Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
শব্দদানব বধ

পর্ষদের ‘ঢিলেমিতেই’ তৈরি ৪০০ টন বাজি

দীর্ঘদিন মাইগ্রেনে ভুগছেন টালিগঞ্জের মুর অ্যাভিনিউয়ের প্রৌঢ়া অনিতা ভট্টাচার্য। তীক্ষ্ণ শব্দ মানেই মাথায় তীব্র যন্ত্রণা। দোদমা, চকোলেট বোমার ফেরা ঠেকাতে পশ্চিমবঙ্গ দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ শেষ পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্টে যাচ্ছে জেনে আশ্বস্ত তিনি।

সুরবেক বিশ্বাস
শেষ আপডেট: ০৮ জুলাই ২০১৫ ০২:৩২
Share: Save:

দীর্ঘদিন মাইগ্রেনে ভুগছেন টালিগঞ্জের মুর অ্যাভিনিউয়ের প্রৌঢ়া অনিতা ভট্টাচার্য। তীক্ষ্ণ শব্দ মানেই মাথায় তীব্র যন্ত্রণা। দোদমা, চকোলেট বোমার ফেরা ঠেকাতে পশ্চিমবঙ্গ দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ শেষ পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্টে যাচ্ছে জেনে আশ্বস্ত তিনি।

কিছুটা নিশ্চিন্ত বারাসতের অনিন্দ্য রায়ও। অশীতিপর ওই হৃদরোগীর আশা, এ বার বোধহয় শব্দবাজি থেকে রেহাই মিলবে। বাজি ফাটলে অন্তত প্রতিকারটুকু চাইতে পারবেন।

কিন্তু সত্যিই প্রতিকার মিলবে তো? আইনি লড়াইয়ের ফল পর্ষদের পক্ষে গেলেও শব্দদানবের দৌরাত্ম্য কি আদৌ আটকানো যাবে?

কারণ, এ রাজ্যের আতসবাজি প্রস্তুতকারক ও ব্যবসায়ীদের তথ্য— ইতিমধ্যেই চকোলেট, দোদমা, রকেট, সাইরেন ও কালীপটকা মিলিয়ে অন্তত ৪০০ টন শব্দবাজি তৈরি। ব্যবসায়ীদের হিসেবে, কলকাতা তথা গোটা রাজ্যে শব্দবাজির চাহিদা এই ৪০০ টন-ই।

সারা বাংলা আতসবাজি উন্নয়ন সমিতির চেয়ারম্যান বাবলা রায়ের বক্তব্য, ১৯ মে জাতীয় পরিবেশ আদালত নির্দেশ দেয়, এ রাজ্যে বাজির শব্দসীমা অন্য রাজ্যের মতো ১২৫ ডেসিবেল ধার্য করে পর্ষদকে বিজ্ঞপ্তি জারি করতে হবে। সেই মতো জোরকদমে শব্দবাজি তৈরি শুরু হয়। তাঁর কথায়, ‘‘ওই নির্দেশের দু’মাস হতে চলল। পর্ষদ কিছু জানাল না, আমাদের আলোচনাতেও ডাকল না। এখন শুনছি, ওরা সুপ্রিম কোর্টে যাচ্ছে। এ বার শব্দবাজির ধরপাকড় হলে আমরা রাজ্য জুড়ে আন্দোলনে নামব। মানুষের রোজগার নিয়ে ছেলেখেলার অর্থ হয় না।’’ প্রসঙ্গত, ওই সমিতির সদস্যসংখ্যা ৩১ লক্ষ। বাজি প্রস্তুতকারক ও ব্যবসায়ীদের ২৮৪টি ইউনিয়ন এই ছাতার তলায় এসেছে।

এ দিকে পুলিশের বক্তব্য, শব্দবাজি তৈরি হয়ে বাজারে এলে উদ্ধার করা মুশকিল। রাজ্য পুলিশের আইজি (সদর) অনুজ শর্মা বলেন, ‘‘বিপুল পরিমাণ নিষিদ্ধ বাজি বাজারে ঢুকে পড়লে তা উদ্ধার করা সময়সাপেক্ষ।’’ কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমি‌শনার (সদর) রাজীব মিশ্রের কথায়, ‘‘নিষিদ্ধ বাজির কারখানায় গিয়ে তা বাজেয়াপ্ত করা সহজ।’’ দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের অবসরপ্রাপ্ত মুখ্য আইন আধিকারিক বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘‘আগে জুন-জুলাইয়ে পুলিশ নিয়ে নিষিদ্ধ বাজির কারখানায় হানা দিয়ে বিপুল শব্দবাজি ধরা হতো। চোরাপথে বাজারে কিছুটা ঢুকলেও, পরিমাণ ছিল কম।’’

এ বার এই বিপুল শব্দবাজি তৈরির পি‌ছনে পর্ষদের ‘অনর্থক টালবাহানা’কেই দায়ী করছেন পরিবেশকর্মীদের একাংশ। পরিবেশকর্মী নব দত্ত বলেন, ‘‘জাতীয় পরিবেশ আদালতের নির্দেশের পরে পর্ষদ নিজের অবস্থানই স্পষ্ট করেনি। তারা বলতে পারত, পরিবেশ আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে যাচ্ছে।’’ অবশ্য পর্ষদের চেয়ারম্যান কল্যাণ রুদ্রের বক্তব্য, ‘‘সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার কথা না জানানো কিন্তু কৌশলেরই অঙ্গ। আইনজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনাও চলছিল।’’ তাঁর মতে, ‘‘১২৫ ডেসিবেলের ব্যাপারে পরিবেশ আদালত বিজ্ঞপ্তি জারি করতে বলেছিল। সুপ্রিম কোর্টে যাব বলেই তা করিনি। ফয়সালার আগেই বাজি তৈরি করে ফেললে তার দায় প্রস্তুতকারকদেরই।’’

পরিবেশ আদালতের নির্দেশ মেনে পর্ষদ একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গড়েছে। নতুন পরিস্থিতিতে, নতুন মানদণ্ডে বাজির শব্দমাত্রা ঠিক করবে তারাই। সত্যজিৎ রায় ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ইনস্টিটিউট-এর সাউন্ড ল্যাবরেটরির সাহায্যও নেবে পর্ষদ। নতুন শব্দমাত্রা স্থির না হওয়া পর্যন্ত তা যাতে ৯০ ডেসিবেলই থাকে, সেই মর্মে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করবে তারা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE