আহত দুই কিশোর কৌস্তুভ ও রিন্টু। রবিবার। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক
পরিত্যক্ত ছাত্রাবাসের ভিতরে খেলছিল দুই কিশোর। চৌবাচ্চায় একটি ব্যাগ পড়ে থাকতে দেখে খুলে দেখতে যায় এক জন। ব্যাগে থাকা একটি গোলাকার জিনিস বার করতেই বিকট আওয়াজ। আশপাশের লোকজন ছুটে এসে দেখলেন, এক কিশোরের বাঁ হাতের কব্জি থেকে বাকি অংশ ঝুলছে। দু’টি হাত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আর এক কিশোরেরও।
ঘটনাস্থল আমহার্স্ট স্ট্রিটের সিটি কলেজের পাশের ছাত্রাবাস। রবিবার সকালে সেখানে বোমা ফেটে জখম হয় রিন্টু সাউ ও কৌস্তুভ দাস নামে ওই দুই কিশোর। রিন্টুর বাড়ি কৈলাস বসু স্ট্রিটে, কৌস্তুভ সুবলচন্দ্র দাস লেনের বাসিন্দা। গুরুতর জখম অবস্থায় রিন্টু ও কৌস্তুভ কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এমন ঘটনায় আতঙ্ক ছড়ায় এলাকায়।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, সিটি কলেজের পাশেই ওই ছাত্রাবাস ‘রামমোহন হল’। বছর পনেরো আগে সেটি বন্ধ হয়ে যায়। তার পর থেকে পরিত্যক্ত হয়ে রয়েছে ওই ছাত্রাবাস। সেটির পিছনে এ দিন খেলছিল রিন্টু ও কৌস্তুভ। ঘটনাচক্রে, ছাত্রাবাসের মাঠেই এ দিন ছিল প্রাক্তনীদের অনুষ্ঠান। সেই উপলক্ষে চলছিল রান্না ও মঞ্চ তৈরি। সিটি কলেজের প্রাক্তন ছাত্র রাজা ভট্টাচার্যের কথায়, ‘‘আমরা ছিলাম মাঠে। সকাল আটটা নাগাদ হঠাৎই হস্টেলের পিছন থেকে বিকট আওয়াজ শুনি। গিয়ে দেখি, একটি ছেলের হাতের কব্জি থেকে বাকি অংশ ঝুলছে।’’ ঘটনার পরেই খবর দেওয়া হয় আমহার্স্ট স্ট্রিট থানায়। পুলিশ দুই কিশোরকে হাসপাতালে নিয়ে যায়।
দুপুরে হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, জরুরি বিভাগের দোতলায় মেঝেতে শুয়ে কাতরাচ্ছে রিন্টু। আর এক কিশোর কৌস্তুভের আঘাত তুলনায় কম। রিন্টুর পরিজনেরা জানান, হাতে অস্ত্রোপচার করতে হবে বলে জানিয়ে দিয়েছেন চিকিৎসকেরা। রিন্টুর মা শীলাদেবী জানালেন, তাঁর স্বামী দু’বছর হল মারা গিয়েছেন। তিনি পরিচারিকার কাজ করে সংসার চালান। ছেলের সামনে বসে এ দিন শীলাদেবী বলেন, ‘‘আমি বাড়িতে কাজ করছিলাম। লোকজন এসে বলে, বোমা ফেটে রিন্টু গুরুতর আহত হয়েছে। খবর পেয়েই ছুটে আসি।’’
রিন্টু বলে, ‘‘পিছনের জানলা দিয়ে হস্টেলে ঢুকে কৌস্তুভের সঙ্গে খেলছিলাম। পড়ে থাকা একটি ব্যাগ খুলতে গিয়ে সেলোটেপে মোড়া একটা গোল জিনিস পাই। সেলোটেপ খুলতেই নিমেষে সেটা ফেটে যায়। আমি আর কৌস্তুভ কোনও রকমে জানলার ফাঁক গলে বেরিয়ে চিৎকার করতে থাকি। পা়ড়ার লোক ও পুলিশ আমাকে হাসপাতালে ভর্তি করে।’’
স্থানীয়েরা অবশ্য এই ঘটনার পিছনে সিটি কলেজের সাম্প্রতিক ছাত্র-রাজনীতিকে দায়ী করছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বাসিন্দার অভিযোগ, ‘‘দীর্ঘ দিন ধরেই সিটি কলেজে ছাত্র সংঘর্ষ লেগে রয়েছে। তাদেরই কেউ বোমা ফেলে গিয়েছে।’’
খবর পেয়ে আসে বম্ব স্কোয়াড। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন ডিসি ডিডি (স্পেশ্যাল) ভাদনা বরুণ চন্দ্রশেখর। তিনি বলেন, ‘‘ল্যাপটপ রাখার ব্যাগে সেলোটেপে মোড়ানো ছিল বোমাটি। ফরেন্সিক দল এসে নমুনা সংগ্রহ করবে। কী ভাবে বোমা এল, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy