আগুনে ভস্মীভূত বাজার।—নিজস্ব চিত্র।
মাঝরাতের আগুনে পুড়ে ভস্মীভূত হয়ে গেল দমদমের গোরাবাজার মার্কেট। প্রায় সাড়ে তিনশো দোকান পুড়ে একেবারে ছাই হয়ে গিয়েছে। দোকানের ভিতর অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় মারা গিয়েছেন দু’জন। প্রাথমিক ভাবে ব্যবসায়ীদের অনুমান, ওই বাজার পুড়ে যাওয়ায় কয়েক কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
দমকল সূত্রে খবর, রবিবার রাত পৌনে দুটো নাগাদ ওই বাজারে আগুন লাগে। বিভিন্ন জায়গা থেকে দমকলের গোটা কুড়ি ইঞ্জিন এসে সোমবার বেলার দিকে তা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, এলাকায় দমকল কেন্দ্র থাকলে এতটা ক্ষয়ক্ষতি হয়তো হত না। কী ভাবে আগুন লাগল, পুলিশ এবং দমকল তা নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে।
উত্তর ২৪ পরগনা জেলার মধ্যে সবচেয়ে বড় যে পায়কারি বাজারগুলি রয়েছে গোরাবাজার তার মধ্যে অন্যতম। রবিবার সেই বাজারেই আগুন লাগে। প্রথম কোথায় আগুন লেগে তা ছড়িয়ে পড়েছিল, সে ব্যাপারে নিশ্চিত ভাবে এখনও কিছু জানা যায়নি। তবে ব্যবসায়ীদের একটা অংশ জানিয়েছেন, বাজারের ভিতরে যেখানে চাল-মুড়ির দোকানগুলি রয়েছে, সেখানেই কোনও ভাবে প্রথমে আগুন লাগে। পরে তা ছড়িয়ে পড়ে। পুলিশ জানিয়েছে, দমকলকর্মীরা ভস্মীভূত দোকানগুলির ভিতর থেকে দু’জনের অগ্নিদগ্ধ দেহ উদ্ধার করে। সুনীল দাস (৪৫) এবং ভিকি সাউ (১৭) নামে ওই দু’জনের দেহ তত ক্ষণে পুড়ে কয়লার চেহারা নিয়েছে।
এ ভাবেই পুড়ে গিয়েছে সব্জি-আনাজ।—নিজস্ব চিত্র।
এ দিন সকালে ওই বাজারে গিয়ে দেখা যায়, পোড়া শাকসব্জি, আলু-আনাজ, পায়রা, মাছ— চারদিক ধ্বংসস্তূপ হয়ে রয়েছে। হাতে গোনা কয়েকটি দোকান ছাড়া সব পুড়ে ছাই। ঘিঞ্জি ওই বাজার চত্বরেই রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাঙ্ক ইউকো-র একটি শাখা। গোটা ব্যাঙ্কটাই পুড়ে গিয়েছে। তবে, আশ্চর্যজনক ভাবে রক্ষা পেয়েছে ওই ব্যাঙ্কের ভল্ট।
আরও পড়ুন: বিশিষ্টদের মঞ্চ ভেঙে পড়ল ভবানীপুরে
এত বড় একটা বাজারে কোথাও অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা ছিল না বলে ব্যবসায়ীদের অভিযোগ। এলাকার বিধায়ক ব্রাত্য বসু বলেন, ‘‘অনেক পুরনো বাজার। পরিকল্পনা করে তৈরি হয়নি। তাই, অগ্নি নির্বাপক ব্যবস্থা নেই বললেই চলে। মঙ্গলবার বাজার সমিতি এবং পুরসভার সঙ্গে বৈঠকে বসব। আর যাতে এমন ঘটনা না ঘটে, সে উদ্দেশ্যেই ওই বৈঠক। আমি দমকল দফতরের সঙ্গেও কথা বলব।’’ ক্ষয়ক্ষতির দিক বিবেচনা করে, কী ভাবে এই মুহূর্তে ব্যবসায়ীদের পাশে দাঁড়ানো যায়, তা-ও ভেবে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিধায়ক।
চলছে আগুন নেভানোর কাজ।—নিজস্ব চিত্র।
ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, এলাকায় কোনও দমকল কেন্দ্র থাকলে এতটা ক্ষতি হয়তো হত না। প্রাথমিক ভাবে দমকল কর্মীরা জল আনতেও ব্যর্থ হন বলে অভিযোগ। কারণ কাছাকাছির মধ্যে যে ডোবাটি ছিল, তা সম্প্রতি সংস্কার করা হয়েছে। ফলে, জল অনেক দূর থেকে আনতে হয়েছে। বাসিন্দা ও ব্যবাসায়ীরা দীর্ঘ দিন ধরেই প্রশাসনের কাছে দাবি জানিয়ে এসেছেন, এই এলাকায় একটি দমকল কেন্দ্র হোক। কিন্তু, সে দাবি এখনও পর্যন্ত পূরণ হয়নি। কাজ চালানোর জন্য পুরসভা বিল্ডিং-এই দু’টি দমকলের গাড়ি রাখা থাকত। সোমবার দমদম পুরসভার চেয়ারম্যান হরেন্দ্র সিংহ বলেন, ‘‘মানুষের ওই দাবির কথা জানি। কিন্তু, দমকল কেন্দ্র করার জমি এখনও মেলেনি। পেলেই তা করা হবে।’’
আরও পড়ুন: মেট্রোয় জরিমানার আয় প্রায় বিশ লক্ষ
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy