বলা সত্ত্বেও তাঁর বেতন বাড়ায়নি সংস্থা। তাই কর্তৃপক্ষকে ‘শিক্ষা’ দিতে সংস্থার ম্যানেজিং ডিরেক্টরের বৈদ্যুতিন স্বাক্ষর কাজে লাগিয়ে রেলকে কম দরের টেন্ডার পাঠিয়ে সংস্থাকে অপদস্থ করলেন তিনি। যদিও শেষ পর্যন্ত পুলিশের জালে ধরা পড়তেই হল তাঁকে। ধৃত ব্যক্তির নাম দেবব্রত সাহা। ঘটনার তদন্ত করতে গিয়ে বুধবার রাতে অভিযুক্ত দেবব্রতকে সল্টলেকের একটি অফিস থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পুলিশ জানিয়েছে, সোনারপুরের সুভাষগ্রামের বাসিন্দা হলেও বর্তমানে সল্টলেকেই থাকতেন দেবব্রত।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, দেবব্রত সংস্থা ছেড়ে দিয়েছিলেন ২০১৩ সালে। কিন্তু সেই সংস্থার ম্যানেজিং ডিরেক্টরের ‘ডিজিটাল’ স্বাক্ষরের প্রত্যয়িত নকল করে রেখে দিয়েছিলেন নিজের কাছে। সেই নকল স্বাক্ষর কাজে লাগিয়ে সংস্থার ওয়েবসাইট থেকেই ই-মেল পাঠিয়ে রেলে আবেদন করা টেন্ডারের দর কমিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। বেশ কিছু দিন পরে রেলের কাছ থেকে এই টেন্ডারের বিষয়ে চিঠি পান ওই সংস্থার ম্যানেজিং ডিরেক্টর জ্যোতি গুপ্ত। ই-মেল খুলে দেখেন, তাঁর ডিজিট্যাল স্বাক্ষর ব্যবহার করে কোম্পানির মেল থেকেই কম দরের ওই টেন্ডার পাঠানো হয়েছে। জ্যোতি গুপ্ত ২০১৪ সালের জুলাই মাসে কলকাতা পুলিশের লালবাজারে সাইবার অপরাধ দমন শাখায় অভিযোগ দায়ের করেন।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, গণেশচন্দ্র অ্যাভিনিউয়ে ওই কেব্ল সংস্থায় সহকারী সেল্স ম্যানেজার হিসেবে কাজ করতেন দেবব্রত সাহা। মাঝে মধ্যেই নিজের বেতন বাড়াতে অনুরোধ করতেন তিনি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাঁর বেতন না বাড়ায় ২০১৩ সালে ৯ অগস্ট তিনি চাকরি ছেড়ে দেন। কিন্তু ম্যানেজিং ডিরেক্টরের ‘ডিজিটাল’ স্বাক্ষরের প্রত্যয়িত নকল তিনি রেখে দেন নিজের কাছে।
পুলিশ জানিয়েছে, ২০১৩ সালে নভেম্বরে রেলের কেব্ল সরবরাহের জন্য একটি টেন্ডার বের হয়। প্রতি মিটার কেবলের জন্য ওই সংস্থা থেকে ১৩৩৯ টাকা দর দিয়ে টেন্ডার জমা দেওয়া হয়। সম্পূর্ণ ৩০০০ মিটার কেবল সরবরাহের জন্য প্রায় ৩৪ লক্ষ টাকা দর দেওয়া হয়েছিল। এর কিছুদিন পরেই রেলের কাছ থেকে একটি চিঠি পান জ্যোতি গুপ্ত। চিঠি খুলে তিনি দেখেন, প্রতি মিটার ১ টাকা করে কেবল সরবরাহের জন্য তাঁর সংস্থার প্রস্তাব গ্রহণ করেছে রেল। একই সঙ্গে বলা হয়েছে, যদি সময়ের মধ্যে ওই দরে সম্পূর্ণ পরিমাণ কেবল সরবরাহ না করা হয়, তা হলে আইনানুযায়ী তাদের সংস্থার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে রেল।
এই চিঠি আসার পরই ই-মেল খুলে স্তম্ভিত হয়ে যান জ্যোতিবাবু। তিনি দেখেন, তাঁর সংস্থার ই-মেল থেকেই পাঠানো হয়েছে পরবর্তী এই নতুন দরপত্র। সঙ্গে সঙ্গে বিষয়টি তিনি জানান লালবাজারের সাইবার অপরাধ দমন শাখায়।
তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, মধ্য কলকাতার একটি অফিস থেকেই এই সংস্থার পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে ই-মেল খুলে সেখানকার কর্তার ওই স্বাক্ষর ব্যবহার করে ফের পাঠানো হয়েছে ওই ই-মেল। সেই সংস্থায় হানা দিয়ে পুলিশ দেখে, সেখান থেকেও চাকরি ছেড়ে দিয়েছে দেবব্রত। এর পর পুনরায় তদন্ত করে সল্টলেকের একটি অফিস থেকে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। দেবব্রতের কাছ থেকে একটি পেন-ড্রাইভ উদ্ধার হয়েছে। তাঁকে জেরা করে অন্যান্য বাকি তথ্য উদ্ধারের জন্য তদন্ত চালাচ্ছে পুলিশ। ওই স্বাক্ষর ব্যবহার করে তিনি ওই সংস্থার আরও কোন ক্ষতি করেছেন কি না, তা-ও জানার চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy