবর, কেআইটি এখানে কোনও কচ্ছপ ছাড়েনি। তবে, ব্যক্তিগতভাবে কেউ ছেড়ে থাকতে পারেন। এই মুহুর্তে সরোবরে কচ্ছপের সংখ্যা গোটা ছয়েক। সরোবরের তিনটি জায়গায় এদের চিহ্নিত করা গিয়েছে। কচ্ছপ বিশেষজ্ঞদের মতে, সরোবরে যে কচ্ছপ রয়েছে তা প্রধানত ‘ইন্ডিয়ান ফ্ল্যাপ সেল টার্টেল’। কচ্ছপ বিশেষজ্ঞ শৈলেন্দ্র সিংহ বলেন, ‘‘ সরোবরে এই ধরনের কচ্ছপ বিরল প্রজাতির নয়। খাল বিল বা সরোবরে এদের প্রায়ই দেখা যায়। এরা ডিম পাড়ে ডাঙায়। সুতরাং ফাঁকা জায়গা যেখানে কাদা ও ঝোপ ঝাড় থাকবে সেই ব্যবস্থা রাখতে হবে। কিন্তু সর্বপ্রথম প্রয়োজন নিরাপত্তার যাতে কচ্ছপগুলিকে কেউ মারতে না পারে এবং ডিমগুলিও সুরক্ষিত থাকে।’’

এখানে সংরক্ষণ প্রকল্পে সমস্যা কোথায়?

পরিবেশবিদদের মতে, সরোবরের ধারে কংক্রিটের বাঁধানো পাড়ই প্রধান সমস্যা। কংক্রিটের পাড়ের দেওয়াল বেয়ে কচ্ছপের ওপরে ওঠা কার্যত অসম্ভব। সাধারণভাবে জল থেকে ডাঙায় না উঠতে পারলে তারা ডিম পারচে পারবে না। এমনকি, শরীরের উষ্ণতা রক্ষা করার জন্য রোদে গা শুকনো একান্ত প্রয়োজন এই কচ্ছপগুলির। এই বাঁধানো পাড় থাকলে এই সমস্যা. থেকেই যাবে। এমনকি জলজ প্রাণী যে’গুলি কচ্ছপেরা খায় সেগুলিরও অভাব হবে বলেও পরিবেশবিদদের ধারণা।

জুলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়ার প্রাক্তন ডিরেক্টর কে ভেক্টটরমনের বক্তব্য, ‘‘ সরোবরের ধারে কংক্রিটের পাড় থাকায় এই সংরক্ষণ সম্ভব নয়। কৃত্রিমভাবে এই প্রকল্প করলেও তা বেশিদিন স্থায়ী হবে না। কিছুদিনের মধ্যেই কচ্ছপগুলির মারা যাওয়ার সম্ভাবনা থাকবে।’’

স্থানীয় সূত্রে খবর, কয়েকমাস আগে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা সরোবরে ছ’টি হাঁস ছেড়েছিল। অভিযোগ, এই হাঁসগুলির মধ্যে ইতিমধ্যেই দু’টি হাঁস চুরি হয়ে গিয়েছে। কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে গঠিত রবীন্দ্র সরোবর রক্ষণাবেক্ষণ কমিটির অন্যতম সদস্যা সুমিতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন,‘‘ সরোবরের প্রাণীদের নিরাপত্তার প্রশ্ন সর্বপ্রথম বিবেচিত হওয়া উচিত। ক’দিন আদেই হাঁস চুরি হয়েছিল। কচ্ছপ চুরি হলেও আশ্চর্য হব না। কেআইটি কর্তৃপক্ষকে জানানো সত্ত্বেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। সরোবরের জলও কতখানি প্রাণীদের বাঁচার জন্য সুরক্ষিত তা নিয়েও আমি সন্দিহান। ’’ কেআইটি কর্তৃপক্ষের অবশ্য দাবি, সরোবরের জলের দূষণও সম্প্রতি রাজ্য পরিবেশ দফতরকে দিয়েই পরীক্ষা করা হয়েছে। কোনও দূষণ পাওয়া যায়নি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE