আরও এক বার গোলমালের কেন্দ্রে সিন্ডিকেট ব্যবসা এবং গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। তার জেরেই ফের বোমাবাজি এবং এলাকা জুড়ে অশান্তি। এক মাসের মাথায়, সেই বেলেঘাটাতেই। গত জুন মাসেও বেলেঘাটার এই রাসমণি বাজারেই বোমাবাজির ঘটনা ঘটেছিল।
রবিবার সন্ধ্যায় বেলেঘাটার রাসমণি বাজারে ব্যাপক বোমাবাজি হয়। অভিযোগ, দু’রাউন্ড গুলিও ছোড়া হয়। ভাঙচুর হয় স্থানীয় ক্লাব এবং কয়েক জন তৃণমূল সমর্থকের বাড়িতেও। গোলমালে আহত হন এক জন। সোমবার সকালেও এলাকায় বোমার আওয়াজ শোনা গিয়েছে বলে অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের।
পুলিশ জানায়, রবিবারের বোমাবাজির পিছনেও আছে সিন্ডিকেট ব্যবসা। বেলেঘাটায় অনেক নির্মাণকাজ চলছে। সেখানে কার নিয়ন্ত্রণ থাকবে বা এলাকার গুদামে কে শ্রমিক সরবরাহ করবে তা নির্ভর করে ওই এলাকা দখলের উপরেই। সেই সঙ্গে এলাকার পার্কিংয়ের নিয়ন্ত্রণ কার হাতে থাকবে, তা নিয়েও বিবাদ দুই গোষ্ঠীর। পুলিশের অভিযোগ, এ নিয়ে তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর গোলমালেই বোমাবাজি। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, এক মাস আগেও রাসমণি বাজারেই দুই গোষ্ঠীর অনুগামীরা একে অন্যকে লক্ষ করে বোমা ছুড়েছিল।
পুলিশ জানায়, রবিবার সন্ধ্যার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে এখনও পর্যন্ত দু’পক্ষের পাঁচ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের নাম বাপি চক্রবর্তী, সৌমেন দাস, ভজা দাস, সময় দাস ও গোপাল গুড়ে ওরফে হাবু। হাবু স্থানীয় বিধায়ক পরেশ পালের ঘনিষ্ঠ বলে পুলিশ জানায়। বাকিরা কাউন্সিলর জীবন সাহার ঘনিষ্ঠ। ধৃতদের সকলের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইন, বিস্ফোরক আইন এবং খুনের চেষ্টার অভিযোগে মামলা রুজু হয়েছে। ধৃতদের মধ্যে তিন জনকে পুলিশ হেফাজত দিয়েছে আদালত।
প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশ জানিয়েছে, বেশ কিছু দিন ধরেই স্থানীয় দু’টি পরিবারের মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে ঝামেলা চলছিল। দুই পরিবার দুই তৃণমূল নেতার অনুগামী। সেখান থেকেই রবিবারের ঝামেলার সূত্রপাত বলে দাবি পুলিশের। সোমবার রাতে এই ঘটনার তদন্তভার তুলে দেওয়া হয়েছে কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের গুন্ডাদমন শাখার হাতে।
পুলিশ জানায়, রবিবারের ঘটনায় মূল অভিযুক্ত রাজু নস্কর ও তার বিরোধী শঙ্কর চক্রবর্তী। দু’জনেই স্থানীয় তৃণমূল নেতা। দু’জনের বিরুদ্ধে ওই রাতেই থানায় অভিযোগও দায়ের হয়। তবে কাউকেই ধরা যায়নি। এর আগের গোলমাল-বোমাবাজিতেও রাজু ও শঙ্করের নাম উঠে এসেছিল বলে পুলিশ সূত্রের খবর।
এলাকার বাসিন্দারা জানান, দলের অন্দরে রাজু স্থানীয় তৃণমূল নেতা অলোক দাস ও জীবন সাহা গোষ্ঠীর ঘনিষ্ঠ এবং শঙ্কর চক্রবর্তী স্থানীয় বিধায়ক পরেশ পালের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, নির্মাণ ব্যবসায়ী রাজু বাম আমলে অনেক সিপিএম নেতার সঙ্গেই ঘোরাফেরা করত। পালাবদলের পরে শাসক দলের ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠে। অলোকবাবু অবশ্য দীর্ঘদিন ধরেই তৃণমূলের সঙ্গে রয়েছেন।
পুলিশের বক্তব্য, এলাকা দখল নিয়েই তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর গোলমালে লোকসভা ভোটের আগে থেকেই বেলেঘাটা উত্তপ্ত হয়েছিল। প্রায় দিনই সিপিএমের দলীয় অফিস ভাঙচুরের অভিযোগ মিলত। তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব তখন থাকলেও এতটা প্রকাশ্যে আসেনি। কিন্তু ভোটের ফল বেরোনোর পরে এলাকা বিরোধীশূন্য হয়ে যাওয়ায় শাসক দলের কর্মীরাই নিজেদের ক্ষমতা জাহির করতে গিয়ে নিজেদের মধ্যে মারামারিতে জড়িয়ে পড়ছেন বলে পুলিশের একাংশের অভিযোগ। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, বেলেঘাটা এলাকায় অনেক নির্মাণকাজ চলছে। সেই কাজের বরাত পাওয়া ও শ্রমিক সরবরাহ নিয়ে দু’পক্ষের নিত্য গোলমাল ও বোমাবাজি লেগে থাকে।
পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দারা বেলেঘাটায় তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দের কথা বললেও দলীয় নেতারা এই অভিযোগ মানতে চাননি। কাউন্সিলর জীবন সাহা দাবি করেন, “অভিযুক্তেরা কেউ আমার দলের সঙ্গে কোনও ভাবেই যুক্ত নয়। আমার সঙ্গে তো নয়ই।” আর বিধায়ক পরেশ পালের বক্তব্য, “আমি কোনও গুন্ডা-মস্তানের সঙ্গে মেলামেশা করি না।”
সোমবার দুপুরে রাসমণি বাজারে গিয়ে দেখা যায়, এলাকা থমথমে। প্রচুর পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। সামনে তৃণমূলের দলীয় অফিসে কয়েক জন যুবক বসে। দু’-একটি দোকান খোলা। তবে রবিবারের ঘটনা নিয়ে কেউ কথা বলতে চাননি। ক্লাবে ভাঙচুরের পরে জিনিসপত্রও আর সে ভাবে সরানো হয়নি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy