Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

টানাপড়েনে তিন দিন, ফিরে গেলেন রোগী

বঁটির কোপে মাথায় গুরুতর আঘাত ছিল। স্থানীয় চিকিৎসক সেলাই করে ছেড়ে দিয়েছিলেন রোগীকে। আরও উন্নত চিকিৎসার জন্যে জেলা থেকে কলকাতার সরকারি হাসপাতালে ছুটে এসেছিল গোঘাটের একটি পরিবার।

পিজি-তে হারাধন রায়। —নিজস্ব চিত্র।

পিজি-তে হারাধন রায়। —নিজস্ব চিত্র।

শান্তনু ঘোষ
শেষ আপডেট: ২৪ মে ২০১৭ ০২:৩৮
Share: Save:

বঁটির কোপে মাথায় গুরুতর আঘাত ছিল। স্থানীয় চিকিৎসক সেলাই করে ছেড়ে দিয়েছিলেন রোগীকে। আরও উন্নত চিকিৎসার জন্যে জেলা থেকে কলকাতার সরকারি হাসপাতালে ছুটে এসেছিল গোঘাটের একটি পরিবার। কিন্তু উন্নত চিকিৎসা তো দূর অস্ত্, চার দিন ধরে ‘পিংপং’ বলের মতো এক সরকারি হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে ঘুরে বেরিয়েও কোনও শয্যা জোটেনি সেই রোগীর। অবশেষে রোগীকে নিয়ে গ্রামেই ফিরে গেলেন তাঁর পরিজনেরা।

গত শনিবার থেকে মঙ্গলবার, গোঘাটের ফুলুইয়ের বাসিন্দা হারাধন রায়ের (৪২) এই ভোগান্তিই আবারও সরকারি হাসপাতালের মানবিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিল। অথচ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বারবার সরকারি হাসপাতালগুলিকে মানবিক হওয়ার নির্দেশ দিচ্ছেন। তা সত্ত্বেও পরিস্থিতি বদলায়নি, এ ঘটনাই তা দেখিয়ে দিল।

পারিবারিক অশান্তির জেরে হারাধনবাবুর সঙ্গে তাঁর ভাইয়ের হাতাহাতি বাধে গত শনিবার। অভিযোগ, হারাধনের মাথায় বঁটির কোপ মারেন তাঁর ভাই। স্থানীয় চিকিৎসক তাঁর মাথায় ১৫টি সেলাই করেন। বাড়ি আসার পরে রক্তবমি শুরু হলে পরিজনেরা প্রথমে তাঁকে কামারপুকুর ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে এবং পরে আরামবাগ মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যান। সিটি স্ক্যান করানোর পরে হারাধনবাবুকে স্নায়ু ও চোখের চিকিৎসার জন্যে বাঙুর ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস, এসএসকেএম বা অন্য সরকারি মেডিক্যাল কলেজে রেফার করেন সেখানকার চিকিৎসকেরা।

হারাধনবাবুর মামাতো ভাই ক্ষুদিরাম পান জানান, ওই সন্ধ্যায় তাঁরা পিজি-র জরুরি বিভাগে পৌঁছন। সেখান থেকে পাঠানো হয় বাঙুর ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস-এ। অভিযোগ, সেখানকার চিকিৎসকেরা হারাধনবাবুকে কিছু ওষুধ লিখে জানিয়ে দেন সেখানে শয্যা নেই। রোগীকে ভর্তি করার কোনও দরকার নেই। তবে সোমবার স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞ এবং চোখের ডাক্তারকে দেখাতে হবে। ভর্তি করতে হলে এসএসকেএম-র জরুরি বিভাগে যোগাযোগ করতে হবে। কিন্তু সেখানেও শয্যা মিলল না। ক্ষুদিরাম বলেন, ‘‘১২০ কিলোমিটার ফিরে আবার আসা কষ্টকর। তা ছাড়া যাতায়াতের পথে রোগীর অবস্থা অবনতি হওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে। তাই বারবার অনুরোধ করলেও ওঁরা ভর্তি নিলেন না।’’

ঝুঁকি নিয়ে তাই গ্রামে না ফিরে হারাধনবাবুরা পিজির জরুরি বিভাগেই সোমবার সকাল পর্যন্ত কাটিয়ে দেন। ওই দিন ফের বাঙুরের আউ়টডোরে গেলে তাঁদের জানানো হয় যে সেখানেও শয্যা নেই। এর পরে কিছু ওষুধ লিখে ছেড়ে দেন চিকিৎসকেরা। ক্ষুদিরামবাবু বলেন, ‘‘প্রথমে একবার ডাক্তার বলেছিলেন ভর্তির দরকার নেই। ফের বলছেন, শয্যা নেই তাই অন্য হাসপাতালে নিয়ে যান। সত্যিই রোগীকে ভর্তি করানোর দরকার নেই, নাকি শয্যা নেই বলে ভর্তি নেওয়া হল না সেটাই তো বুঝতে পারছি না।’’

ওই দিন রাতে শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতাল এবং এনআরএসে গেলেও ঠাঁই মেলেনি হারাধনবাবুর। অগত্যা মঙ্গলবার সকালে এনআরএস-এ চোখের ডাক্তার দেখিয়ে শহর ছাড়েন হারাধনবাবু। কেন তিন দিন ধরে ঘুরতে হল রোগীকে? বাঙুর ইনস্টিটিউট এবং এসএসকেএম-এর অধিকর্তা অজয় রায় বলেন, ‘‘এ বিষয়ে এখনই কিছু বলব না। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Hospital Government Hospital Treatment
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE