Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

এক মৃত্যুতে ৩ সার্টিফিকেট

পুলিশ জানায়, বুধবার মৃত্যু হয় দমদম ক্যান্টনমেন্টের মন্দির রোডের বাসিন্দা মধুমিতা ঘোষের (৫২)। মধুমিতাদেবী ছাড়া ওই বাড়িতে ছিলেন কেয়ারটেকার এবং এক সর্ব ক্ষণের পরিচারিকা।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

সৌরভ দত্ত
শেষ আপডেট: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০১:৪৫
Share: Save:

এক মহিলার অস্বাভাবিক মৃত্যুতে তিন-তিনটি ডেথ সার্টিফিকেট! প্রথম এবং দ্বিতীয়টি একই চিকিৎসকের। তৃতীয়টি দমদম পুর হাসপাতালের। বৃহস্পতিবার পুর হাসপাতালের ওই ডেথ সার্টিফিকেটের ভিত্তিতেই মহিলার দেহ ময়না-তদন্তে পাঠায় পুলিশ।

পুলিশ জানায়, বুধবার মৃত্যু হয় দমদম ক্যান্টনমেন্টের মন্দির রোডের বাসিন্দা মধুমিতা ঘোষের (৫২)। মধুমিতাদেবী ছাড়া ওই বাড়িতে ছিলেন কেয়ারটেকার এবং এক সর্ব ক্ষণের পরিচারিকা। এ দিন কেয়ারটেকার জানান, প্রতিদিন বারান্দার আলো নিভিয়ে ঘুমোতে যেতেন মধুমিতাদেবী। বুধবার সেগুলি জ্বলছে দেখে ভোর পাঁচটা নাগাদ তিনি প্রৌঢ়ার ঘরে ঢুকে দেখেন, ওই মহিলার শ্বাস পড়ছে না। তাঁর মৃত্যু হয়েছে। এর পরে বেলা ১১টা নাগাদ পারিবারিক চিকিৎসক বাড়িতে এসে ‘ডেথ সার্টিফিকেট’ লিখে দেন। সেখানে মৃত্যুর সময় লেখা হয়, রাত আড়াইটে। আর মৃত্যুর কারণ হৃদ্‌রোগ।

খবর পেয়ে আসেন মৃতার পাঁচ বান্ধবী। বাড়ির দখল নিয়ে এক প্রোমোটারের সঙ্গে আইনি লড়াই চলছিল ওই প্রৌঢ়ার। সেই প্রোমোটার নথি জাল করে মধুমিতাদেবীর সম্পত্তি হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন বলে অভিযোগ। মৃতার কেয়ারটেকার জানান, নিম্ন আদালতে মামলায় হেরে যাওয়ায় গত সোমবার ওই প্রৌঢ়াকে বাড়ি খালি করতে বলে দমদম থানার পুলিশ। এ নিয়ে মৃত্যুর এক দিন আগে ব্যারাকপুর কমিশনারেটে লিখিত অভিযোগ করেছিলেন ওই মহিলা। তাতে লেখেন, আদালতের রায়ে কোথাও বলা নেই যে, এখনই বাড়ি খালি করতে হবে।

মৃত্যুর কারণ নিয়ে ধন্দে পড়েন পাঁচ বান্ধবী। তাঁদেরই এক জন জয়শ্রী হালদার বলেন, ‘‘পুলিশের কাছে গিয়ে বলি, দেহের ময়না-তদন্ত হোক। চিকিৎসক ডেথ সার্টিফিকেটে মৃত্যুর কারণ লিখে দিলে তা আর সম্ভব নয় বলে জানায় থানা।’’ এর পরে ওই চিকিৎসকের কাছে যান বান্ধবীরা। চিকিৎসক জানান, কেয়ারটেকার এবং পরিচারিকার সঙ্গে কথা বলে তিনি মৃত্যুর সময় লিখেছেন। এটা কী ভাবে সম্ভব, তা জানতে চাইলে দুপুর আড়াইটে নাগাদ দ্বিতীয় সার্টিফিকেটে চিকিৎসক লেখেন, মৃত্যুর কারণ এবং সময় অজানা! ময়না-তদন্তের জন্য থানায় সেই সার্টিফিকেট নিয়ে গেলে পুলিশের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়, সরকারি হাসপাতালের ডেথ সার্টিফিকেট প্রয়োজন। এর পরে সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ দমদম পুর হাসপাতালে দেহ নিয়ে যান বান্ধবীরা। সেখানে ডেথ সার্টিফিকেটে মৃত্যুর সময় লেখা হয়, সন্ধ্যা ৬টা ১৫ মিনিট। একই সঙ্গে ময়না-তদন্তের সুপারিশ করা হয়।

প্রৌঢ়ার আর এক বান্ধবী ডলি সাহা বলেন, ‘‘ভোর পাঁচটায় কেয়ারটেকার এবং পরিচারিকা মৃত্যুর কথা জানলেও চিকিৎসক এবং আমাদের সকাল ৯টায় খবর দেওয়া হল কেন? দু’জনের কথায় অসঙ্গতি রয়েছে।’’ এ প্রসঙ্গে কেয়ারটেকার বলেন, ‘‘ওই সময়ে কাকে খবর দেব, কী করব, বুঝতে পারছিলাম না। আগের রাতে দিদি বলেছিলেন, পেটে ব্যথা হচ্ছে। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কথা বললেও যেতে চাননি। এর পরে ভোর পাঁচটায় ঘরে ঢুকে দেখি, দিদি আর নেই। প্রোমোটারের সঙ্গে গণ্ডগোল নিয়ে বাড়িতে পুলিশ আসাটা উনি মেনে নিতে পারেননি।’’

দু’দফায় ডেথ সার্টিফিকেট দেওয়া প্রসঙ্গে ওই চিকিৎসক বলেন, ‘‘কাজের লোকেদের চিনি, তাই ওঁদের কথা বিশ্বাস করেছিলাম। পরে বান্ধবীদের কথামতো প্রথম ডেথ সার্টিফিকেট বাতিল করে দ্বিতীয়টি দিয়েছি। আমার কোনও ভুল নেই।’’ আর পুলিশের বক্তব্য, বেসরকারি চিকিৎসকের ডেথ সার্টিফিকেটের কোনও মূল্য নেই।
আইনের চোখে পুর হাসপাতালের ডেথ সার্টিফিকেটই গ্রাহ্য।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Death Certificate Death Certificate
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE