হিন্দুস্থান পার্কে ভেঙে পড়া সেই বাড়ি। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক।
ঘড়ির কাঁটায় তখন রাত পৌনে দশটা। আচমকা এক বিকট শব্দে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন গড়িয়াহাটের হিন্দুস্থান পার্কের বাসিন্দারা। বাইরে বেরিয়ে এসে তাঁরা দেখেন, টানা বৃষ্টিতে ভিজে পাড়ার পুরনো একটি বাড়ির একাংশ ভেঙে পড়েছে। চাপা পড়ে আছেন ওই বাড়িরই এক বাসিন্দা। খবর দেওয়া হয় দমকল এবং পুলিশকে। পরে আসে পুরসভার বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীও। তাঁরা পৌঁছেই ধ্বংসস্তূপের নীচ থেকে ওই ব্যক্তিকে উদ্ধার করে এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। পুলিশ জানিয়েছে, মৃত ব্যক্তির নাম অমিতাভ কর (৫২)। তিনি ওই বাড়িতেই তাঁর এক দিদির সঙ্গে থাকতেন।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, অমিতাভবাবুর দিদি জ্যোৎস্না বল এ দিন সন্ধেয় বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন। রাত দশটা নাগাদ ফেরেন। ঢোকার মুখে তাঁর চোখের সামনেই বাড়িটি ভেঙে পড়ে। জ্যোৎস্নাদেবী বলেন, ‘‘আমি বাড়িতে ঢোকার সময় দেখি বাড়িটি ঝুরঝুর করে পড়ে যাচ্ছে। তাঁর নীচে চাপা পড়ল ভাইও।’’
ওই এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, বাড়িটি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে শরিকি কোন্দল চলছিল। তাঁদের বক্তব্য, বেশ কয়েক বছর আগে জ্যোৎস্নাদেবী এক বার ‘নিখোঁজ’ হয়ে যান। তখন তাঁকে অপহরণ করারও অভিযোগ উঠেছিল। এই ঘটনার পিছনে প্রোমোটার চক্রের যুক্ত থাকার কথাও তখন শোনা গিয়েছিল বলে পড়শিরা জানান। তবে সেই ঘটনার দিন কয়েক পরেই জ্যোৎস্নাদেবীকে আবার ওই বাড়িতেই দেখা যায় বলে তাঁদের দাবি। অমিতাভবাবুর ঘনিষ্ঠ পড়শিরা জানান তিনি মাঝে মধ্যেই বাড়ির সামনে রহস্যময় লোকজনের ঘোরাফেরা করার কথা বলতেন।
এ দিন বাড়ি ভাঙার খবর পেয়ে আসেন রাসবিহারীর বিধায়ক এবং বিধানসভার মুখ্যসচেতক শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়, মেয়র পারিষদ দেবাশিস কুমার, তণমূল নেতা বৈশ্বানর চট্টোপাধ্যায় এবং স্থানীয় বিজেপি কাউন্সিলর তিস্তা বিশ্বাস।
দমকল-কর্তাদের ধারণা, একটানা বৃষ্টির ফলেই পুরনো বাড়িটির একটি দিক এ ভাবে ধসে পড়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, বাড়িটির গায়ে একটি পুরসভা একটি বিপজ্জনক নোটিস লাগিয়েছিল অনেক দিন আগেই। স্থানীয় কাউন্সিলর তিস্তাদেবী বলেন ‘‘আমি এই বাড়িটির সমস্যা নিয়ে বেশ কয়েক বার বর্তমান বোর্ডকে জানিয়েছি। কিন্তু কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।’’ তবে মেয়র পারিষদ দেবাশিস কুমারও বলেন, ‘‘এই বাড়িটি নিয়ে অনেক দিন ধরেই সমস্যা চলছিল। পুরসভা সমস্ত বিষয় খতিয়ে দেখে অবশ্যই ব্যবস্থা নেবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy