Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

আকাশের নীচে তুলির টান, শিল্পীদের সঙ্গী বন্দিরাও

জেলে বন্দিদের সংশোধনের প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার সময় থেকেই চালু হয়েছে ছবি আঁকতে শেখা। আলিপুর এবং প্রেসিডেন্সি জেলেই প্রথম বন্দিদের ছবি আঁকা শেখানোর কাজ শুরু করেন শিল্পী চিত্ত দে।

মগ্ন: একটি অনুষ্ঠানে ছবি আঁকছেন বন্দি রশিদ খান। ফাইল চিত্র

মগ্ন: একটি অনুষ্ঠানে ছবি আঁকছেন বন্দি রশিদ খান। ফাইল চিত্র

অত্রি মিত্র
শেষ আপডেট: ১৬ ডিসেম্বর ২০১৭ ০২:০০
Share: Save:

জেলের চার দেওয়ালের গণ্ডি ছা়ড়িয়ে মুক্ত আকাশের নীচে ছবি আঁকার ঘটনা নতুন নয়। তবে এ বার দমদম জেলের চার জন বন্দি ছবি আঁকবেন ম্যারাথন দৌড়ের মঞ্চে, আরও ১৮ পেশাদার শিল্পীর সঙ্গে।

এমন অভিনব ঘটনা ঘটবে আগামী রবিবার, রেড রোডে। ভোর সাড়ে ছ’টায় শুরু হবে হাফ ম্যারাথন। তার সঙ্গেই চলবে ছবি আঁকা। কলকাতার নামজাদা শিল্পীরা তো ছবি আঁকবেনই। তাঁদের সঙ্গে তুলি-রং নিয়ে ছবি আঁকবেন জেলের বন্দিরাও। ম্যারাথনের উদ্বোধনী মঞ্চের ঠিক উল্টো দিকেই রেড রোডে আর একটি মঞ্চ তৈরি হবে। সেখানেই যত ক্ষণ ম্যারাথন চলবে, তত ক্ষণ চলবে ছবি আঁকাও। ম্যারাথনের সঙ্গেই শেষ হবে ছবি আঁকা। কারা দফতর সূত্রের খবর, অনুষ্ঠানে নেতৃত্ব দেবেন চিত্রশিল্পী ওয়াসিম কপূর-সহ কয়েক জন শিল্পী।

জেলে বন্দিদের সংশোধনের প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার সময় থেকেই চালু হয়েছে ছবি আঁকতে শেখা। আলিপুর এবং প্রেসিডেন্সি জেলেই প্রথম বন্দিদের ছবি আঁকা শেখানোর কাজ শুরু করেন শিল্পী চিত্ত দে। পরবর্তী সময়ে ওই দুই জেলের বন্দিরা ছবি আঁকা শিখে বেরিয়েছেন জেলের বাইরেও। এ ধরনের অনুষ্ঠান যত বেশি হবে ততই ভাল বলে জানিয়ে চিত্তবাবু বলেন, ‘‘সমাজের পক্ষেও এটা একটা ভাল উদাহরণ।’’

কারা দফতরের কর্তারা জানাচ্ছেন, এর মধ্যেই বন্দিরা ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল, আলিপুর চিড়িয়াখানা-সহ কলকাতার বিভিন্ন জায়গায় ছবি এঁকেছেন। এমনকী, তাঁদের ছবি বিক্রিও শুরু করেছে কারা দফতর। জেলে আঁকা শিখে মুক্তি পাওয়ার পরে নিজের বাড়িয়ে ছবি আঁকার স্কুলও খুলে ফেলেছেন মন্টু নামের এক বন্দি। কিন্তু এ বারই প্রথম একটি অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে পেশাদার শিল্পীদের সঙ্গে ছবি
আঁকবেন দমদম জেলের চার বন্দি।

কারা দফতরের কর্তারা জানানা, ওই চার বন্দির নাম জিনিয়া নন্দী, অর্চনা হালদার, ষষ্ঠী মণ্ডল এবং মধুবৃতা সরখেল। তার সঙ্গে থাকবেন কিছু দিন আগেই দমদম জেল থেকে মুক্তি পাওয়া বন্দি লাভলি অধিকারী। দমদম জেলে বছর খানেক ধরে জনা দশেক বন্দি ছবি আঁকা শিখছেন একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সদস্যদের কাছে। সেই সংস্থার কর্ণধার চৈতালী দাসের কথায়, ‘‘বন্দিরা চার দেওয়ালের মধ্যে ছবি আঁকেন। বাইরে যত তাঁরা কাজ করবেন, তত আত্মবিশ্বাস পাবেন। ওঁদের কাজও বেশি পরিচিতি পাবে।’’

রাজ্য কারা দফতরের ডি জি অরুণকুমার গুপ্ত বলেন, ‘‘শুধু সংশোধন প্রক্রিয়াই নয়, বন্দিরা এ ধরনের কাজের মাধ্যমে যেন আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠতে পারেন আমরা সে চেষ্টাও করি। সে কারণেই আমরা বন্দিদের আরও বেশি করে বাইরে নিয়ে যেতে চাই।’’ দমদম জেলের সুপার দেবাশিস চক্রবর্তীও বলেন, ‘‘রবিবারের অনুষ্ঠানে গেলে বন্দিরা আরও বেশি অনুপ্রেরণা পাবেন।’’

তবে এ রাজ্যের সংশোধন প্রক্রিয়া যেন শুধু বছরে কয়েক দিন বন্দিদের জেলের বাইরে ছবি আঁকাতেই আটকে না থাকে, তা মনে করিয়ে দিয়ে চিত্তবাবু বলেন, ‘‘বাইরে বন্দিদের ছবি আঁকতে নিয়ে যাওয়ায় এখন ধারাবাহিকতা তৈরি হয়নি। তা আনতে এ বার সরকার বন্দিদের জন্য আপাদমস্তক পুনর্বাসন কেন্দ্র তৈরির কথা অনায়াসে ভাবতে পারে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

দমদম জেল Half Marathon Dum Dum Jail
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE