যে জানলার পাল্লা খোলা হয়েছে সেটি দেখাচ্ছেন সেতারশিল্পীর কন্যা মিতা নাগ। ছবি: শৌভিক দে।
দোতলায় তিনটি ঘরে ঘুমোচ্ছিলেন বাড়ির লোকজন। তত ক্ষণে অনায়াসে একতলার একটি ঘরের জানলার পাল্লা খুলে, গ্রিল কেটে ভিতরে ঢুকেছে দুষ্কৃতীর দল। সেই ঘর থেকে চুরির পরে, দোতলার একটিমাত্র ফাঁকা ঘর থেকে ফের চুরি করে চম্পট দেয় দুষ্কৃতীরা।
সোমবার কাকভোরে জেগে উঠে বন্ধ থাকা দরজা খোলা দেখে সন্দেহ হয় বাড়ির লোকজনের। তার পরেই নগদ টাকা সমেত দুই লক্ষাধিক টাকার সামগ্রী চুরির ঘটনা টের পান তাঁরা। সাধারণ কেউ নন, খোদ প্রবীণ সেতারশিল্পী পণ্ডিত মণিলাল নাগের মতো বিশিষ্ট শিল্পীর বাড়িতে এই ঘটনা ঘটেছে। এমন দুঃসাহসিক চুরির ঘটনায় রীতিমতো আতঙ্কিত সেতারবাদক ও তাঁর পরিবার।
বিটি রোডে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের অদূরে কলকাতা পুরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের গোবিন্দ মণ্ডল লেনে এমন চুরির ঘটনায় পুলিশি নজরদারি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বাসিন্দারা। তাঁদের অভিযোগ, বিটি রোডে রাতে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ কিংবা পেট্রোলিং থাকলেও পাশের ১ নম্বর ওয়ার্ডের অলিগলিতে রাতে দূর অস্ত্, দিনের বেলাতেও পুলিশের নজরদারি চোখে পড়ে না।
রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উল্টো দিকের রাস্তা ধরে কিছুটা দূর গেলেই গোবিন্দ মণ্ডল লেনে ওই শিল্পীর তিন তলা বাড়ি। চারদিকে পাঁচিল দেওয়া। সামনে-পিছনে লোহার দরজায় তালা দেওয়া থাকে।
রবিবার রাত ২টো থেকে ভোর ৫টার মধ্যে ওই চুরির ঘটনা ঘটে বলে তদন্তকারীদের অনুমান। পরিবারের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, ৩টি মোবাইল, ল্যাপটপ, নোটবুক, গয়না ও নগদ প্রায় ৩৫ হাজার টাকা পাওয়া যাচ্ছে না।
মণিলালবাবুর পুত্রবধু মধুমিতা নাগ জানান, তাঁরা রবিবার রাতে দেড়টা নাগাদ ঘুমিয়েছিলেন। ভোর ৫টার পরে উঠতেই তাঁর নজরে পড়ে দোতলার মূল ফটক খোলা। তিনি ভেবেছিলেন পরিবারের কেউ ঘুম থেকে উঠে নীচে নেমেছেন। নীচে নামতেই একতলার মূল ফটকও, দেখা যায় খোলা, কোলাপসিবল গেট খোলা, তালা নীচে পড়ে। আরও দেখা যায় এক তলার পেছনের দিকের ঘরের গ্রিল সমেত পাল্লা উধাও। সারা ঘর লণ্ডভণ্ড, আলমারির পাল্লা খোলা। আলমারির ভেতর থেকে উধাও নেকলেস-সহ গয়না। বিভিন্ন নথি ছড়ানো-ছেটানো। শো-কেস থেকে উপহার হিসেবে পাওয়া প্রবীণ সেতারবাদকের রকমারি স্মারক।
সেতারশিল্পীর কন্যা শিল্পী মিতা নাগ বলেন, ‘‘কাগজে চুরি-ডাকাতির খবর পড়েছি। কিন্তু নিজের বাড়িতে এমনটা হবে ভাবতে পারছি না। খুব আতঙ্কে রয়েছি। নিরাপত্তা কোথায়? কোন ভরসায় বাড়ির লোকজনদের রেখে বাইরে কাজে যাব?’’
দুষ্কৃতী দল অবশ্য জানলার পাল্লা ও গ্রিল বাড়ির পিছন দিকে রেখে গিয়েছে। কিন্তু যে ভাবে জানলার পাল্লা চাড় দিয়ে খোলা হয়েছে, দরজার ছিটকিনি ভেঙে ফেলা হয়েছে, তাতে শব্দ হওয়ার কথা। কিন্তু মণিলালবাবুর পরিবারের দাবি, কেউ কোনও শব্দ শুনতে পাননি।
তবে শিল্পীর পরিবারের তরফে জানানো হয়েছে, মার্চ-এপ্রিল মাসে সেতারশিল্পীর উপহার পাওয়া একটি বুদ্ধমূর্তিও চুরি হয়ে গিয়েছিল। একটি ছেলেকে সেই মূর্তি নিয়ে বেরোতে দেখে পিছু ধাওয়া করেছিলেন তাঁরা। কিন্তু দুষ্কৃতীকে ধরতে পারেননি। এ দিন পুলিশকে সে ঘটনাও জানানো হয়েছে।
এ দিন ভোরে প্রথমে লালবাজারে ফোন করেন শিল্পীর পরিবার। সেখান থেকে খবর যায় কাশীপুর থানায়। এর পরে থানার আইসিকে নিয়ে ঘটনাস্থলে যান ডিসি (নর্থ) শুভঙ্কর সিংহ সরকার। এলাকাবাসীর অভিযোগ, পুলিশি নজরদারি নেই। শিল্পীর বাড়ির লোকজনের উপস্থিতিতে চুরি হয়েছে। কেউ যদি টের পেয়ে ঘুম ভেঙে উঠে পড়তেন, তা হলে আরও বড়সড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারত।
কলকাতা পুলিশের এক শীর্ষ কর্তার দাবি, নজরদারি ব্যবস্থা যথেষ্টই মজবুত। তবে নিশ্চিত ভাবেই ওই চুরির ঘটনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। দ্রুত দুষ্কৃতীদের ধরা হবে। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, পরিচিত কারও সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে পেশাদার দুষ্কৃতীরা ওই ঘটনা ঘটিয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy